সফল উদ্যোক্তা- মাহাবুবা সুলতানা ইমন

বরিশালে ক্লাস সেভেন কিংবা এইটে পড়া এক তরুণী চার বোন আর মা বাবার সংসারে সে মেজো মানে দ্বিতীয়। যা দেখতো তাই বানাতে চাইতো। টুথপেস্টের প্যাকেটে মোম বানাতে গিয়ে অনেক চেষ্টা করলো। কিছুতেই মোম আর বানানো হয় না। মোম প্যাকেটে দিলেও সুতা দিতে ভুলে যায়। অনেক চেষ্টার পর মোম বানাতে সফল হয় সে। ঢাকায় এক কাজিনের কাছে দুটো ডাইস বানিয়ে নেয়। বাবা মেয়ের কাজ দেখে ভীষণ খুশি। মেয়ের কাজের উৎসাহ দেখে বললেন, এই সবে তো অনেক খরচ। প্লাস্টার অব প্যারিস দিয়ে খরচটা সীমিত রেখে বানানো যায়। ছাত্রী থাকা অবস্থায় প্রচুর অর্ডার পান কিন্তু মোমের ব্যবসা আর চালিয়ে যাওয়া হয় না ইমনের। moshla

উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায় তরুণীর। বাবা রিসার্চ করে বের করলেন বাসায় বসে কি করে পেঁয়াজ, আদা, রসুন এর পেস্ট বানানো যায়। এইসবের চাহিদা নিত্যকাল। বাবার ব্যবসার নাম ছিলো বিটিইএম চার মেয়ের নামে। এই সব কাজে বাবাকে সাহায্য করতেন একমাত্র সেই মেয়েটি। বিয়ে হয়ে যাবার পর মেয়ে বাবাকে নিজের কাছে নিয়ে আসলেন রিসার্চে হেল্প করবার জন্য। মাত্র ২০০ স্কয়ার ফিটে ছোট্ট একটি দোকান। সেখানে ফোন ফ্যাক্স এর স্বীয় ব্যবসার পাশাপাশি একটি ফ্রিজ ভারা নিলেন ইমন এবং সহউদ্যোক্তা খন্দকার মিজানুর রহমান। বাসায় বাবা-মেয়ে মিলে আদা, রসুন, পেঁয়াজ পেস্ট করে প্যাক করে স্থানীয় ভাবে সেল করা শুরু করলেন।

২০০৪ সালে প্রথম আগোরা সুপার স্টোর উদ্যোক্তার পণ্য নিলেন। ২০১৪ পর্যন্ত জয়েন্টলি বাবার সাথে ব্যবসা করলেন। এরপর শুরু করলেন নিজেই। ১০ বছরের ব্যবসার অভিজ্ঞতা নিয়ে পূর্ণ উদ্যোমে দাঁড়ালেন ইমন। একজন কর্মী নিয়ে শুরু করলেন। ব্যবসার মোড় ঘুড়িয়ে দিলো স্বপ্ন থেকে পাওয়া পৌণে চার লাখ টাকার অর্ডার। আদা, রসুন, পেঁয়াজ, সরিষা সবকিছু মসলা হতে পারে। মানুষ পাবে স্বাস্থ্যকর গুড়া মসলা যত্ন নিয়ে তৈরি। নিজে শপিং করে বেস্ট কোয়ালিটির কাঁচামাল কিনে নিজে এসে শিল-পাটায় পিষে মসলা বানানো কিংবা ব্লেন্ডারে নিজে খোসা ছাড়িয়ে ব্লেন্ড করে স্বাস্থ্যকর মসলা ক্রেতার হাতে তুলে দেয়া এক সুগৃহীনি ঠিক যেভাবে খাঁটি মসলা দিয়ে নিজ পরিবারের জন্য খাবার প্রস্তুত করেন সেভাবেই মসলা তৈরি করার কাজ শুরু করলেন উদ্যোক্তা ইমন। ১৭-১৮ ঘণ্টা কঠোর পরিশ্রম করতে শুরু করলেন উদ্যোক্তা। ধীরে ধীরে ৫টি বছরে এগিয়ে যেতে থাকেন মাহাবুবা সুলতানা ইমন। বাড়তে থাকে উদ্যোক্তার সুদক্ষ কর্মীবাহিনী।

হ্যান্ড বল, ভলি বল, সুইমিং, সাইকেলিং এবং ব্যাডমিন্টনে ভীষণ পারদর্শী রৌপ্য পদক জয়ী এই নারী জানেননি হার মানা কাকে বলে। জেনেছেন শুধু এগিয়ে যেতে হবে ছিনিয়ে আনতে হবে বিজয়। একে একে উদ্যোক্তার ক্লায়েন্ট লিস্টে যোগ হতে থাকে অনেক খ্যাতনামা সুপার স্টোর- স্বপ্ন, আগোরা সিএসডি, ল্যাভেন্ডার, ইউনিমার্ট, আল-মদিনা, বাসকেট এর মত সুপার স্টোর, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ছাড়িয়ে কানাডায়। সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ফুড এন্ড নিউট্রিশনে পাঠিয়েছেন প্রতিটি পণ্য। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রন্ধন ব্যক্তিত্বরা যুগিয়েছেন অনুপ্রেরণা, দিয়েছেন এগিয়ে যাবার সাহস পণ্যের গুণগত মানে।

সিজি ফুডের মাধ্যমে জার্মান স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছেন পণ্যের ছাড়পত্র। আজ উদ্যোক্তার উদ্যোগ বা তাঁর প্রতিষ্ঠানে ৭৫টিরও বেশি রান্নার মসলা আছে। আজ এমন কোন মসলা নেই রান্নার জন্য যা তৈরি করেন না উদ্যোক্তা ইমন। এলাচের গুড়া, দারুচিনি গুড়া, জয়ফল, জয়ত্রীক থেকে রসুন গুড়া, আদা গুড়া, মেথি গুড়া, তেজপাতা গুড়া, গোলমরিচ গুড়া এমনকি কালা ভুনা মসলা পর্যন্ত কাস্টমমেড মসলা। পেঁয়াজ বাটা, আদা বাটা রসুন বাটা থেকে কি চান যা নেয় আজ মুখরোচক অনেক মসলাও মসলা চা, অল পারপাস মসলা সব মিলিয়ে ৭৫টি ক্যাটাগরি।

আজ ক্লায়েন্ট লিস্টে প্রায় ৩৫টি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছেন এক নারী উদ্যোক্তা নিজের উদ্যোগে হয়েছেন এক সফল এসএমই উদ্যোক্তা। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে স্বীয় অর্জন আজ উদ্যোক্তা ইমনের।

 

 

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here