মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা

0
উদ্যোক্তা ফৌজিয়া ইসলাম

বিভিন্ন ধরনের ডেজার্ট আইটেম এবং ফ্রোজেন আইটেম নিয়ে কাজ করেন উদ্যোক্তা ফৌজিয়া ইসলাম। উদ্যোগ শুরু হয় গাজরের লাড্ডু, কালোজাম মিষ্টি, গোলাপজাম মিষ্টি, বেবি সুইটস, সন্দেশ, বালুশাহী মিষ্টি, কোকোনাট লাড্ডু, মতিচুর লাড্ডু এসব আইটেম নিয়ে। এগুলোর মধ্যে গাজরের লাড্ডু সব চেয়ে বেশি সেল হয়। তারপর কালোজাম মিষ্টি এবং বালুশাহী মিষ্টি।

এক ঈদ আয়োজনে পরিবারের সদস্যদের জন্য শাহী জর্দা রান্না করেন তিনি এবং সেই ছবি পেইজে আপলোড করলে রাতারাতি অর্ডার আসতে শুরু করে।বর্তমানে শাহী মালাই জর্দার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। প্রায় ২৫ ধরনের উপকরণ নিয়ে এই স্পেশাল শাহী মালাই জর্দা তৈরী হয়। বর্তমানে কমপক্ষে ৮/১০ কেজি শাহী মালাই জর্দা এবং সাথে অন্যান্য আইটেমের অর্ডার থাকে।

উদ্যোক্তা ফৌজিয়া ইসলাম গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেন সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি এর ইকোনোমিকস ডিপার্টমেন্ট থেকে। পড়াশুনা শেষে তিন মাস একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করেন। বড় মেয়ের বয়স তখন মাত্র ১ বছর। ছোট বাচ্চা রেখে সকাল ৮ থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত সারাদিন ঘরের বাইরে থেকে চাকরি করাটা খুবই কষ্টকর ছিল। তাই মেয়ের কথা চিন্তা করে চাকরিটা ছেড়ে দেন ফৌজিয়া। কিন্তু মনের মধ্যে একটা চাপা কষ্ট কাজ করতো সবসময়।

‘২০২০ সালের মার্চ মাস। পৃথিবী তখন পুরোপুরি অসুস্থ। গৃহবন্দী জীবন পার করছিলো সবাই। তখন ছোট মেয়ের বয়স মাত্র ২ মাস। সারারাত জেগে থাকতো। তার সাথে আমাকেও জেগে থাকতে হতো। আমি তখন মাতৃত্বকালীন অবকাশে ছিলাম। ইচ্ছে হলেও কোথাও যাওয়ার অবস্থা ছিল না। হঠাৎ এক বান্ধবীর মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি গ্রুপের দেখা পাই। ২০২০ সালের ২৮ শে জুনে জয়েন করি সেখানে। সেখানে হাজার হাজার সংগ্রামী নারীদের পোস্ট পড়তে থাকি। পোস্ট গুলো পড়ে বেশি অনুপ্রাণিত হই। তারা সংসার, সন্তানদের সামলিয়ে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য কত পরিশ্রম করছেন! সবার পোস্ট পড়তে পড়তে নিজেকে নিয়ে নতুনভাবে স্বপ্ন দেখতে থাকি। সেখান থেকেই আমার উদ্যোক্তা জীবনের শুরু’ এভাবেই ফৌজিয়া তার উদ্যোক্তা জীবনের শুরুর গল্পটি বলছিলেন।

একদিন সাহস করে পোস্ট লেখা শুরু করেন। আগস্ট মাসের দশ তারিখে প্রথম অর্ডার আসে গ্রুপ থেকে। হাফ কেজি গাজরের লাড্ডু এবং হাফ কেজি গোলাপজাম মিষ্টি। নিজের হাত খরচের এক হাজার টাকা দিয়ে গাজর, দুধ, চিনি এবং প্যাকিং এর প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কিনে কাজ শুরু করেন উদ্যোক্তা ফৌজিয়া। অর্ডার অনুযায়ী যখন যা প্রয়োজন হতো তখন তাই কিনে কাজ করতেন।

বর্তমানে শাহী মালাই জর্দার চাহিদা এবং অর্ডারের চাপের কারণে অন্যান্য আইটেমের অর্ডার নেয়া সম্ভব হয় না। তাই বর্তমানে মেনুতে আছে ডেজার্ট আইটেমের মধ্যে শাহী মালাই জর্দা, শাহী জর্দা(মালাই ছাড়া), নওয়াবি সেমাই, শাহী টুকরা, বালুশাহী মিষ্টি, বুটের হালুয়া, গাজরের হালুয়া/লাড্ডু ইত্যাদি এবং ফ্রোজেন আইটেমের মধ্যে আছে বীফ শামী কাবাব, চিকেন শামী কাবাব, ফিস কাটলেট, স্প্রিং রোল ইত্যাদি।

Freezy Kitchen নামক অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে উদ্যোক্তা ফৌজিয়া তার নিজের তৈরি হোমমেড ডেজার্ট নিয়ে কাজ করছেন। স্বামীর সহযোগিতায় তিনি তার উদ্যোগ পরিচালনা করে আসছেন।এখন পর্যন্ত ঢাকাসহ রাজশাহী, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং চট্টগ্রামে পৌঁছে গেছে তার ডেজার্ট এবং বেশ সাড়া পেয়েছে ক্রেতামহলে।গত ডিসেম্বরে সেল হয়েছে প্রায় ৮৫,০০০ টাকা। আর চলতি জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত সেল হয়েছে প্রায় ৭২,০০০ টাকা। দেড় বছরে টোটাল সেল প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা।

চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজের শখ নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।তিনি বলেন, “নিজেকে স্বাবলম্বী হতে হবে। অন্যের পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না।নিজের প্রয়োজনীয় বা শখগুলো পূরণের জন্য অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকতে চাই নি। উদ্যোক্তা জীবনে স্বাধীনতা আছে। নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করা যায়। কাউকে জবাবদিহিতা করতে হয় না। এখানে আমিই আমার বস।”

ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, “বর্তমানে জয়েন্ট ফ্যামিলিতে থেকে নিজের উদ্যোগের কাজ করতে হয়। যখন অনেক অর্ডার থাকে তখন ডেলিভারির রান্নার জন্য নিজেদের ঘরের রান্নার সুযোগ থাকে না। তখন পরিবারের সদস্যদের সময় মতো খাওয়া দাওয়ার ব্যাঘাত ঘটে। তাই ভবিষ্যতে ইচ্ছে আছে একটা বড় ক্লাউড কিচেন তৈরী করার। আর সেই কিচেনে আমার সাহায্যকারী হিসেবে কিছু অসহায় নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্হা করা হবে। বর্তমানে এমনই একটা পদক্ষেপ নিয়েছি। ইনশাআল্লাহ ২০২২ সালের মধ্যে কিছু একটা হবে।”

“সফলতা একদিনে আসে না। অনেক বাধা আসবে। কিন্তু ভেঙে পড়লে চলবে না। অসীম ধৈর্য্য সহকারে কঠোর পরিশ্রম করে যেতে হবে। আর সততার কাছে কখনো হার মানা যাবে না। ইনশাআল্লাহ সফলতা অবশ্যই আসবে” – দৃঢ় চিত্তে এমন শক্তি এবং সাহস নিয়েই উদ্যোক্তা আজ এগিয়ে যাচ্ছেন তার উদ্যোগের পথে।

সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তাবার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here