রাজশাহীতে জনপ্রিয় এক নাম আফরিন ফুড ফেয়ার

0

বাবার অবর্তমানে মা এবং ছোট বোনের দায়িত্ব নিয়ে মাধ্যমিকের পরই কর্মজীবনে প্রবেশ। এরপর উচ্চমাধ্যমিক শেষে আবুল খায়ের কোম্পানিতে যোগদান। মা এবং ছোট বোনকে নিয়ে ভালোভাবেই সময় কাটাতেন ফারহানা জুথি আফরিন। রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ থেকে স্নাতক করেন তিনি। তবে কর্মব্যস্ততায় কলেজ জীবনের আনন্দ স্পর্শ করার খুব একটা সুযোগ ছিল না।

মাঝখানে বৈবাহিক জীবনে পদার্পণ। সন্তানসম্ভবা হলে চাকরি থেকে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু, যার উদ্যোক্তা হওয়ার কথা কোন না কোনভাবে তিনি সেটা হবেনই। শেষ পর্যন্ত আফরিন ফুড ফেয়ারের মাধ্যমে তাই হয়েছেন আফরিন।

অল্প বয়স থেকেই রান্নার প্রতি ভীষণ ঝোঁক ছিল তার। মা খুব ভালো রান্না করতেন। মায়ের হাতেই রান্নার হাতেখড়ি। বাসাতে যখন শুয়ে-বসে কাটাচ্ছিলেন, তখন বিভিন্ন ধরনের রান্না করতেন আর সামাজিক পাতায় সেগুলো আপলোড করতেন। অবশ্য উদ্যোগ গ্রহণের কোন পরিকল্পনা ছিল না। নিজ হাতে রান্না করা খাবারগুলো সুন্দরভাবে ডেকোরেশন করে শখের বশেই পোস্ট করতেন। লোভনীয় সব খাবার দেখে অনেকেই কমেন্ট করতেন মূল্য জানতে চেয়ে। সেসময় আফরিনের শুভাকাঙ্ক্ষীরা এটি নিয়ে কাজ শুরুর পরামর্শ দিলেন। আর এভাবেই ‘আফরিন ফুড ফেয়ার’- এর যাত্রা।

২০১৯ এর শেষদিকে উদ্যোক্তা জীবনে আসেন আফরিন। প্রশিক্ষণ ফি, রান্নার সামগ্রী, বাসাতেই ছোট্ট একটা অফিস, সেটার ডেকোরেশন– সবমিলিয়ে উদ্যোগের শুরুতেই তার গুণতে হয়েছিল দুই লাখ টাকা। উদ্যোগ গ্রহণের কিছুদিনের মধ্যেই করোনা মহামারীর শুরু। সেসময় যেন অর্ডার আরো বেড়ে গেলো আফরিনের। আর এভাবেই কিছুদিনের মধ্যে প্রাথমিক বিনিয়োগের টাকা উঠে আসে তার।

উদ্যোক্তা বার্তার সাথে কথপোকথনে মেনু সম্পর্কে উদ্যোক্তা আফরিন বলেন, “আমার উদ্যোগের প্রথম অর্ডার ছিল চিকেন মোমো। এখন স্ন্যাকস, পেস্ট্রি কেক, ডেজার্ট এবং কুকিস, সাথে কিছু সেট মেনুতে আমার খাবারগুলো ভাগ করেছি। স্ন্যাকস এর মধ্যে চিকেন মোমো, কাটলেট, নাগেটস, ইত্যাদি; পেস্ট্রি কেকের মধ্যে ভ্যানিলা, অরেঞ্জ, হোয়াইট ফরেস্ট, ব্ল্যাক ফরেস্ট, রেড ভেলভেট ইত্যাদি; ডেজার্ট এবং কুকিজের মধ্যে মিল্ক ফ্রাই, কেরামেল, পুডিং শাহী টুকরা, কোকোনাট কুকিজ ইত্যাদি এবং রোস্ট-পোলাও, চাইনিজ প্যাকেজ, গ্রিল চিকেন প্যাকেজ, বট পরাটা, তেহারি প্যাকেজসহ বিভিন্ন সেট মেনু রয়েছে।”

তিনি বলেন: আমার মা এ কাজে আমাকে সর্বক্ষণ সহযোগিতা করেন। আফরিন ফুড ফেয়ারে আমার মায়ের হাতের খাবারগুলো বেশি জনপ্রিয়। মায়ের হাতেই আমার রান্নার হাতেখড়ি। পরে রিনি’স কিচেন থেকে বেকিং কোর্স করেছি। ২০২১ সালে আইসিআই থেকে বেশ কিছু অনলাইন কোর্স করি ।২০২২ সালে ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল কিউলিনারি ইনস্টিটিউট (আইসিআই) থেকে প্রফেশনাল শেফ কোর্স লেভেল ১ শেষ করি এবং এরপর একই প্রতিষ্ঠানে এক বছর মেয়াদের ডিপ্লোমা এসকিউএ (স্কটিশ কোয়ালিফিকেশন অথরিটি)-তে ভর্তি হই মাল্টি কুজিন এর ওপর।”

কাটাখালির শ্যামপুরে জন্ম থেকে বেড়ে উঠেছেন এই উদ্যোক্তা। বর্তমানে রাজশাহীর ডাবতলাতে ভাড়া বাসায় থাকেন আফরিন। সেখানেই একটি ঘরকে ডেকোরেশন করে অফিস হিসেবে ব্যবহার করছেন । আগামীতে একটি রেস্টুরেন্ট গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে তার।

বাবার অবর্তমানে যেমন মায়ের ‘মা’ হয়ে উঠেছেন আফরিন, তেমনি মা টুনি আরা এবং জীবনসঙ্গী আব্দুল মান্নান জনিও সব সময় সাপোর্ট দিয়ে থাকেন আফরিনকে। বাইরের অনেকেই আফরিনের উদ্যোগে বাধা সৃষ্টি করতে চাইলেও এ দুজন অনবরত সাহস দিয়ে গেছেন।

রাজশাহীসহ আশেপাশের এলাকায় আফরিন ফুড ফেয়ারের খাবারগুলো যায়। প্রতিনিয়তই এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ছোট, বড় বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্যেও বেশ ভালো সাড়া পান আফরিন। উদ্যোগের শুরু থেকেই রান্নার সকল উপকরণ সামগ্রী নিজেই দেখেশুনে কিনতে পছন্দ করেন তিনি। এছাড়াও অনলাইন উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি, তাই রান্না শেষে নিজেই খাবারগুলো ক্যামেরাবন্দী করেন তিনি। ভালোবাসার এই কাজ নিয়ে বহুদূর এগোতে চান স্বপ্নবাজ ফারহানা আফরিন।

তামান্না ইমাম,
উদ্যোক্তা বার্তা
,রাজশাহী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here