মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও উদ্যোক্তা লিপির পাটজাত পণ্যের ক্রেতা

0

পৈত্রিক নিবাস ইলিশের দেশ চাঁদপুরে তবে জন্ম শৈশব কৈশোর এবং বেড়ে উঠা রাজধানীর মিরপুরে। ভাগ্যক্রমে লেখাপড়া চলাকালীন সময়েই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাকে। পারিবারিক জীবনে সমস্যা সত্ত্বেও ভেঙ্গে পরেন নি। কখনও হাল ছাড়েন নি তিনি।

বাবার সংসারে থেকে আবার লেখাপড়ার ও বিভিন্ন রকমের কাজ শিখতে থাকেন তিনি। সেই সময় ব্যাংকে একটি চাকুরিও করেছিলেন। কিন্তু, চাকরি ছেড়ে দিয়ে কিছু একটা করতে হবে সেই চিন্তা থেকেই হাতের কাজ করা শুরু করেন। ছোটবেলা থেকেই কিছু কিছু হাতের কাজ পারতেন তিনি পাশাপাশি শখও ছিল কিছুটা হাতের কাজের প্রতি। সেইখান থেকে শুরু করে দেন  টেইলারিং এর কাজ। বর্তমানে তার একটি টেইলার্স এন্ড শোরুম রয়েছে মিরপুর-১ এ। তার প্রতিষ্ঠানের নাম “প্রকৃতি হ্যান্ডিক্রাফটস” নামেই সবার কাছে পরিচিত।

উদ্যোক্তা লিপি আক্তার

টেইলারিং কাজ শিখে একটি টেইলার্স এর দোকান দেওয়ার পাশাপাশি বিসিক, জেডিপিসি, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও এসএমই ফাউন্ডেশন এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পাটজাতপণ্য, ব্লক , বাটিক ও ফ্যাশন ডিজাইনিং সহ আরও অন্যান্য কাজ গুলো শিখে নেন। টেইলারিং এর পাশাপাশি তিনি পাটজাত পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। পাটজাত পণ্যের কাজ গুলো বিভিন্ন অফিস,বাংকের ও এনজিওর কাজ গুলো অর্ডার নিয়ে সরবরাহ করে থাকেন সাধারণত।

সর্বপ্রথম তিনি মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে সাত দিনের একটি মেলাতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সম্পূর্ণ নিজের হাতে তৈরী করা বিভিন্ন পাটজাত পণ্য ছিল তার সেই মেলার প্রদর্শনীতে । লাঞ্চ ব্যাগ , বোতল ব্যাগ , হ্যান্ড পার্স সহ আরও বিভিন্ন ধরনের পণ্য। মেলা শেষ হওয়ার সাতদিন পর তাকে এক হাসপাতাল থেকে ফোন দিয়ে তাদের জন্য ব্যাগের স্যাম্পল নিয়ে দেখা করতে বলেন। তার এই অর্ডার এর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তাঁরা আমাকে প্রায় ৩০০০ ব্যাগের অর্ডার করে দিল আমার পণ্য দেখে।প্রায় ৫ লক্ষ টাকার এই কাজটা হাতে নিয়ে আমি চিন্তায় পরে গেলাম কিভাবে আমি কাজটি শেষ করব সাথে অনেক বেশি উত্তেজিত ছিলাম এটি করা নিয়ে।

এরপর সফলতার সাথে সবগুলো ব্যাগ ডেলিভারি করি।” তারপর থেকে বায়ারের কাছ থেকে ৫০ শতাংশ  টাকা কাজের অগ্রিম পেমেন্ট হিসেবে নিয়ে কাজ শুরু করেন। সেই থেকে তার একটি পুঁজি দাড়িয়ে যায়। এরপর ২০১৩ সালে সম্পূর্ণ সরকারি খরচে পাটজাত পণ্য নিয়ে জাপানে দেড় মাসের একটি প্রদর্শনীতে লাল সবুজের প্রতিনিধিত্ব করে আসেন তিনি। সম্পূর্ণ দেশী পণ্য  নিয়ে কাজ করেন উদ্যোক্তা লিপি আক্তার। তার দেশী পণ্য নিয়ে দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন মেলায় তিনি অংশগ্রহণ করেন । এমনকি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে তার দেশী পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই বছর আগামী ১৭ই ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারী পর্যন্ত ‘মেগা ট্রেড ফেয়ার কলকাতা’ তে দেশের প্রতিনিধি হয়ে অংশগ্রহন করতে যাচ্ছেন তিনি।

উদ্যোক্তা লিপি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার কাছে প্রতি বছর ই প্রডাক্ট নেন মেলা থেকে আর বারবার বলেন আমার নাতনীদের জন্যে জামা কাপড় দাও আর আমার তৈরি করা বাটিকের চাদর নিয়ে যান এবং আরো অর্ডার করে যান আর বারবার বলেন তোমার এই চাদর গুলো অনেক ভালো লাগে।”

দেশের বিভিন্ন জেলায় মেয়েদের ও অনলাইনে ও অফলাইনে বিভিন্ন কাজের উপরে প্রশিক্ষন প্রদান করেন তিনি এবং তার নিজের এলাকায় অসহায় মেয়েদের কাজ শিখিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলেন।তিনি তার কাছে কাজ শেখা মেয়েদের সবসময় বুঝাতে চেষ্টা করেন এবং নিজেও বিশ্বাস করেন  তার নিজের পরিচয় নিজেকে তৈরি করতে হবে এবং কারও কাছে বোঝা হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে ভালো হলো পরিশ্রম করে বেঁচে থাকা।

তার কাজের জন্য তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা পেয়েছেন। যেগুলোর মধ্যে উল্লেখ্য হলো
জাপানী সংস্থা, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, শিল্প মন্ত্রনালয়, বিইয়া, মাদার তেরেসা, জাতীয় সংসদ, স্কাউট, বাংলাদেশ হস্তশিল্প এসোসিয়েশন, নিজের বলার মতো ফাউন্ডেশন।

নবীন এবং তরুন উদ্যোক্তাদের উদ্যেশ্যে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নবীন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলবো এখন প্রতিযোগীতার বাজার। সাশ্রয়ী মূল্যে ক্রেতার চাহিদা মেটানো সবচেয়ে কঠিন।দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার এবং মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধাও দিনদিন যেমন বাড়ছে তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিক্রেতার সংখ্যাও।কঠিন প্রতিযোগীতায় টিকে থেকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন প্রচণ্ড সাহস, দৃঢ় মনোবল ও অদম্য ইচ্ছা । সহজেই হতাশ হওয়া যাবেনা আর মনে রাখতে হবে গভীর রাতের পরেই সোনালী সকালের দেখা মিলে।”

প্রচণ্ড আত্নপ্রত্যয়ী এবং পরিশ্রমী এই উদ্যোক্তা সবসময় স্বপ্ন দেখেন বেকারত্বের অভিশাপ মুক্ত একটি সমাজের যেখানে তরুন উদ্যমী উদ্যোক্তারা তাদের উদ্যম দিয়ে সামনে থেকে সোনার বাংলা গড়ে তোলার সৈনিক হিসেবে কাজ করছে।      

সাকিব মাহমুদ,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here