যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং দার্জিলিং-এ ‘কাছিম’ এর পণ্য

0
উদ্যোক্তা নাদিরা তাবাসসুম মাইশা

বাংলার লোকজ ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করছে ‘কাছিম’। আদি চিত্রকলা, কারুশিল্প, ছাপচিত্র ও হাতে তৈরি নানা সামগ্রীর সাথে আধুনিকতার মিশেল ঘটিয়ে নিত্যনতুন অলংকরণ এর মাধ্যমে কলার বিশ্বায়নের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া ও নতুন কিছু করার আগ্রহ নিয়েই কাছিমের পথচলা।

২০১৯ সালে উদ্যোক্তা নাদিরা তাবাসসুম মাইশার কাছিমের সৃষ্টি। তবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তার কাছের একজন বন্ধু মুশফিকা ফেরদৌস মীম।

উদ্যোক্তা নাদিরা তাবাসসুম নিজের পোশাক নিজের ডিজাইনে তৈরি করতেন, সেটা পরেই ভার্সিটিতে আসতেন। পোশাকগুলো দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে কোন বড় শোরুম থেকে কেনা না। বান্ধবী মীম জিজ্ঞেস করতেন, কোন শো-রুম থেকে নেওয়া? নিজের ডিজাইনে তৈরি জেনে নাদিরাকে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ার অনুপ্রেরণা দিতেন মীম। বন্ধুর কথায় খুব একটা গুরুত্ব দিতেন না নাদিরা। কিন্তু মীমও নাছোড়বান্দা, বন্ধুকে তার যোগ্য জায়গাতে তিনি দেখবেনই। তাই ফেসবুকে একটি পেজ চালু করলেন। কিন্তু নাম কী দেওয়া যায়! মিম- নাদিরা আলোচনা করে ঠিক করলেন ‘কাছিম।’

‘কাছিম’ তার কাজে পারফেকশন এবং কোয়ালিটি ধরে রাখতে তাড়াহুড়ো না করে বরং সময় নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করে। ‘ঐতিহ্যের লালিত’ ট্যাগলাইন নিয়ে সামনে এগোচ্ছে ‘কাছিম’।

‘কাছিম’ মূলত কাজ করে হাতে তৈরি গহনা, বস্ত্র, দেশীয় ফেব্রিক ও শাড়ি, মৃৎশিল্প, কারু শিল্পকর্ম, কাঠের তৈরি পণ্য, দেশীয় বিভিন্ন সুতা, পাট, নানা ধরনের রঙ এবং নানা মাধ্যমের চারুশিল্প নিয়ে। কাছিমের পণ্যগুলো রাজশাহী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ার পাশাপাশি বিদেশেও গেছে বেশ কয়েকবার। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং দার্জিলিং-এও স্থান করে নিয়েছে নাদিরা তাবাসসুম এর পণ্য।
রাজশাহীর শিরোইল এলাকায় বাস করেন নাদিরা তাবাসসুম মাইশা। অষ্টম-নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই নিজের হাত খরচটা নিজেই চালাতে পছন্দ করতেন নাদিরা। তাই সেসময় থেকে টিউশনি করতেন তিনি। মাঝেমধ্যে পার্টটাইম জবও করেছেন। আর বাসা থেকে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য যে হাত খরচ দেওয়া হতো সেটা জমিয়ে জমিয়ে যখন এক হাজার বা দেড় হাজার হতো তখন সেটা দিয়ে পণ্যগুলো তৈরির উপকরণ কিনতেন, সেটাই তার প্রথম পুঁজি। উদ্যোগের দুই মাসের মধ্যে ২০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রয় করেন নাদিরা। আর সে অর্থ ব্যাংকে রেখে দেন। পরে সে টাকার সাথে আরো কিছু যোগ করে ২০২০-এ বড় পরিসরে শুরু করেন। কিন্তু প্যান্ডামিক সিচুয়েশনে নিরাশ হয়ে পড়েন কিছুটা। কিছুদিন পর লক্ষ্য করেন এসময়টাতেই বেশি সাড়া পাচ্ছেন তিনি। অর্ডার আসতে থাকে, কিন্তু লকডাউনে এত পণ্য কীভাবে পৌঁছাবে। সারারাত কাজ করে যতটুকু সময়ের জন্য লকডাউন শিথিল হতো তখনই ক্রেতার বাসায় এবং কুরিয়ারে পৌঁছে দিয়ে আসতেন। এভাবে ২০২০-এ দুই লাখ টাকার পণ্য বিক্রয় করেন উদ্যোক্তা নাদিরা তাবাসসুম।
এই উদ্যোক্তার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী আসিফ মুক্ত। ‘কাছিম’ উদ্যোগের কোন পার্টনার না হয়েও কাছিমের ভালোমন্দ সবসময়ই কাছিমের সাথে রয়েছেন। প্যান্ডামিকেও কাছিমকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছেন তিনি।

