ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনের প্রয়োজন হলেই সবাই চায়না, ইন্ডিয়া, কোরিয়া বা জার্মানীর কথা চিন্তা করেন। আমাদের দেশের ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে যে সব অপরিহার্য মেশিন রয়েছে তার মধ্যে চিলার অন্যতম। সবাই যখন এই চিলার বিদেশ থেকে নিয়ে আসে তখনই আর্নেষ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বাংলাদেশে এই চিলার উৎপাদন শুরু করে।
তিন বন্ধু মামুনুর রশিদ, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, আক্তারুজ্জামান সোহাগ, টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ও পার্থ পোদ্দার, মার্কেটিং ডিরেক্টর মিলে ব্যাবসার যাত্রা শুরু করেছিলেন ২০১০ সালে। স্বপ্নের বীজ বুনন হয়েছিল ছাত্রবস্থায়। লক্ষ্য ছিল উদ্যোক্তা হবার। পাশ করার পর সবাই কিছু দিন চাকুরীরত ছিলেন এবং সব বাদ দিয়ে তিন বন্ধু মিলে এক তালে তাদের উদ্যোগকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। ভাল চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা শুরু করার এই উদ্যোগ প্রথম দিকে কারও পরিবার মেনে নেয়নি। এক প্রকার পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্য উৎপাদনকারী অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেন।
শুরুর দিকে কোন নির্দিষ্ট পণ্য দিয়ে ব্যাবসা শুরু করার পরিকল্পনা ছিল না, কিন্তু সময়ের সাথে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তারা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্য দিয়ে কাজ শুরু করেন, তার মধ্যে অন্যতম হল চিলার।
চিলারের কাজ কি?
চিলার হল এমন একটা মেশিন যা পানি ঠাণ্ডা করার কাজে ব্যবহৃত হয়। শীতলকারক এই যন্ত্র বিভিন্ন গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি, প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি, ফারমাসিটিকেল ইন্ডাস্ট্রি, ফুড ইন্ডাস্ট্রি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি মৌলিক মেশিন হিসেবে ব্যাবহৃত হয়।
বাংলাদেশে আগে সব দেশের বাহিরে থেকে এই চিলার মেশিন আমদানি করা হত কিন্তু এই আর্নেষ্ট ইঞ্জিনিয়ারই বাংলাদেশে প্রথম চিলার মেশিন বানানো শুরু করেন।
চিলারের পাশাপাশি আর্নেষ্ট এইচ ভ্যাক, ডিহিউমিডিফায়ার, কোল্ড রুম, ক্লিন রুম, এ এইচ ইউ, কুলিং টাওয়ার নিয়েও সাফল্যের সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রায় ছোট বড় শ’খানেক কোম্পানী এই আর্নেষ্ট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাস্টমার। যেমন, বাংলাদেশ অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি(বিওএফ), প্রাণ আর এফ এল গ্রুপ, আব্দুল মোনেম লিমিটেড, বেঙ্গল গ্রুপ, অলেম্পিক ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড, টি কে গ্রুপ, ইস্পাহানী গ্রুপ, আরলা ফুড লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড, প্যারাগণ গ্রুপ, জেরমস ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড। এছাড়াও দেশের চাহিদা পূরণ করে দেশের বাহিরে চিলার রপ্তানির কাজ চলছে এবং এই চিলারকে কিভাবে বিশ্ব মানের করা যায় সেই নিয়ে গবেষণাও করছে তারা।
নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয় এই চিলার মেশিন মেনুফেচারিং। সেই থেকে এখন অবধি নিজেদের প্রকৌশলীর মাধ্যমে, নিজস্ব ডিজাইনে চলছে চিলার ও অন্যান্য কুলিং সরঞ্জামাদির ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের কাজ।
সব মিলিয়ে আর্নেষ্ট পরিবারে প্রায় অর্ধশত তরুণের কর্মসংস্থান হয়েছে যা দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
যদি এই আর্নেষ্ট সঠিক সাহায্য সহযোগিতা পায় তাহলে বাংলাদেশের তৈরি এই চিলার বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
বিপ্লব আহসান