মোমের জগতে আলোকিত উদ্যোক্তা

0
উদ্যোক্তা মাহমুদা পিংকি

ছোটবেলা থেকেই ঘর সাজাতে পছন্দ করতেন মাহমুদা। ওয়ালমেট তৈরি, ক্রাফটিং, আঁকাআঁকি ছিল তার শখের কাজ। যেখানে যাকে কিছু তৈরি করতে দেখতেন, মনোযোগের সাথে তা নিজের মধ্যে আয়ত্ত্ব করার চেষ্টা ছিল সবসময়। একটা সময় ছিল যখন ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলে মোম জ্বালিয়ে অন্ধকার দূর করা হতো। সেই জ্বালানো মোমের অবশিষ্ট অংশ জমা করে তা দিয়ে খেলার ছলে এটা ওটা তৈরি করতে বেশ পছন্দ করতেন পিংকি। একজন শৌখিন মানুষ হিসেবে নিজের জন্য বিভিন্ন রঙের মোম তৈরি করে শোকেসে সাজিয়ে রাখতেন। তার তৈরি এই মোমগুলো সবার দৃষ্টি আর্কষণ করে নেয়। নিজের ভালো লাগার কাজকে পেশা হিসাবে নিলে মন্দ হয় না- এমন ভাবনা থেকেই পিংকি মাত্র ,১৬০০ টাকা দিয়ে Zaara’s Candle Art নামে একটি নতুন উদ্যোগ শুরু করলেন। 

মাহমুদা পিংকির জন্ম এবং বেড়ে উঠা ঢাকাতেই। আরামবাগ গার্লস হাই স্কুল থেকে এস এস সি পাশ করার পর দুই বছর গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর কয়েকটা কোর্স করেন তিনি। তারপর বায়তুল ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন লাইব্রেরি’ এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসাবে কর্মরত ছিলেন বেশ কিছুদিন। 

সন্তানের জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়ে সম্পূর্ণ ঘর সংসারে মনোযোগী হন পিংকি। ঘরে বসে ইন্ডিয়ান কিছু পোশাক নিয়ে অনলাইনে প্রথম যাত্রা শুরু করেন ২০১৫ সালে। অল্প সময়ে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় তার অনলাইন প্লাটফর্ম। কিন্তু বছর দুয়েক পর পারিবারিক কিছু সমস্যার কারণে সবকিছু বন্ধ করে দেন।

একদিন বাসায় ছোট একটি অনুষ্ঠান ছিল, অতিথিদের সকলেই পিংকির তৈরি রঙবেরঙের মোমগুলো হাতে নিয়ে বেশ প্রশংসা করেন। তারা এ-ও বলেন যে এমন জিনিস তারা আগে কখনো দেখেন নি। পিংক ‘র তখন মনে হয় তিনি এটা নিয়ে কাজ করতে পারেন। নিজের ভালো লাগার কাজকে পেশায় রূপ দিতে চাইলেন। সেই থেকে আবারও অনলাইনে যাত্রা শুরু করলেন মোম নিয়ে।

মোমে এখন অনেক ভ্যারাইটি চলে এসেছে। দেশের বাইরে এসব মোমের চাহিদা ব্যাপক। কিন্তু বাংলাদেশে মোমবাতি বিলুপ্তপ্রায়। শৌখিন মোমবাতিগুলো হাতে গোণা্ কয়েকজন ব্যবহার করেন। মোমবাতিকে ভিন্ন আঙ্গিকে শৌখিনতায় পৌঁছে দিতে মাহমুদা পিংকি তার উদ্যোগটি সাজিয়েছেন নতুনভাবে। 

ইতোমধ্যে ক্রিয়েটিভ মোমগুলো পৌঁছে গেছে জাপান, মালয়শিয়া এবং কানাডায়। এছাড়া অনলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় তার পণ্য পৌঁছে যোচ্ছে। কয়েকজন রিপিট কাস্টমার রয়েছেন যারা তাদের প্রত্যেক অনুষ্ঠানে বা কোন উৎসবে আত্মীয় স্বজনকে গিফট করতে ৫০/ ১০০ পিস মোমবাতি একসাথে নিয়ে থাকেন।

উদ্যোক্তা মাহমুদা পিংকি বলেন, “বাইরের দেশের মতো আমাদের দেশে মোমের ভেরিয়েশন নেই বলে কেউ আগ্রহী হয় না। আমি এই মোমের মাঝে নিজের ক্রিয়েটিভিটি প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছি। ভালো লাগার কাজ, তাই নিত্য নতুন পণ্য তৈরি করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করি। আমি মোমের জগতে নিজের একটা আলাদা পরিচয় গড়তে চাই ৷ নিজের কাজ দেশে-বিদেশে সকলের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। বাংলাদেশে অনলাইন জগতে মোম নিয়ে কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়া যায় তা প্রমাণ করতে চাই।” 

তিনি আরো বলেন, “আমি সবাইকে বলতে চাই নিজের ভালো লাগার কাজকে পেশা হিসাবে নেয়ার চেষ্টা করুন। তাহলে কাজে আনন্দ পাবেন৷ কোন কাজই ছোট নয়। প্রতিটা কাজের শুরুতে অনেক জড়তা থাকবে, বাধা আসবে, সমালোচনা হবে, অভিজ্ঞতার অভাব থাকবে; কিন্তু তবু লেগে থাকতে হবে। চেষ্টা করলে অবশ্যই সফলতা অর্জন করা সম্ভব।”

সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here