রিপিট ক্রেতার সংখ্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা বার্তাকে নাদিরা বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ। আমার যে ক্রেতারা একবার পণ্য নেন, তারা পরে কাস্টমাইজ করে বানিয়ে নেন। এমনও হয়েছে যে একরাতের মধ্যে কাস্টমাইজড করে পণ্য বানিয়ে সকালে ক্রেতার হাতে তুলে দিয়েছি। ক্রেতা এত অল্প সময়ে কাজের ফিনিশিং দেখে মুগ্ধ হয়ে ডাবল সম্মানি দিয়েছেন।“

কাছিমের কোন পণ্যের চাহিদা বেশি জানতে চাইলে তিনি বলেন: হাতে তৈরি চূড়ি এবং কূর্তির চাহিদা চোখে পড়ার মতো। আমার এক ডিজাইনের কূর্তি ৩০টা বানাতে হয়েছিলো, আর চূড়ির হিসাব বলা সম্ভব না। আগে ছোট্ট একটা ঝুড়ি নিয়ে বসতাম চুড়ি বানাতে, এখন বড় বড় ২/৩ টা ঝুড়ি নিয়ে বসতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন থিমে তৈরি কাছিমের জুয়েলারির চাহিদাও অনেক।

তিনি আরো বলেন, ‘আমার উদ্যোক্তা জীবনে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী খাঁচার স্বত্বাধিকারী শাহনাজ রশ্মি আপু। আপু আমাকে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন যা থেকে আমি অনেক কিছু শিখতে পারি, জানতে পারি। এছাড়াও আমি এখন রাজশাহী চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য। রশ্মি আপুই আমার নাম তালিকাতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। চেম্বার অফ কমার্সের সদস্য হয়ে আমার উদ্যোগ যেন আরো একধাপ এগিয়ে গেছে। আমার প্রতিটি ক্রেতাকে পণ্যের সাথে একটা করে কার্ড দেই আমি। এতে করে তারা আমার কাছিম সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পায়। এমন যুগোপযোগী পরিকল্পনা আমি চেম্বার অফ কমার্স থেকেই পেয়েছি। নতুন উদ্যোক্তাদের অবশ্যই আমি চেম্বার অফ কমার্স এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নে যেসকল প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোর সদস্য হতে বলবো। এতে অনেক কিছু জানা যায় যা উদ্যোক্তা জীবনকে আরো সমৃদ্ধ করতে বিরাট ভূমিকা রাখে।’

‘কাছিম’-কে বিশ্বের স্বনামধন্য ব্র্যান্ড হিসেবে গড়তে চান নাদিরা তাবাসসুম। নিজের ‘কাছিম’ কে সকলের কাছিম-এ রূপান্তর করতে চান। সৃষ্টি করতে চান বহু লোকের কর্মসংস্থান।

তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা
,রাজশাহী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here