ভাঙ্গন থেকে গড়ে ওঠার গল্প

0
উদ্যোক্তা- রেজবিন হাফিজ

কখনো ব্রহ্মপুত্র নদের শীতল হাওয়া, কখনোবা তিস্তা নদীর উত্তাল ঢেউ আবার কখনো যমুনা নদীর আগ্রাসী ভাঙ্গন-এমনি বাস্তবতায় গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কাতলামারী গ্রামে জন্ম রেজবিন হাফিজের। জীবিকার তাগিদে বিদেশ পাড়ি জমানো বাবা আর পল্লী চিকিৎসক মায়ের ঘরে জন্ম নেয়া রেজবিন দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মেঝ। আর তাইতো ডানপিঠে রেজবিন ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন দেখতেন ব্যতিক্রমী কিছু করার। সহপাঠীদের নিয়ে জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘাঘট কিংবা বাঙালি নদীর সাথেও সক্ষতা কম ছিলনা তার। চোঁখের সামনে দেখেছেন তিস্তা-যমুনা নদীর হিংস্রতা। তাই বলে মনোবলের ঘাটতি ছিলনা রেজবিনের। জেলার নবাবগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফুলছড়ির পাদিয়াখালি উচ্চ বিদ্যালয় ও সবশেষ গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে ইসলামী ইতিহাসে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষকতা পেশায়। চাকুরি করেন সাভারের বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ ও উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে। 

কিন্তু গতবাঁধা জীবন কি ভাল লাগতে পারে একজন সুপ্ত প্রতিভার মানুষের? আর তাইতো ২০১২ সালে রেজবিন শুরু করেন চামড়া কাটা ডাইস্টিল তৈরির কাজ। এর দু’বছর পর অর্থাৎ ২০১৪ সালেই শুরু করেন স্যান্ডেল তৈরির কাজ। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রেজবিনের। নিজস্ব স্টাইলে মানসম্মত চামড়ার জুতা -স্যান্ডেল তৈরি করে শুধু দেশে নয় বিশ্ব দরবারে নতুন পরিচয়ে পরিচিত করে তোলেন লাল-সবুজের এই দেশকে। মালয়েশিয়া, চীন, ভারত সহ বিভিন্ন দেশে এখন শোভা পাচ্ছে রেজবিনের পিপলস ফুটওয়ারের মেড ইন বাংলাদেশের পাদুকা। রেজবিন হাফিজ জানান, খুব শীগ্রই সূর্যোদয়ের দেশ জাপান ও ভিয়েতনামে রপ্তানি হতে যাচ্ছে তাঁর পণ্য। শুধু তাই নয় পিপলস ফুট ওয়্যার এন্ড লেদার গুডসের উৎপাদিত পণ্য পাওয়া যাচ্ছে আড়ং, এপেক্স, বাটা, ওরিয়ন, জেলসের মত দেশসেরা ব্রান্ডের শো-রুম গুলোতে। 

মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে যাত্রা শুরু করা রেজবিনের প্রতিষ্ঠানের সাথে এখন জড়িয়ে আছে দুই শতাধিক মানুষের জীবন -জীবিকা। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০২০ সালে পান উদ্যোক্তা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার। কেন উদ্যোক্তা হলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রেজবিন হাফিজ বলেন, কুটির শিল্পের সঙ্গে আমার জেলা গাইবান্ধার সম্পর্ক অনেক পুরানো। ১৯৬০-এর দশক থেকেই  এই জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কোচাশহর ইউনিয়নে সুয়েটার, মুজা, মাফলার ইত্যাদি তৈরী করা হতো। আমি দেখলাম আমাদের কাঁচামালের অভাব নেই, প্রয়োজন শুধু উদ্যোগ আর প্রশিক্ষনের। সে কাজটিই আমি করেছি। নদী ভাঙ্গন কবলিত আমার জেলার অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে থাকতে পেরে আমি সত্যি গর্বিত। আর আমার সকল কাজের অনুপ্রেরনায় রয়েছে আমার স্বামী। যার সহায়তা না থাকলে আজ আমি হয়তো উদ্যোক্তা রেজবিন হতে পারতাম না। 

উদ্যোক্তা তৈরিতে বর্তমান সরকার কতটুকু আন্তরিক? এমন প্রশ্নের জবাবে বিসিক উদ্যোক্তা ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা রেজবিন হাফিজ বলেন, সরকারের আন্তরিকতার কারনেই প্রতি বছর দেশে হাজার হাজার উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। তবে ব্যাংকিং ব্যবস্থা আর একটু সহজ করা গেলে আমার বিশ্বাস দেশে বেকার থাকবে না। আর  শিক্ষিত যুবরাও চাকরি নামের সোনার হরিণের পিছুও ছুটবেনা। 

নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি রেজবিনের একটাই কথা, হুজুগে কান দিয়ে উদ্যোক্তা হবার চেষ্টা না করাই ভাল। অবশ্যই বুঝে শুনে এবং আগ্রহ আছে এমন প্রোডাক্ট বেছে নিয়ে কাজ করাই শ্রেয়। তবে কাজ যেটাই হোক না কেন পেশাদারিত্ব না থাকলে কোন কাজেই সফল হওয়া যায় না।

রেজবিন অনুসারিদের একটি বাড়তি পাওয়া আছে, তা হলো তাঁর উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে নাটক ‘তরুনিমা’ । মাসুদ করিম সুজনের রচনা ও পরিচালনায় গত ৫ জুন নাটকটি প্রচার হয় আরটিভিতে।

মাসুমা শারমিন সুমি
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here