সাবাংগী’ চাকমা শব্দ, যার অর্থ- একসঙ্গে সমানভাবে কাজ করেন যারা (কর্মসঙ্গী)।

নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও ঢঙে পার্বত্য অঞ্চলের পণ্যের কদর দারুণ।বর্তমান সময়ে পণ্য কেনা-বেচার সহজ প্লাটফর্ম- অনলাইন। পাহাড়ি সব অনলাইনে পণ্য বিক্রেতাকে একত্র করে একটি সম্মিলিত প্লাটফর্ম বানানোর ভাবনা থেকে ‘সাবাংগী’র জন্ম।

সাবাংগী’র (SABANGEE) যাত্রা শুরু ২০১৯ সালের এপ্রিলে। মূলত রাজধানীর কাজীপাড়ায় অবস্থিত পাহাড়ি রেস্টুরেন্টে “হেবাং” এর সত্বাধিকারী বিপলি চাকমা তার রেস্টুরেন্টের পাশে একটি ছোট প্রোডাক্ট পিকআপ পয়েন্ট রাখার প্রস্তাব দেন সাবাংগী’র ত্রিশিলা চাকমাকে।

বিপলি চাকমার কথামতো ফ্লোরটি দেখতে গিয়ে তার মনে হয়- এখানে আমি কেন, আমার মতো আরও চার-পাঁচজন অনলাইন সেলার প্রোডাক্ট পিকআপ পয়েন্ট দিতে পারবে।

ত্রিশিলাকে চাকমা সেই “হেবাং” রেস্টুরেন্ট এর প্রোডাক্ট পিকআপ পয়েন্ট ফ্লোরটি কন্ফার্ম করার পর কয়েকজন উদ্যোক্তা খুঁজতে শুরু করেন। সেই অনুযায়ী প্রথমে ত্রিশিলার বান্ধবী ঈশি তালুকদার এর কাছে প্রস্তাব রাখেন, কেননা ঈশি তালুকদার একজন অনলাইন উদ্যোক্তা। নিজস্ব ডিজাইনের ঐতিহ্যবাহী পোশাক নিয়ে কাজ করেন। তার পেজের নাম ‘তুংগোবী’। প্রথম প্রস্তাবটি তাকেই দিলেন ত্রিশিলা। প্রথমে একটু দ্বিধায় থাকলেও রাজি হয়ে গেলেন ঈশি। এরপর তার মাধ্যমে ‘রানজুনি’ পেজের স্বত্বাধিকারী উপমা নেলী, ‘বক্স অফ অরনামেন্টস’-এর স্বত্বাধিকারী রিতিসা রিতি এবং ‘কোরিয়ান গ্ল্যাম বাংলাদেশ’-এর স্বত্বাধিকারী জিলিয়ান তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়।

আমরা একত্র হয়ে প্রথমে ঠিক করি, যেখানে পিকআপ পয়েন্ট করার কথা, সেখানে আগে একটি ইনডোর মেলা বসাব। আমাদের সঙ্গে আরও ছিলেন “বিয়ং” পেজের স্বত্বাধিকারী সুচিন্তা চাকমা। সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্তে আমরা গত বছরের ২৩ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত তিনদিনের জন্য প্রথমবারের মতো “সাবাংগী মেলা” নামে ৬ জন মিলে একটি ইনডোর মেলার আয়োজন করি। অবিশ্বাস্যভাবে মেলায় আমরা প্রচুর সাড়া পাই। আমাদের মেলার মেয়াদ আরও দুইদিন বাড়াতে হয়।

“সাবাংগী” নিয়ে মূল পরিকল্পনার ব্যাপারে ত্রিশিলা বলেন, “সাবাংগী” যে পাহাড়ি নারী অনলাইন উদ্যোক্তা ও সেলারদের একটি মিলন ক্ষেত্র হবে, তা অবশ্য আগে থেকে ঠিক করা ছিল না। এক সময় খেয়াল করলাম, যেহেতু আমরা ছয়জনই নারী, তাই পাহাড়ি নারী অনলাইন সেলার ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরির কথা ভাবতে পারি। সেতুবন্ধন এর এই ভাবনা থেকেই “সাবাংগী” পথচলা শুরু হয়।

বুটিক শপ “সাবাংগী” উদ্যোগের সত্বাধিকারী হলেন যারা :
১. ঈশি তালুকদার- “তুংগোবী”
২. উপমা নেলি “রানজুনি” (বুটিক শপ)
৩. ত্রিশিলা চাকমা “তারেঙ” (টি-শার্ট শপ)
৪. সুচিন্তা চাকমা “বিয়ং” (ঐতিহ্যবাহী বেইনে বোনা পোশাক শপ )
৫.রিতিসা রিতি “বক্স অফ অরনামেন্টস” (অরনামেন্ট শপ) এবং
৬. জিলিয়ান তালুকদার “কোরিয়ান গ্ল্যাম বাংলাদেশ” (কোরিয়ান কসমেটিকস শপ )

এরাই হলো ‘সাবাংগী’ উদ্যোগের মূল হোতা। পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছেন ‘সাবাংগী’র বিশেষ উপদেষ্টা বিপলি চাকমা ও ‘সাবাংগী নেটওয়ার্ক’-এর প্রায় শতাধিক পাহাড়ি নারী উদ্যোক্তা ও রিসেলার।

‘সাবাংগী’ শুরু করতে গিয়ে কি ধরণের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন- এ প্রসঙ্গে ত্রিশিলা চাকমা বলেন- সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল অর্থনৈতিক। ফ্লোরটি ভাড়া ছাড়াও মেইনটেইনেন্স, ডেকোরেশন, আনুষঙ্গিক নানা খরচ এর একটা বড় যোগান প্রস্তুত রাখাটা ছিল সবচে আমাদের সবার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক খরচগুলো প্রতিবার ছয় ভাগে ভাগ করে নিতাম যার ফলে তেমন বোঝা মনে হয়নি। একসঙ্গে কাজ করার এই সুবিধা আমরা পেয়েছি, যা একা করতে গেলে অনেক বেশি বোঝা মনে হতে পারত।

পরিশেষে ত্রিশিলা চাকমা আরো বলেন – বাংলাদেশের সবকিছুর মধ্যে পাহাড়কে তুলে ধরতে চাই। নিজেদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি কে অন্যকে জানাতে চাই, আশা করি, আমাদের সকলের ঐক্য প্রচেষ্টায় একদিন আমরাই পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক বিবর্তন আনতে সক্ষম হবো।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here