মেহগনি কাঠ হোক বা কেরোসিন কাঠ। সংগ্রহের পর মিল থেকে ফাঁড়াই করে ঘষে- মেজে, মো. রাইয়ান সাদমান হায়াতের আজব কারখানায় তৈরি হচ্ছে একেকটি ল্যাম্প, ঘড়ি, ট্রে, চাবির রিং, কফি টেবিল, ডাইনিং টেবিল, পানির বোতল, শোপিস, টুল ইত্যাদিসহ আরো অসংখ্য নজর কাড়া নান্দনিক ডিজাইনের পণ্য।
বসার ঘর হোক কিংবা শোবার ঘর, অফিস হোক বা বাগান সব যায়গার সৌন্দর্যবৃদ্ধির কথা মাথায় রেখেই রাইয়ান সাদমান একেকটি পণ্য তৈরি করছেন।
‘আজব কারখানার একদম শুরুর দিকের কথা যদি জানতে চাই’- তখন তিনি উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, টুকিটাকি থেকে আজব কারখানা। সর্বপ্রথমে আমার উদ্যোগের নাম ছিলো টুকিটাকি। পরে একদিন কয়েকজন বন্ধু মিলে আড্ডা দিতে যেয়ে লালনের গানের একটি লাইন ‘আজব কারখানা’ কথাটি আসে। তখন আমরা চিন্তা করি আমার এখানে যে পণ্যগুলো তৈরি হচ্ছে তার জন্য এই নামটি পারফেক্ট। আর এভাবেই আজব কারখানার সৃষ্টি।
উদ্যোক্তা মো. রাইয়ান সাদমান হায়াতের জন্ম থেকে বেড়ে উঠা সব কিছু রাজশাহী নগরীতে হলেও তার দাদা এবং নানা বাড়ি মেহেরপুরে। নবম শ্রেণী পর্যন্ত রাজশাহীতে পড়াশোনার পর ঢাকাতে চলে যায় পড়াশোনার জন্য। ওখানে এক শুভাকাঙ্ক্ষী বড় ভাই আনিন্দ্য কবির অভিকের অনুপ্রেরণায় উদ্যোক্তার এই কাজে আসা।
মো. রাইয়ান সাদমান হায়াত বলেন, আড়াই বছর আগে দেড় লাখ টাকা নিয়ে শুরু করেছিলাম। তখন আমার প্রতিষ্ঠান টি ছিলো কাশিয়াডাঙা এলাকায়। একবছর পর পদ্মা আবাসিকের ৮ নাম্বার রোডে আমার বাসার নিচতলায় স্থানান্তরিত করি আজব কারখানা। বর্তমানে আমার দু’জন সহযোদ্ধা রয়েছে।
কারখানার কাঁচামাল সংগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন: ‘আজব কারখানাতে মেহগনি এবং কেরোসিন কাঠ সবথেকে বেশি ব্যবহার করা হয়।মেহগনি কাঠগুলো বেশিরভাগ সময়ই মেহেরপুর থেকে সংগ্রহ করি।তবে বর্তমানে রাজশাহী থেকেও নিচ্ছি।আমরা গাছ কিনি তারপর মিল থেকে আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী মাপে ফেঁড়ে নি।
তবে কেরোসিন কাঠ দেশের বাইরে থেকে রেডি হয়ে আসায় এটি প্রস্তুত করতে খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয়না।এই কাঠ সফট হয় এগুলো দিয়ে চাবির রিং,ট্রে পানির বোতল অর্থাৎ হালকা জিনিসগুলো তৈরি হয়।
পণ্যগুলোর মূল্য সম্পর্কে উদ্যোক্তা বার্তার পাঠকদের যদি ধারণা দিতেন ‘ এখানে ১০০টাকা মূল্যের চাবির রিং ও পাবেন দেড় বা তিন হাজারের মধ্যে বিভিন্ন সাইজের ভিন্ন- ভিন্ন ডিজাইনের ল্যাম্প ও পাবেন। এছাড়াও ছয় সিটের ডাইনিং টেবিল পাচ্ছেন যেগুলোর মূল্য ৩০ থেকে ৪০ হাজার।আর এখন অনেকেই রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় ঝুঁকছেন তাদের মধ্যে কেউ যদি আজব কারখানার কফি টেবিল বা অন্যান্য পণ্য দিয়ে আপনার উদ্যোগ শুরু করতে চান আমি নিশ্চয়ই তাদের জন্য রেগুলার প্রাইস থেকে একটু কম রাখার চেষ্টা করবো। এছাড়াও আজব কারখানা” নামে ফেসবুকে পেজ রয়েছে। আপনারা সেখানে অর্ডার করলেও আমরা আপনার হাতে পণ্য পৌঁছে দিব।
ভবিষ্যতে আজব কারখানায় নতুন কিছু যুক্ত করা নিয়ে ভাবা হয়েছে? এমন প্রশ্নে উদ্যোক্তা জানালেন, জ্বি খুব শীঘ্রই কংক্রিট এবং লোহার কাজ শুরু করবো।এর পাশাপাশি অনেকে ইন্টেরিয়র ডিজাইন নিয়ে কাজ শুরু কথা বলছেন এটি নিয়েও ভাবছি।সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই আজব কারখানাতে নতুন অনেক কিছুই যুক্ত হবে।
কাজগুলো শেখা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে? না এই পণ্যগুলো তৈরির জন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে এখন পর্যন্ত কোন প্রশিক্ষণ নেয়া হয়নি।ছোটবেলা থেকেই যন্ত্রপাতি নাড়াঘাটার প্রতি ঝোঁক ছিল সেটি পরবর্তীতে ইউটিউব দেখে দেখে চেষ্টা করে এই পর্যন্ত এসেছি।আলহামদুলিল্লাহ পণ্যগুলো ঢাকা,রাজশাহী, মেহেরপুর সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় যাচ্ছে।
তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা