রংপুরে এক বৃদ্ধাকে বাড়ি উপহার দিয়েছেন রংপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) বিপ্লব কুমার সরকার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবামূলক গ্রুপ উই আর বাংলাদেশ (ওয়াব)।
সম্প্রতি রংপুরের বসুনিয়া পাড়ার আজিজুল্লাহ গ্রামের শতবর্ষী সালমা বেগম ও তার পরিবারের নিকট বাড়ির চাবি হস্তান্তর করেন রংপুর জেলার পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার।
‘উই আর বাংলাদেশ’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই বৃদ্ধার করুণ অবস্থা তুলে ধরে ফেসবুকে পোস্ট দেয়। আর এই পোস্ট দেখে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন রংপুর জেলা পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার।
স্থানীয়রা জানান, বৃদ্ধার স্বামী মারা গেছেন প্রায় অনেক বছর আগে। ৮ সন্তানের মধ্যে ৭ জনই খোঁজখবর নেন না। তবে তাদের মধ্যে ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ ও অসুস্থ ছেলে ও তার স্ত্রী একটু দেখাশোনা করেন। বেশিরভাগ সময়ই খেয়ে না খেয়ে কাটে তার দিন। তারপরেও পেতেন না বয়স্ক ভাতা কিংবা বিধবা ভাতা।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম জানান, এর আগে তার ছেলে বয়স্ক ভাতার জন্য আমার কাছে আসলেও তার মা যে বেঁচে আছেন এটা আমি জানতামই না। এখন থেকে নিয়মিত তার খোঁজখবর রাখবো।
এ সময় পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো সওয়াবের কাজ। সমাজের অসহায় মানুষের পাশে আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো।

বৃদ্ধার কথা জানিয়ে বিপ্লব কুমার বলেন ‘বৃদ্ধার বাকি সন্তানদের মধ্যে কয়েকজন মারা গেছেন। তার যে নাতিরা আছেন তারাও দাদিকে দেখে না। যে ছেলে তার দেখশোনা করে তিনিও এক ধরনের ক্ষুধার্ত। তারপরও মাকে দেখাশোনা করে। মা চলাফেরা না করতে পারার কারণে বিছানায় মল-মূত্র ত্যাগ করে। ছেলে নিজেই সেগুলো পরিস্কার করেন। আমি তাকে স্যালুট জানাই, ৭০ বছর বয়সে এসেও ছেলে তার মায়ের সেবা করছে। তার নিজেরও তেমন কিছু নেই তারপরও। এটাই অনেক বড়।’
রংপুরের এই পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমি ভাবলাম বড় কিছু করা যায় কি-না। যেহেতু তার থাকার জায়গা নেই। মায়ের সেবা করার সেই ছেলের ঘর আছে কিন্তু সেখানে যে একটা চৌকি ফেলে মাকে রাখবে সেই জায়গা নেই। তাই আমি চিন্তা করলাম তাকে একটা ঘর করে দিই। শুরু করলাম।’
জনবান্ধব ও জনপ্রিয় পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে খ্যাতি রয়েছে পুলিশের এই কর্মকর্তার। ২১তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের এই কর্মকর্তা রংপুর জেলা পুলিশে যোগদানের আগে ২০১৩ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখায় রেকর্ড ২৪ বার শ্রেষ্ঠ উপ-কমিশনার (ডিসি) হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন বিপ্লব কুমার। এছাড়া ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশের সর্বোচ্চ পুরস্কার দুবার বিপিএম ও একবার পিপিএম পেয়েছেন তিনি।
এসপি বিপ্লব বলেন, ‘করোনার মধ্যে নানা ব্যস্ততার কারণে ঘর তৈরি করা হয়ে উঠছিল না। তারপর শুরু করলাম। টিন কিনে দিলাম। এরপর তৈরি করে দিলাম।’
ঘর পাকা করে দেবেন জানিয়ে বিপ্লব বলেন, ‘ঘরে আরও কিছু কাজ করে দেব। ভিটেটা একটু পাকা করে দেব। আজকে তাকে সেই ঘরে তুলে দিয়ে আসলাম। আর বলে এসেছি খাওয়ার বন্দোবস্ত আমি মাসে মাসে করব। যেমন- চাল, ডাল, টাকা-পয়সা যা পারি; যাতে খেয়ে বাঁচতে পারেন।’
এ সময় রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আরিফ হোসেন, মারুফ আহমেদ, ওয়াব-এর অ্যাডমিন সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুল আলম পলাশসহ রংপুর জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা