বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান সাব্বির আহমেদ। বাবা ছিলেন প্রবাসী আর মা একজন গৃহিনী। মোটামুটি সচ্ছল পরিবারের সন্তান ছিলেন তিনি। বাবা-মা চাইতেন ছেলে সরকারি চাকুরিজীবি হবেন। কিন্তু পড়াশোনা খুব একটা আগ্রহ ছিল না কিশোর সাব্বির আহমেদের।
২০১৪ সালে এসএসসি পরীক্ষা শেষে বেকার ঘোরাফেরা করতে দেখে এক মামা সাথে করে ঢাকা নিয়ে আসেন তাকে। এক বুক আশা আর দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে ঢাকার পথে পাড়ি জমান সাব্বির । ঢাকা আসার পর তরুণ সাব্বির আহমেদ একটি চশমার দোকানে ৫০০০ টাকা বেতনে প্রথম চাকরি শুরু করেন। তিন বছর একটানা পরিশ্রমের পর বেতন বেড়ে দাঁড়ায় মাত্র ৬০০০ টাকা; অর্থাৎ দীর্ঘ তিন বছরে বেতন বৃদ্ধি হয় মাত্র ১০০০ টাকা। এর কিছুদিন পরে মোহাম্মদপুরের একটি অপটিক্যাল থেকে ১০,০০০ টাকা বেতনের চাকুরীর একটি অফার আসে। সেলস এক্সিকিউটিভ হিসাবে জয়েন করেন সেখানেই তরুণ সাব্বির আহমেদ। টানা চার বছর কঠিন পরিশ্রম করে নিজের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সততা আর পরিশ্রম দিয়ে চেষ্টা করেন ক্রেতাদের মন যোগানোর। কাজের সুবাদে পটুয়াখালীতেও যেতে হয়েছে তাকে। সেখানেও দুই- তিনটা দোকান নিজেই দেখাশোনা করতেন। তারপর আবারও ঢাকায় ব্যাক করে ওই মালিকের শোরুমেই কাজ করেন তিনি।
অদম্য উদ্যোগী সাব্বির আহমেদ একটি অনলাইন পেইজ খুলে বসেন তিনি। এক জন দুই জন করে সেখানেও আস্তে আস্তে পরিচিতি বাড়তে থাকে তার।একটি-দুইটি করে বারতে থাকে অর্ডার। অনলাইনের সময় দিতে গিয়ে একবার চাকরিও হারাতে হয়েছে এই তরুণকে। এর মাঝে কাস্টমারদের কাছে পরিচিতি বেড়ে যায় তার। ভালো মানের পণ্য আর ভালো সার্ভিস এর কারণে প্রতিদিনই বাড়তে থাকে সেল। করোনার মধ্যেও থেমে থাকেননি সাব্বির আহমেদ। নিজে কষ্ট করেছেন কিন্তু কাস্টমারদের কে তার সার্ভিস দেয়া বন্ধ করেননি। সে সময়ে পণ্য সংগ্রহ করা এবং ডিস্ট্রিবিউট করা ছিল অনেকটা চ্যালেঞ্জিং।
যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় নিজেই কষ্ট করে গুলশান-বনানী ঘুরে ঘুরে অর্ডার নিয়েছেন এবং সেগুলো ডেলিভারি ও করে এসেছেন তিনি। নিজের স্বপ্ন পূরণে আপোসহীন ছিলেন এই তরুণ। কঠোর পরিশ্রম আর কঠিন মনোবল নিয়ে এগিয়ে চলেছেন তাই স্বপ্ন জয়ের পথে।
এর মাঝে নিজের জমানো কিছু টাকা আর এক বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি শোরুম নেন তিনি। নাম দিলেন “আলরাজী অপটিক”, নিজের শোরুম! এ যেন তরুণের কাছে ছিল স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার মত। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং স্বপ্নকে সত্যি করতে পেরেছিলেন। কোন বাধাই আটকে রাখতে পারেনি এই তরুণ উদ্যমী সাব্বির আহমেদকে। জীবনের সকল প্রতিবন্ধকতা, বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আজ নিজের পরিচয় দেবার মত একটি স্থানে নিজেকে নিয়ে গেছেন সাব্বির ।
প্রতিদিন নিজের শোরুমে ১৪ ঘন্টা কঠোর পরিশ্রম করেন তরুণ উদ্যোক্তা সাব্বির। সকাল ৯ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত চশমার ভুবনকে নিয়েই থাকেন তিনি। শোরুম দেখাশোনার পাশাপাশি নিজেই চশমাই পাওয়ার এডজাস্ট করেন।এছাড়াও তিনি কাস্টমারদেরকে বিভিন্ন সময় চোখের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কানেক্ট করিয়ে দেন বিশেষজ্ঞ আই ডক্টরদের সাথে কোনো টাকা পয়সা ছাড়াই এবং চোখের যত্নের নানান সামগ্রী সঠিক ব্যবহার করে সমস্যা কিংবা স্টাইলের সমাধান ও পরামর্শও দান করেন।
বেস্ট অপ্টিকস লেন্স ফর এপ্রোপিয়েট ইউজ এবং বেস্ট ফ্রেম ফর এ ফেস” এ বিশ্বাস করেন । শুধু চশমা বিক্রি করে মূলধন বাড়ানোই তার লক্ষ্য নয়। কাস্টমারদের ভালোবেসে, ভালো মানের সেবা পৌঁছে দেওয়া তার ডেইলী রুটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় । তরুণ উদ্যোক্তা সাব্বির বিশ্বাস করেন ক্রেতাই দোকানের লক্ষী। সেই বিশ্বাসকে পুঁজি করেই কাস্টমারদের মন জয় করে কাস্টমার ঠিক যেমন চান, যেভাবে চান, যখন চান এই কমফোর্ট এবং সার্ভিস দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন এই তরুণ উদ্যমী উদ্যোক্তা সাব্বির আহমেদ।
বর্তমানে তার কাজে সহযোগিতা করার জন্য একজন কর্মী আছেন সাব্বিরের টিমে। ভবিষ্যতে কাস্টমার বাড়লে আরও নতুন শো রুম বাড়ানোর চিন্তা করছেন এই উদ্যোক্তা। শুধু তাই নয় চশমা বানানোর একটি মেশিন তিনি চায়না থেকে আনতে চান। যাতে করে বাংলাদেশে বসেই বিভিন্ন ডিজাইনের চশমা তিনি নিজেই বানাতে পারেন। এখন চশমা আনতে হলে তাকে চায়না অথবা ইন্ডিয়াতে যেতে হয় কিন্তু মেশিনটা যদি তিনি নিয়ে আসতে পারেন তাহলে পণ্য সংগ্রহ করবার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না এবং তখন আগের চাইতে কম মূল্যে ক্রেতাদের ভালো মানের পণ্য দেওয়াও সম্ভব হবে বলেন সাব্বির।
একজন তরুণ এর উদ্যোগের জীবনে আসা সমস্ত বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করেছেন সাহসিকতার সাথে এবং সার্বক্ষণিক পাশে পেয়েছিলেন তার সহধর্মিনী কে। বর্তমানে তাদের আছে এক কন্যা সন্তান। একদম শুন্য হাতে শুরু করা এক তরুণ আজ রয়েছে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা মূল্যমানের একটি ব্যবসা । গড়ে আয় করছেন প্রতিমাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। সফলতার সাথে পরিচালনা করছেন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আল রাজী অপটিকস মোহম্মদপুর রিংরোড শপিং কমপ্লেক্স এ।
মার্জিয়া মৌ,
উদ্যোক্তা বার্তা