উদ্যোক্তা- পলি

মা-চাচীদেরকে সেলাই করতে দেখা ছোটবেলা থেকেই। বাচ্চাদের ফ্রক, কাঁথা সেলাই এগুলো তৈরি করা দেখেই পলির মনে শুতীব্র বাসনা জাগে সেলাই এর কাজের প্রতি। তৃতীয় লিঙ্গের একজন শিশু হওয়ায় ক্লাস সিক্সে পড়া অবস্থায় একটি কথা শুনেন পলি। একে পড়াশোনা করিয়ে কি হবে? এই সন্তান তো কোথাও চাকরি পাবে না। সেলাই এর কাজ ভীষণ মন দিয়ে করা শুরু করলেন পলি।

মেমোরি ভীষণ সার্প। ছোট্ট বেলা থেকেই যেকোন ছবি কিংবা কোন ডিজাইন একবার দেখলেই তা তুলে ফেলা কোন ব্যাপারই ছিলো না পলির জন্য। কাঁথা এবং অনেক পাঞ্জাবি ও ফতুয়ার কাজ করা হলো স্কুল বয়সেই। এসএসসি পাশ করবার পরপরই সেলাই এর কাজে ভীষণ পারদর্শী হয়ে উঠলেন পলি।

২০১২ সাল। বাণিজ্যিকভাবে নিজ উদ্যোগ শুরু করলেন পলি। প্রথম দিকে নিজে থেকে সকল কাজ- কাটিং, সেলাই এবং পোশাক তৈরি করে কাস্টমারকে দেয়া সকল কিছু একাই সম্পন্ন করতে থাকলেন পলি। ওয়ান পিসের ডিমান্ড খুব বেশি ছিলো পলির। পলি ডিজাইনটি নিজে করে মাঠ পর্যায়ে ১৮ জন কর্মীকে দিয়ে পুরো পোশাকের ডিজাইন ও নকশা এবং সেলাই এর কাজ শেখালেন। প্রস্তুত হতে থাকলো পোশাক নানান রঙে নানান ডিজাইনে।

২০১৩ সালে দিনের আলো সংঘের মাধ্যমে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির আয়োজনে পলি অংশগ্রহণ করলেন বিজনেস প্ল্যানের উপর চারদিনের বিশেষ কোর্সে। পলি সেখানে শিখলেন ব্যবসার কৌশল, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও সামগ্রিক দিক গুলো যা একজন উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা ।

৮ হাজার টাকা দিয়ে পলি তাঁর যাত্রা শুরু করলেন। কিনলেন সুতা আর কাপড়। মেশিন ছিলো বোনের। পলি দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করতে থাকেন। ২০১৩ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ৫০ হাজার টাকার একটি বড় অর্ডার আসলো ওয়ান পিস আর টু পিসের। অর্ডারটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করলেন পলি। এমন অর্ডার পাবার পর পলির ব্যবসায়ি এক বন্ধুর কাছ থেকে আসলো ১০০ পিস এপ্লিকের শাড়ির অর্ডার। ১ মাসের মধ্যেই আরও ৩০ পিস শাড়ির অর্ডার। ৪০ জন কর্মীর মধ্যে কাজ বিতরণ করেন পলি। পেছনে ফিরে আর তাকাতে হয়নি উদ্যোক্তা পলির। নিজের ছোট্ট পরিসরে চলতে থাকে পলির কাজ।

পণ্যের বিপণন এবং বিক্রয়ের জন্য পলি খাটতে থাকেন প্রচুর, পলি হাটতে থাকেন নিয়মিত। স্কুল, কোচিং সেন্টার এবং ব্যাংকগুলোতে গিয়ে নিজের কাজ, উৎপাদিত পণ্য দেখাতে থাকেন, বলেন পণ্যের কথা। সারাও মিলে ব্যাপক । দুই নাম্বার ওয়ার্ড, মোল্লাপাড়া, বোর্ড ঘর এলাকায় আসতে থাকেন ক্রেতা কিনতে থাকেন পণ্য।  ঈদ এবং নানান উৎসবের সময় কাজ সামলাতে হিমসিম খেয়ে যান পলি।

২০১৫ সাল। হোলসেলের অর্ডার বাড়তে থাকলো। দেশের বাইরে সাব-কন্ট্রাক্টে ১হাজার পিস শাড়ি দিলেন পলি। কখনো ৩০পিস, ৭০পিস কিংবা ১৫০ পিসের একজন উদ্যোক্তা পলিকে বলে সামনে এগিয়ে যাবার কথা। বাড়তে থাকে অর্ডার, পণ্য পোশাক তৈরির কাজ। শতশত কিংবা হাজার পণ্যে হাস্যোজ্বল হয়ে ওঠে পলি এবং তাঁর উদ্যোগ।

সব হাতের কাজ, হ্যান্ড প্রিন্ট, শাড়ি তৈরি হতে থাকল। প্রতিটি সেলাই, প্রতিটি ছাপে পলি ধীরেধীরে পেতে থাকেন দৃঢ়প্রত্যয়ী এক উদ্যোক্তাকে নিজের মাঝে।  কর্মী সংখ্যা বাড়তেই থাকে এবং কর্ম-সংস্থান সৃষ্টি করে এগিয়ে যেতে থাকেন পলি। মাত্র ৮ হাজার টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করে আত্মপ্রত্যয়ী পলি এগিয়ে যেতে যেতে আত্মকর্মে বলীয়ান করেন সমাজের অনেক পিছিয়ে পরা নারীকে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন।

অনেক মেলাতে অংশ নেন আজ উদ্যোক্তা পলি। স্বীকৃতি মিলছে অনেক।

২০১৭ সাল, সামাজিক বাধা পেরিয়ে এবং আত্মকর্মে উদ্যোমী হয়ে পলি অর্জন করেন বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন জীবন জয়ী ক্যাটেগরিতে জয়িতা পুরস্কার। পলি আজ এক দৃঢ় সংগ্রামী উদ্যোক্তার নাম।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here