সফল গৃহিণীর পরিচয়ের পাশাপাশি নিজের নামের পাশে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পরিচয় গড়ে তুলেছেন শারমিন আক্তার পিনা।
২০১৯ সালে বাসায় পরিবারের সকলের জন্য একটি কেক বানিয়েছিলেন। সেই বেকিং এর ছবি পোস্ট করেন একটি গ্রুপে। তাই দেখে প্রতিবেশী ও পরিচিত মানুষেরা অনেকেই উচ্ছ্বসিত হন। প্রথমে পরিচিত কয়েকজনের কেকের অর্ডার নিয়ে শুরু করেছিলাম। সেখান থেকে মাথায় আসে একটি পেজ খুলে নিলে কেমন হয়! সেই চিন্তা থেকেই পেজ খোলা। নাম দিলেন ‘Spoons of Taste’.
শারমিন আক্তার পিনা মূলত কাজ করেন কাস্টোমাইজড কেক বেকিং নিয়ে। বাবা মোঃ আবুল খায়ের, রিটায়ার্ড এয়ারফোর্স অফিসার। মা নুরুন নাহার, গৃহিণী। তারা তিন ভাইবোন। পিনা সবার ছোট। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালি জেলায়। বাবার চাকরি সূত্রে শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামে, পরে ঢাকায় স্যাটেলড। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন মার্কেটিং বিষযয়ে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
তিনি বলেন: মূলত ক্লাস নাইন থেকেই বেকিং নিয়ে খুব নেশা। খুব ভালো লাগতো এই কাজটা করতে। বেকিং নিয়ে কিছু করবো সেটা শুরুতে মাথায় আসেনি। ২০১৯ সালে একটি ছবি শেয়ারের ঘটনা আমাকে অনুপ্রাণিত করে। একটা গ্রুপে কেকের ছবি দিয়ে প্রফেশনালি বেকিং এর যাত্রা শুরু হয়। প্রথম কেকটি তৈরি করেছিলাম আমার স্বামীর ভাগনীর জন্মদিনের জন্য। এরপর থেকে আমার স্বামী এবং তার বোন আমাকে বোঝায় আমি যেন আমার প্রতিভাকে ঘরের ভেতরে বন্দী করে না রাখি। প্রতিভা মেধাকে কাজে লাগিয়ে কিছু একটা করে স্বাবলম্বী হই।
পিনার প্রথম অর্ডারের জিনিসপত্র বাসায়ই ছিল। পরে একটু একটু করে কেক বিক্রির টাকা থেকে সবকিছু আস্তে আস্তে কিনেছেন। মূলত শূন্য পুঁজি নিয়ে ব্যবসাযর শুরু।
তিনি বিভিন্ন ফ্লেভারের কেক বেকিং করেন, যার মধ্যে রয়েছে- কাস্টোমাইজড কেক, পেস্ট্রি কেক, মাফিন, কাপ কেক, পাউন্ড কেক, সুইস রোলসহ ভ্যারাইটিজ কেক। বর্তমানে একজন কর্মী আছেন। এছাড়া তার পরিবারও খুব সাপোর্ট দিয়ে আসছে। এখনও কোন ফ্যাক্টরি দেননি। তবে, শীঘ্রই দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। আপাতত ঢাকায় কেক সরবরাহ করছেন। কিন্তু ঢাকা শহরের জ্যামের কারণে খুব দূরের অর্ডার নিতে পারেন না। মাঝে মাঝে বন্ধের দিনগুলোতে দূরের অর্ডার নিয়ে থাকেন। মাসে কেক বেকিং করেন ২০-৩০টি। আয় করেন প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা।
এ পেশা বেছে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘শখ থেকে কেক নিয়ে কাজ করা শুরু। যখন ভালো সাড়া পাচ্ছিলাম তখন ধীরে ধীরে স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম। আর তাছাড়া গৃহিণী হিসেবে খাবার তৈরিতে আলাদা একটা আত্মতৃপ্তি খুঁজে পাই।’
পিনা মনে করেন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাই হলো স্বপ্ন। তো তার স্বপ্ন হলো সারাদেশে ‘স্পুনস অফ টেস্টের’ চেইন শপ দেবেন। আর কর্মহীন ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়াবেন।
তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য তার পরামর্শ: বেকার সমস্যা নিরসনে সরকার যথেষ্ট সুযোগ ও সবরকম সহায়তা করছে। অনেকগুলো সেক্টরে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। যার যে সেক্টর ভালো লাগে, তিনি সেটিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ হয়ে কাজে নেমে পড়তে পারেন। তবে আজ কাজ শুরু করলাম, আগামীকালই বেনিফিট পাবো, এমন নয়। কমপক্ষে এক বছর লেগে থাকতে হবে এবং নিজেকে একজন দক্ষ কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। অন্যের ওপর ভরসা করা যাবে না।
‘নিজে চেষ্টা করলে আমার মনে হয় অসাধ্য বলে কিছু নেই,’ মনে করেন পিনা। সে পথেই তিনি হাঁটছেন।
মেহনাজ খান,
উদ্যোক্তা বার্তা