মাঠ পর্যায়ে আড়াই হাজার লোকের কর্মসংস্থান গড়েছেন উদ্যোক্তা ইসরাত কিবরিয়া

0
উদ্যোক্তা ইসরাত কিবরিয়া

শুরুটা হয়েছিল মাত্র একজন সহযোদ্ধা নিয়ে আজ উদ্যোক্তা ইসরাত কিবরিয়ার কাজল বুটিকের কারখানায় সাত জন সহযোদ্ধা এবং মাঠ পর্যায়ে আরো আড়াইহাজার সহযোদ্ধা রয়েছে। মাত্র দুই হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু সাথে দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে ইসরাত কিবরিয়া এখন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। প্রায় একশত পরিবার এখন তার প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ক্রেতার তালিকা ভুক্ত।

লক্ষ্ম স্টিচ, ভরাট, শঙ্খলতা, এপ্লিক,টাইডাই, ব্লকবাটিক ইত্যাদি বাহারি ডিজাইনে থ্রিপিস, টুপিস, কুর্তি, শাড়ি, বোরখা, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, বেডসিট, কুশোন কভার সহ নানা ধরনের পোশাক তৈরি হচ্ছে কাজল বুটিকে। পাঁচশত থেকে পনের হাজার যার যেমন চায় সকলের কথা চিন্তা করেই কাজল বুটিকের একেকটি পণ্য তৈরি হয়। দেশের বারোটি জেলায় পাইকারি মূল্যে পোশাক সরবরাহ করেন এই উদ্যোক্তা। এছাড়াও অনলাইন এবং তার প্রতিষ্ঠানে এসেও ক্রেতারা পাইকারি এবং খুচরামূল্যে তাদের পছন্দসই পোশাক ক্রয় করতে পারবেন। সামাজিক পাতাই কাজল বুটিক নামে পেজ রয়েছে এই উদ্যোক্তার এবং রাজশাহীর কাজীহাটা এলাকায় তার প্রতিষ্ঠান অবস্থিত।

কোন পোশাকে কোন নকশা ফুটে উঠবে, কোন কাপড় ব্যবহৃত হবে এবং কোন কালারের সুতোই বা বসবে নকশায় সবকিছুই স্বামী-সন্তানের সহযোগিতায় এখনো সবটা সামলে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা ইসরাত কিবরিয়া ফেন্সি। আপনার মতে সফলতার মূলমন্ত্র কী? এমন প্রশ্নে উদ্যোক্তা ইসরাত কিবরিয়া বলেন “নিষ্ঠা এবং সময়ানুবর্তিতাই আমার কাছে সফলতার মূলমন্ত্র। আমার ক্রেতাকে যদি বলি পরশুদিন ডেলিভারি দেব কিন্তু পনের দিন পর দিলাম তাহলে ক্রেতার আমার উপর বিশ্বাস উঠে যাবে। এবং খারাপ কাপড় ব্যবহার করে বেশি টাকা নিলে পরবর্তীতে তিনি কখনোই আর আমার কাছে অর্ডার করবেন না, তখন আমি ক্রেতা হারাবো তাই আমার কাছে সফলতার মূলমন্ত্র নিষ্ঠা এবং সময়ানুবর্তিতা।”

এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে বেশকয়েকবার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এই উদ্যোক্তা। ২০১৪ সালের এমএমই মেলায় অংশ নিয়ে পাঁচদিনে ১৫ লক্ষ্য টাকার পণ্য বিক্রয় হয় তখন থেকে উদ্যোক্তা ইসরাত কিবরিয়া ফেন্সি আরো অদম্য হয়ে উঠেন। বহুবার তিনি এসএমই মেলা এবং বাণিজ্য মেলায় অংশ নেওয়ার মধ্যে দিয়ে তিনি শুধু রাজশাহী নয় দেশ এবং দেশের বাইরেও পরিচিতি পেতে থাকেন। কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ২০১৬ সালে ময়মনসিংহ আঞ্চলিক এসএমই পণ্য মেলায় দ্বিতীয় পুরষ্কার এবং ২০১৭ তে আবারো আঞ্চলিক এসএমই পণ্য মেলায় প্রথম স্থান অর্জন করেন এই উদ্যোক্তা।

ষষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যায়নরত অবস্থায় বিয়ে হয়েছিলো ইসরাত কিবরিয়া ফেন্সির। বগুড়ার কন্যা মাত্র ১৩ বছর বয়সে শ্বশুর বাড়ি রাজশাহীতে চলে আসেন। ছোটবেলা থেকেই সুঁই-সুতোর কাজের প্রতি ভিষণ ঝোঁক ছিলো তার। মায়ের হাত ধরে সেলাই শেখা হলেও পরবর্তীতে মায়ের সেলাই এর প্রতি ভালোবাসা থেকে মেয়ের সেলাইয়ের প্রতি ভালোবাসাটাই দ্বিগুণ হয়ে যায়। স্বামী-সন্তান এবং নিজের জন্য নিজ হাতে প্রতি ঈদে পোশাক তৈরি করতেন তিনি। সেই পোশাক গুলো দেখে ভালো লাগতো পরিবারের অন্যান্য সদস্যের। ননদ এবং বোনের অনুপ্রেরণায় এবং তাদের পোশাক তৈরির মাধ্যমেই উদ্যোক্তা জীবনে পদার্পণ করেছিলেন তিনি। ছোট দেবর মরহুম কাজল এর নামে নামকরণ করা হয় প্রতিষ্ঠানের। মেধাবী কাজল হঠাৎ করে ব্রেইন এর জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তার কথা যাতে কেউ ভুলে না যায় সকলের মুখে মুখে থাকে সে জন্যই নিজ বা সন্তানের নাম না দিয়ে দেবর মরহুম কাজলের নামেই প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেন এই উদ্যোক্তা।

একজন থেকে মাঠ পর্যায়ে আড়াইহাজার জন সহযোদ্ধা এই সংখ্যাটাও অতিক্রম করে আরো অসংখ্য অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চান এই উদ্যোক্তা। এবং খুব শীঘ্রই তিনি পণ্য তালিকায় হাতের কাজের পোশাকের সাথে হ্যান্ডপেইন্ট এর পোশাক যুক্ত করতে যাচ্ছেন এই উদ্যোক্তা। বর্তমানে এগুলো নিয়েই ব্যস্তসময় পার করেছেন ইসরাত কিবরিয়া ফেন্সি।

তামান্না ইমাম,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here