এসএমই খাতের বর্ষসেরা মাঝারি উদ্যোক্তা মোঃ বেলাল হোসেন

একেবারেই ব্যবসায়ী ছিলেন না। ব্যক্তি জীবনে ছিলেন একজন নেভি অফিসার। ১৯৯১ সাল।সামরিক বাহিনীর চাকরী আর টানলোনা। সামরিক বাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করলেন বেলাল হোসেন।

উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহন করতে জার্মানীতে সাড়ে চার বছর অবস্থানকালীন সময়ে বেলাল হোসেন দেখতে পেলেন হস্তশিল্পের সম্মান, পণ্য চাহিদা এবং এ খাতে শিল্পের সম্মান। এর মধ্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। দায়িত্ব থেকেই যায়। নিজের মতো করে নিজ উদ্যোগে কিছু করবার ৷

কারখানায় তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের হস্তশিল্পের পণ্য

একেতো চৌকষ ব্যক্তি তার সাথে শ্রদ্ধেয় শ্বশুর জনাব মাহবুবুল হক এর কাছ থেকে ভীষণ অনুপ্রেরণা মিললো বাংলাদেশের হস্ত শিল্প নিয়ে কাজ করবার।দূরদৃষ্টি যদি থাকে একজনার, তিনিই তো হতে পারেন উদ্যোক্তা।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এ সম্মিলিত মেধা তালিকায় বোর্ডে স্থান, স্নাতক ডিগ্রি তে প্রথম শ্রেনীতে ১ম অবস্থান, সেই সাথে উদ্যোগে চৌকষ পদচারণা বেলাল হোসেনকে এনে দিলো এক শক্তিশালী অবস্থান বাংলাদেশের হস্তশিল্পে বিশ্বকে বাংলাদেশ চেনাতে।

পারিবারিক যে ব্যবসা ছিলো, সে ব্যবসার আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দায়িত্ব নিলেন এবং শ্বশুর জনাব মাহবুবুল হক কিছুদিনের মধ্যেই যোগ্য সন্তানের হাতে ব্যবসার পুরো দায়িত্ব অর্পণ করলেন।

পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত সময় অতিক্রম করছে কর্মী

মান, গুণ, দাম নিয়ে ১৯৯১ – ১৯৯৭ পর্যন্ত বেলজিয়াম এ একাই যুদ্ধ চালালেন বেলাল হোসেন। এর পরে পণ্যের ডিজাইন, মান চাহিদা বোঝাতে এবং পণ্য উৎপাদন করতে নিজেই ফিরে আসলেন দেশে। এতদিন বিদেশে থেকে দেশকে চেনানো, এবার দেশে থেকে শ্রেষ্ঠ হস্তশিল্পের পণ্য উৎপাদনে বেলাল হোসেন মনোনিবেশ করলেন তার কর্মের ভুবনে, বাংলাদেশের হস্তশিল্প বিশ্ব বাজারে।

সাল ১৯৯৯। দেশে ফিরে বড়পরিসরে ফ্যাক্টরি দেবার তাগিদ অনুভব করলেন বেলাল হোসেন। বন্ধু বরেষু মোস্তফা আহমেদ পিয়াস এসে একবারে শক্ত হাতে হাত ধরে দাড়ালেন। যাত্রা শুরু হলো বিডি ক্রিয়েশন এর। পণ্য বাংলাদেশের হস্ত শিল্প।

বেতের পণ্য দিয়ে শুরু, একে একে বাঁশ এর পণ্য, ছন এর পণ্য, হোগলা পাতা, সোনালী ফসল পাট সব কিছু দিয়ে পণ্য নির্মাণের এক ভিন্ন ভুবনের যাত্রা হয় শুরু। সারা বিশ্বকে এক পরিব্রাজকের দৃষ্টিতে দেখে বাংলাদেশের পণ্য উৎপাদনে আত্মমগ্ন উদ্যোক্তা বেলাল হোসেন।

