কোভিড-১৯ এর কারণে এসএমই উদ্যোক্তাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দেশী পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণা উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। করোনায় এসএমই উদ্যোক্তাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দেশী পণ্য ব্যবহার বাড়ানোর প্রচারণা শুরু করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। ১০ ডিসেম্বর ২০২০ এসএমই উদ্যোক্তাদের তৈরিকৃত দেশীয় পণ্য ব্যবহারে ক্রেতাদের উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে অনলাইনে সোস্যাল ক্যাম্পেইন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এসএমই ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মোঃ মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়রে মাধ্যমে এসএমইদের নিকট থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য বা সেবা ক্রয়ের জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইনে কোটা ব্যবস্থা অর্ন্তভুন্তিকরণের প্রচষ্টো গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে এসএমই উদ্যোক্তারা লাভবান হবনে এবং করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা রাখবে। তিনি আরো বলেন, র্বতমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় কোলেটারালের বাধ্যবাধকতা ও অন্যান্য র্শতসমূহ শিথিল করে সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বিবেচনায় প্রণোদনার অর্থ মঞ্জুরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ক্ষেত্রে গতিশীলতা আনা প্রয়োজন।

করোনাকালীন পণ্য বিপণন সুবিধা সম্প্রসারণে এসএমই উদ্যোক্তা এবং ক্রেতাদের মধ্যে লিঙ্কেজ শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এসএমই ফাউন্ডশেন এবং বিসিক উদ্যোক্তাদের ই-কর্মাস প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। সরকারের এ সকল উদ্যোগের ফলে শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রয়েছে। করোনার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই খাতরে উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নীতি সহায়তা অব্যাহত থাকবে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিভিন্ন দেশের পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তি আয়ত্ব করার পাশাপাশি দেশী ও আন্তর্জাতিক ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের গুণগত মান উন্নত করা যেমন জরুরি, তেমনি এসএমইদের পণ্য বিপণনের সুবিধা বৃদ্ধি করাও প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি বলেন, “বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য এসব উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাঁদেরকে সহযোগিতা করা এখন সময়ের দাবি। বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই রয়েছে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের এক বিশাল বাজার। আসুন আমরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের তৈরি দেশী পণ্য ক্রয় করি এবং ব্যবহার করি। এভাবে দেশের এ সংকটময় অবস্থায় দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে আপনিও ভুমিকা রাখতে পারেন।” তিনি আরো বলেন, এসএমই উদ্যোক্তারা পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত সামগ্রী, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, প্লাস্টিক সামগ্রী, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হ্যান্ডিক্রাফটস্, ডিজাইন ও ফ্যাশনওয়্যারসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করে থাকেন। নারী-উদ্যোক্তাগণও এসব শিল্পের সাথে যুক্ত রয়েছেন। এসব পণ্যের মান যথেষ্ট ভালো এবং অনেক পণ্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন যা বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। স্বদেশী পণ্যের ব্যবহার দেশপ্রেমেরই পরিচায়ক এবং গৌরবের বিষয়ও বটে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন খাটি বাঙ্গালী এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের উদ্যোক্তাদের তৈরি দেশীয় পণ্যকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তাই আসুন এই ক্রান্তিকালে বিদেশী পণ্যের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কমিয়ে করোনা পরিস্থিতিতে যেসব পণ্য দেশে উৎপাদিত হচ্ছে সেগুলো বেশি বেশি ক্রয় করি এবং ব্যবহার করি। বাণিজ্যমন্ত্রী আশা করেন, সরকার ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ শতভাগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের নিকট পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো আন্তরিকভাবে কাজ করবে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, দেশী ফ্যাশন ডিজাইনাররা বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন করেন। তাই সরকারি কেনাকাটায় এসএমই উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয়ের জন্য কোটা নির্ধারণ করা হলে দেশী পণ্যের ব্যবহার বাড়ার ক্ষেত্রে তা যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ বিতরণ কার্যক্রমে এসএমই ফাউন্ডেশনকে যুক্ত করতে সম্প্রতি অর্থ বিভাগ থেকে উদ্যোগ নেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

উল্লেখ্য, দেশীয় পণ্য ব্যবহারে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে এসএমই ফাউন্ডেশন বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন ও সামাজিক মিডিয়ায় প্রচারের জন্য ২৫টি স্লোগান তৈরি করেছে। এছাড়া সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি এবং ইমেইলে এসব শ্লোগান পাঠিয়ে সচেতনতা তৈরির কার্যক্রম গ্রহণ করবে এসএমই ফাউন্ডেশন।

ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সোস্যাল ক্যাম্পেইন বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি ও দেশীয় পণ্য ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ বিষয়ক স্লোগান, বিভিন্ন সেক্টরের এসএমই পণ্যের ছবিসহ প্রচারপত্র, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান ও বিশেষ অতিথির বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপিংস্ তৈরি করে ফেসবুক, ওয়েবসাইট, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার, দৈনিক পত্রিকায় ফ্যাশন/ডিজাইন সংশ্লিষ্ট বিশেষ সংখ্যায় দেশী পণ্য ক্রয়ের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ বিষয়ক ফিচার প্রকাশ করা হবে। এছাড়াও বিষয়ভিত্তিক টকশো আয়োজন, মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারিভাবে মোবাইল এসএমএস প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্থানীয় পণ্য ব্যবহার করার জন্য উদ্বুদ্ধকরণ বিষয়ক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। এসএমইদের নিকট থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য বা সেবা ক্রয়ের জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইনে কোটা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্তিকরণের প্রচেষ্টা গ্রহণের বিষয়েও জোর প্রচেষ্টা থাকবে।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here