বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে কাজের মাধ্যমে যে মানুষটি নিজেকে ব্যস্ত রাখতো, আজ সে একজন সফল প্রান্তিক উদ্যোক্তা।
একজন ডকুমেন্টারী ফিল্ম মেকার হিসেবে ক্যামেরার পিছনে নির্দেশনা ছিলো যার নেশার মতো, আজ সে দেশীয় পোশাকে তাঁতশিল্পের বিপ্লব।
২০১৬ সালের শুরুর দিকে একটি ক্যামেরাকে পুঁজি করে যার পথচলা। ক্যামেরা দিয়ে পোশাক শিল্পে বিপ্লব, একটু অবাক হচ্ছেন তাইনা! তাহলে গল্পটা পড়ুন এবার…
সৌরভ যখন ডকুমেন্টারির উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য স্থানীয় তাঁতী পাড়ায় যায়, তখন তাঁতীদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। অনেক প্রবীণ তাঁতীরা নানা পেশায় কাজ করে কিন্তু তাদের পূর্বের পেশা তথা তাঁতী পেশায় ফিরে আসতে আকুতি জানায়। তারা সৌরভের কাছে সহযোগীতা চায় বিলুপ্তপ্রায় এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে।
সৌরভের মায়ের পূর্বের পেশা ছিলো টেইলরিং। মায়ের স্বল্প আয়ের টাকায় লেখাপড়া শেষ করে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছে এমন অবস্থায় তাঁতীদের আকুল আবেদন গেঁথে গেলো মনে। মায়ের সাথে আলোচনা সেড়ে নিলো সে। মায়ের সাথে সুতার যে প্রেম আর তাঁতীদের সাথে সুতার যে প্রেম দুটোকে একটা সহজ সমীকরণে নিয়ে মাত্র ১৩ পিছ শাড়ি দিয়ে যাত্রা শুরু করে আজকের “জলসিঁড়ি”।
তাঁতীদের পূনর্বাসন, তাঁত শিল্পের উন্নয়ন ও বিপণনে নানা চড়াই উতরাই পাড় করে তৃতীয় বছরে পা রাখতে যাচ্ছে জলসিঁড়ি।
১০০% ইকো ফ্রেন্ডলি, ন্যাচারাল, ১০০% কটন হাতে বুনন করা ফেব্রিক উৎপাদন ও বিপণন করছে জলসিঁড়ি। ১০০% রপ্তানী যোগ্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে শাড়ী, ওড়না, কামিজ, খাদি শাল, খাদি ফেব্রিক। বর্তমানে ৯ জন পুরুষ ও ৯ জন নারী মোট ১৮ জন কর্মী নিয়ে কাজ করছে জলসিঁড়ি।
শুরুতে খুচরা ভাবে ব্যবসা শুরু করলেও এখন জলসিঁড়ি পাইকারী, খুচরা ও কাস্টমাইজ অর্ডারের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে সেই উত্তরের জেলা নীলফামারীর প্রান্তিক উপজেলা জলঢাকা থেকে। তাইতো নিজেকে একজন প্রান্তিক উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন সৌরভ।
উদ্যোক্তা বার্তাকে সৌরভ জানান, জলসিঁড়ির সহযোগীতায় সারা দেশে গড়ে উঠেছে নানা ছোট-বড় অনলাইন বুটিক শপ। তাদের অর্জন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা কুড়িয়েছে বেশ প্রশংসা, সুনাম ও বিশ্বাস। সম্মাননাও পেয়েছে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে।
সৌরভের এই দেশীয় পোশাকের সৌরভ সারা দেশ ও পৃথিবীর যেখানে বাঙ্গালীরা থাকেন সেখানে পৌঁছাতে আগামী ১ জানুয়ারী উদ্বোধন হতে যাচ্ছে তার নতুন ওয়েবসাইট। আগামী ৩ বছরে প্রত্যেকটি বিভাগীয় শহরে জলসিঁড়ির একটি করে আউটলেট করার মিশন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এসময়ের মধ্যে প্রায় ১০০ জনের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে বলে উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান জলসিঁড়ি প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার এ.এইচ সৌরভ।
খুরশিদা পারভীন সুমী