এসএমই খাতের বর্ষসেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মাকসুদা হাসনাত

রাষ্ট্রবিজ্ঞান এ মাস্টার্স পাশ করেই ৯৬ এ শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন মাকসুদা হাসনাত। কিছু একটা করতেই হবে, এটা ছিলো পরিবারের চাওয়া। তাই চাকরীতে যোগ দেওয়া। কিন্তু চাকরী টান ছিলোনা মোটেই।

মাকসুদা হাসনাত এর শুধুই মনে হতো নিজে কিছু একটা করি। আমি যা সব চাইতে ভালো জানি সেটা সেলাই এর কাজ।

কিন্তু সেলাই নিয়ে কাজ করতে চাইবার সাহস বা সামাজিক অবস্থা সেই সময় ছিলোনা। তবুও ভীষণ সাহস নিয়ে কাজ শুরু করলেন মাকসুদা।

উদ্যোক্তার কারখানায় কর্মব্যস্ত কর্মীগণ

৫০০০ টাকার কাপড় কিনে বাচ্চাদের জামা, থ্রি পিস, ওয়ান পিস, কাজ করা শাড়ীর পাড়, ইয়ক বানালেন।

পরিবারের কেউ প্রথম দিকে সাপোর্ট করলেন না। নানা বাড়ীতে বড় হওয়া মেয়েকে মামার বাসায় সবাই চাইলেন শিক্ষিত হয়ে চাকরী করবে। কিন্তু তার সেলাই এর এমন সুন্দর কাজ এবং পণ্য দেখে সবাই অবাক।

৩০০০ টাকা লাভে পণ্য গুলো বিক্রি হয়ে যাওয়া প্রতিবেশীদের আনন্দ দেখে, পরিবারের সদস্যরা মাস্টার্স পাশ করা মেয়েকে উৎসাহ দিতে শুরু করলেন।

উদ্যোক্তার শো-কেসে সাজানো বিভিন্ন পোশাক

মহান বিজয় দিবসে একটা ছোট্ট মেলায় স্টল এবং নিজের তৈরি পণ্য নিয়ে মহিলা অধিদপ্তরে রেজিস্ট্রেশন করলেন শতদল হস্তশিল্প। মেলায় ভীষণ ভালো করলেন মাকসুদা, পেলেন পুরস্কার, সেই সাথে মিললো জামালপুরবাসীর সাধুবাদ।

৯৮ সালে জামাল্পুর তমাল তলা মার্কেট এ একটা ছোট্ট শো রুম দিলেন মাকসুদা, নারী হিসেবে প্রথম কোনো নারী একটা শো রুম পরিচালনা করতে শুরু করলেন। জামালপুর এ আরো দুই তিন জন খুব ভালোভাবে হস্তশিল্পের কাজ করলেও বাণিজ্যিকভাবে তারা তখন তেমন এগিয়ে আসেননি।

ভীষণ সাড়া পেলেন শো রুমেও ৷ ৯৮ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন উদ্যোক্তা মাকসুদা। স্বামী শাহীনুর আলম দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে এসে পাশে দাড়ালেন। ৯৯-এ বড় আকারে শো রুম দিতে বাধ্য হলেন, সুচ- শৈলীর এক বড় ভুবনকে পরিচয় করিয়ে দিতে।

লিডারদের কাছ থেকে পণ্য বুঝে নেওয়ার পালা

১০ জন নিয়মিত কর্মী এবং বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ১০০০ কর্মীদের সাথে নিয়ে তাদের কাজ দিয়ে উদ্যোক্তা মাকসুদা এগিয়ে চলেন।

জামালপুরের নকশী কাঁথা,

 বাংলাদেশের গর্ব গাঁথা,

সেই নকশী কাঁথা, বেডশিট, থ্রি পিস, কুশন কাভার, সব বানিয়ে যখন শোরুমে পসরা দিলেন তখন ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রাম, বগুড়া, রংপুর দেশের প্রায় চারটি বিভাগ এবং অনেক জেলায় পাইকারী বিক্র‍য় শুরু হলো। উদ্যোক্তার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হলোনা।

সরিষাবাড়ী, ভাটারা, মেলান্দর, নান্দিনা, নুরুন্দি, পিয়ারপুর, শেরপুর, কালিবাড়ি, নালিতাবাড়ি, ইসলামপুর অনেক উপজেলায়, অনেক গ্রামে ছড়িয়ে গেলো উদ্যোক্তার কাজ বন্টন।

৫ বছর এমন ভাবে কাজ চলতে থাকে।  উদ্যোক্তার কাছে আসতে থাকে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে নানান দেশের কাজ। সঠিক সময়ে কাজ উঠিয়ে, পণ্য প্রস্তুত ও অর্ডার সম্পাদন করে ভীষণ আস্থা অর্জন করেন ক্রেতাদের। সুনাম ছড়িয়ে পড়ে উদ্যোক্তার।

উদ্যোক্তার পণ্যের একাংশ

১২ মাসে ১৩ পার্বনের দেশ বাংলাদেশ। উদ্যোক্তা সকল বড় বড় উৎসবে হাজার হাজার নান্দনিক পোষাক এবং নানান লাইফস্টাইলের পণ্য উপহার দিতে থাকেন তার কর্মের ভুবন থেকে বাংলাদেশের জন্য।

ধীরে ধীরে কর্মী সংখ্যা বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে অর্ডার এবং তৈরী হতে থাকে টিম লিডার। প্রায় ৮০ থেকে ১০০ জনের মতো লিডার তৈরী হলো উদ্যোক্তার। ৬০ ক্যাটাগরির পণ্য এবং সাড়ে চার হাজার স্কয়ার ফিটের ফ্যাক্টরি যেখানে নিয়মিত কাজ করছে ৩২ জন স্টাফ। বিভিন্ন ফিল্ডে, গ্রামে আজ ৩৫০০ জন কর্মী বিভিন্ন পণ্যের কাজ করছেন। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করে সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন বর্ষসেরা ক্ষুদ্র এসএমই উদ্যোক্তা মাকসুদা হাসনাত।

 

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here