 

মেশিনে সেলাই হচ্ছে পণ্য

৫০ টির মতো পণ্য উৎপাদন শুরু হলো প্রথম মাসেই। কর্মী সংখ্যা ২০। বিদেশের পুর্ববর্তী যোগাযোগ এবং স্যম্পলিং এর মাত্র ৬ মাসের মধ্যে প্রথম কন্টেইনার বুকিং দিলেন উদ্যোক্তা। উৎপাদনের মাত্রা বাড়তে থাকলো, বাড়তে থাকলো অর্ডার।

জার্মানী, ফ্রান্স, স্পেন এবং ইউএস এ বায়ার হয়ে গেলো বাংলাদেশের হস্তশিল্পের। স্বপ্নেরা ডানা মেলতে শুরু করেছে, যে স্বপ্ন দেখেছেন উদ্যোক্তা তা আজ বাস্তবে রুপ পেতে শুরু করেছে।

তৈরি পণ্যের মান যাচাই বাছাই এর কাজ চলছে

নতুন নিয়োগকৃত কর্মীদের দক্ষ কর্মী হিসেবে তৈরি করতে চলতে থাকে ইন হাউস ট্রেনিং। বাড়তে থাকে উৎপাদন। একএক করে ৩ টি বছরে প্রায় ৩০০ হস্তশিল্প পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে। ৭০ জন নিয়মিত এবং সারা দেশ থেকে ৪০০০ জন কর্মী কাজ দিয়ে যাচ্ছে বিডি ক্রিয়েশন এর হাব এ। ৫ বছরের মাথায় এসে বিডি ক্রিয়েশন এর ১০,০০০ কর্মীবাহিনী সারা বাংলাদেশে এবং ফ্যাক্টরিতে ৪৫০ জন নিয়মিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

২০১৩ – ২০১৪ এবং ২০১৪ – ২০১৫ সালে জাতীয় রপ্তানীতে বিশেষ অবদান রাখবার জন্য অর্জন করেন প্রধানমন্ত্রীর ট্রফি। বানিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৫- ২০১৬ তে অর্জন করেন বিশেষ সম্মাননা। ২০১৭ সালে জাতীয় এসএমই পুরস্কার অর্জন করেন উদ্যোক্তা বেলাল হোসেন।

উদ্যোক্তার কারখানায় তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের পণ্য

পুবাইল, নরসিংদী, কাপাসিয়া, পাবনা, শেরপুর-বগুড়া, যশোর, ঝিকরগাছা, ভোলা চরফ্যাশন, নোয়াখালী মাইজদি থেকে পণ্য তৈরি হয়ে আসে বিডি ক্রিয়েশিনের হাব এ। নিভৃত গ্রামে পরিবারের সদস্যরা হস্তশিল্পের নানান অংশের কাজ সম্পন্ন করছেন। ২ লক্ষ স্কয়ার ফিটে আজ হেড অফিস এবং সকল ফিল্ড অফিসে উদ্যোক্তাদের শেড বা হ্যাংগারে পণ্য প্রস্তুত হচ্ছে। প্রসেসিং, ফিনিশিং সব কিছু প্রস্তুত করে কন্টেইনারে সমুদ্র পথে পাড়ি দেবার জন্যে অপেক্ষা করে প্রতিনিয়ত।

বিদেশের পথে প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে দেশকে চেনাবার ব্যাকুল আগ্রহ এবং পণ্যে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ড করবার যে প্রত্যয়, সেই প্রত্যয়ে নিজের কর্ম দক্ষতায় আজ হস্তশিল্পের ৫ শতাধিক পণ্যে ব্র্যান্ড করছেন বাংলাদেশকে। বিশ্বের ৬৯ টি দেশে সফলতার সাথে রপ্তানি করছেন বাংলাদেশের হস্তশিল্পের পণ্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন এসএমই খাতের সফল মাঝারী উদ্যোক্তা বেলাল হোসেন।

 

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here