সমাজসেবায় একুশে পদক পাচ্ছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন

0

সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার দেশের ১৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ২টি প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক ২০২৩ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) মনোনীতদের নাম ঘোষণা করা হয়।

এ বছর সমাজসেবায় একুশে পদক পাচ্ছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। ‘এক টাকার আহার’-এর মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পথশিশু, সুবিধাবঞ্চিত ও অস্বচ্ছল শিশুদের মৌলিক শিক্ষা, আহার, চিকিৎসা এবং আইন সেবা প্রদান করে আসছে বিদ্যানন্দ। বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি ‘এক টাকার আহার’ প্রকল্পের আওতায় হাজার হাজার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করছে। তাদের এই উদ্যোগ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত।

বিদ্যানন্দের সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট “এক টাকার আহার”। এর মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার মানুষকে খাবার দেওয়া হয়। এ ছাড়াও চট্টগ্রামে রয়েছে একটি হাসপাতাল, যার সবকিছু মানুষের দানের টাকায় তৈরি। সেই হাসপাতালে প্রতিদিন কয়েকশ মানুষ ফ্রি চিকিৎসা ও ওষুধ পাচ্ছেন, নামমাত্র মূল্যে ডায়াগনোসিস ও টেস্ট করাতে পারছেন।

আত্মকর্মসংস্থানের জন্য তাদের আরেকটা প্রকল্প আছে “সম্বল”। যার মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে, যেমন- মনপুরা দ্বীপ, হাতিয়া ও আন্ডার চরের মতো জায়গায় কাজ করছে বিদ্যানন্দ। এর মাধ্যমে পড়াশোনার খরচ, বিয়ের ব্যবস্থা করা, গরু-ছাগল, দোকান, মাছ ধরার জাল ও নৌকা ইত্যাদি কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করে আসছে সংগঠনটি।

বিদ্যানন্দের ২টি স্কুল ও ৭টি লার্নিং সেন্টার আছে। বিভিন্ন জায়গায় ৭টি এতিমখানাও আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় দেড় হাজার শিশু পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থী সেখান থেকে বৃত্তি পাচ্ছে। প্রতিবছর লেখাপড়ার জন্য শিক্ষা উপকরণ ও অর্থ সহায়তা পাচ্ছে।

সারাবছর দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১ হাজারের মতো স্বেচ্ছাসেবক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিদ্যানন্দের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।

একুশে পদকের জন্য মনোনীত হওয়ার খবরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুক পোস্টে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন লিখেছে, “মানবসেবায় অসামান্য অবদানের জন্য স্বেচ্ছাসেবীদের শ্রম, দাতাদের ত্যাগ এবং ফলোয়ারদের সমর্থনের জন্য এই স্বীকৃতি।

“যদি এই অর্জনের আনন্দ আপনাকে স্পর্শ না করে, যদি এটাকে আমরা একান্তই নিজেদের অর্জন ভাবি, তবে ব্যর্থ এই বিদ্যানন্দ।”

বর্তমানে পেরুতে অবস্থান করা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাস বলেন, ‘অসহায় ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে যারা অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছেন, এটা তাদের সাফল্য। এখানে চমৎকার বিষয় হলো- সরকার তাদের সে অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই কৃতিত্ব আমার একার নয়। স্বেচ্ছাসেবকসহ যেসব মানুষ এগিয়ে এসেছেন এবং অবদান রেখেছেন, এটা তাদের সবার অর্জন। দেশের জনগণই প্রকৃত নায়ক এবং এই পুরস্কারের প্রাপক।’

স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমের এ ধরনের স্বীকৃতি একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে আরও বেশি মানুষকে হাতে হাত মেলানোর সুযোগ করে দেবে বলেও মনে করেন কিশোর।

সংগঠনটির ঢাকা কেন্দ্রের সমন্বয়ক সালমান খান ইয়াসিন বলেন, ‘একুশে পদক বিদ্যানন্দের একার নয়, এটি দেশের সব মানুষের। বাংলাদেশের গরিব মানুষের একটি প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি পেয়েছে, তবে এর মাধ্যমেই যে সব অর্জন হয়ে গেল তা কিন্তু নয়। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ- স্বীকৃতি পাওয়ার পর তা ধরে রাখা। এখন আমাদের সামনেও চ্যালেঞ্জ, এই স্বীকৃতির মর্যাদা ধরে রাখা।’

একুশে পদক ছাড়াও মানবকল্যাণে ইতিবাচক কার্যক্রমের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় মানবকল্যাণ পদক-২০২১ পেয়েছে বিদ্যানন্দ। ২০২২ সালে বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাসকে ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্মানিত করেছেন। তাকে “কমনওয়েলথ পয়েন্টস অব লাইট” পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here