যাত্রাটা শুরু ২০২০-এ করোনাকালীন সময়ে। করোনার থাবায় ঘরে বসে যখন পৃথিবী স্থবির হয়ে পড়েছিলো। দেশি শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, কুর্তি, পাঞ্জাবি, বাচ্চাদের শাড়ি ও ইউনিক ব্লাউজ কালেকশন নিয়েই মূলত ‘পসরা’র যাত্রা। বর্তমানে তার সাথে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন বিশেষ দিন এবং সময়কে কেন্দ্র করে স্পেশাল ডিজাইনের শাড়ি এবং পাঞ্জাবি বানানো।
সমাজ বাস্তবতা আমাদের প্রতিনিয়ত শেখায়। আমাদের না পারা জিনিসগুলো প্রতিনিয়ত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে আমাদের ব্যর্থ প্রমান করতে চায়। সেখান থেকে বের হয়ে এসে সফলতা লাভ করা একজন উদ্যোক্তার জন্য বড় সার্থকতা বলে বিশ্বাস করেন নুসরাত জাহান। উদ্যোক্তা নুসরাত এসব কাটিয়ে উঠতে খুব সহজেই সক্ষম হয়েছেন কারন তিনি তার মাকে দেখে মায়ের কাছ থেকে শিক্ষালাভ করেছেন। মায়ের প্রতিকুলতা কাটিয়ে ওঠা তার জীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।
জীবনের প্রতিটি বাস্তবতায় নিজেকে নতুনভাবে তৈরি করেছেন তিনি। জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়া মানুষটি কখনই তার অপারগতাগুলো ছোট করে দেখেননি বরং প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিয়েছেন পাশে থেকেছেন এগিয়ে যাওয়ার পথে। কোন কাজে তার সাথে সাথে না গিয়ে পাশে ছায়ার মতো থেকে একা একা কাজ করতে শিখিয়েছেন তাকে। একা সব কাজ করেন ও শিখেন উদ্যোক্তা নুসরাত তাই পরনির্ভরশীল থেকে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন তিনি। ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ও ভীষণ আদরের নুসরাত ভাইবোনের জন্য এক অনুপ্রেরনার নাম।
তার কাছে এই অনুপ্রেরনার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যখন ওরা দেখে আমি এতোটা পরিশ্রম করছি এই টিকে থাকার লড়াইয়ে তখন ওরা কষ্ট পায়! কিন্তু সফলতার মুখ দেখতে চাইলে এর বিকল্প নেই সেটা বুঝতে পারে এবং আমাকে আরও এগিয়ে যেতে সাহস যোগায়।” তার শপের বা শোরুমের সবকিছু তিনি একাই পরিচালনা করেন। প্রচন্ড পরিশ্রমী এই উদ্যোক্তা কেবল তার হাতের কাজগুলো করিয়ে নিয়ে আরও কিছু মানুষকে স্বাবলম্বী করে তুলছেন।
সাহিত্যের এই শিক্ষার্থী তার সব কাজেই যেন রাখেন সাহিত্যের ছাপ। বিভিন্ন কথা সাহিত্যিকের গল্প, কবিতা নিয়ে করা কাজ থেকে শুরু করে গানের লাইন বা বিখ্যাত চরিত্রের প্রতিমুর্তি কি নেই তার সৃষ্টিতে! তার এই কাজের জন্য তিনি বেস্ট সেলারও হয়েছেন যা তাকে দিয়েছে অনেক বেশি আনন্দ। তার এই আনন্দের ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যখন শুনলাম আমরা বেস্ট সেলার হয়েছি সত্যি ভীষণ আনন্দ লেগেছিল। জলে হারিয়ে গিয়ে ঠিক তীর খুঁজে পেলে যেমন আনন্দ হয় ঠিক তেমন আনন্দ আমরা পেয়েছিলাম এটা শুনে।”
তরুন সমাজের ব্যাপারে উদ্যোক্তার রয়েছে যুগান্তকারী চিন্তা। তিনি উদ্যোক্তা বার্তা কে বলেন, “তারুণ্য হল সজীবতায় ভরপুর কাদা মাটি যা দিয়ে বানানো যায় সবথেকে বড় প্রাসাদ। উদ্দীপনায় ভরপুর, প্রচণ্ড সাহসী, কর্ম চাঞ্চল্য ও চঞ্চলতায় ভরপুর, অসীম কর্মশক্তির অধিকারী, প্রযুক্তিতে বাজিমাত করতে পারে তারা। শুধু প্রয়োজন ধৈর্য্য ও পরিশ্রম তবেই বিশ্বজয় করবে লাল সবুজের তরুনরা।”
একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নতুন একটা বাংলাদেশ দেখতে চান নুসরাত জাহান যেখানে নিজের পছন্দের কাজ সবাই করতে পারবে এবং কোন পেশাকেই কেও ছোট করে দেখবেনা যার ফলশ্রুতিতে একটা আত্মনির্ভরশীল সমাজ তৈরি হবে।
সাকিব মাহমুদ,
উদ্যোক্তা বার্তা।