উদ্যোক্তা- আহসানুস সাইদ

মোবাইল ফোন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি যন্ত্র আজকের যুগে। মোবাইল ফোন ছাড়া জীবন যেন আজ কল্পনাই করা যায় না। কোথায় আছেন, কি করছেন? ব্যবসা, পরিবার, অফিস সবকিছু মিলিয়ে মোবাইল ফোন আজ একটি অত্যন্ত অপরিহার্য অংশ আমাদের জীবনে।
স্নাতক পড়ুয়া একজন তরুণ চোখে স্বপ্ন আঁকতে পারে? ১৬০ স্কয়ারফিটের একটি ছোট্ট শো-রুম নিয়ে যাত্রা শুরু করতে পারে? পুঁজি মাত্র ৫০ হাজার টাকা, তাও রাজধানী শহর ঢাকায়। এমনই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর হ্যাঁ প্রমাণ করেই যাত্রা শুরু করেন তরুণ উদ্যোক্তা আহসানুস সাইদ। ৫০ হাজার টাকা নিজের আর ৫০ হাজার টাকা ধার করলেন বন্ধুর কাছ থেকে। ব্যবসা শুরু করলেন তরুণ উদ্যোক্তা। ১ লক্ষ টাকা অগ্রিম দিতে হবে দোকানের পজিশনের জন্য। ৫০ হাজার টাকা এডভান্স পরিশোধ করে আর ৫০ হাজার টাকা ৬ মাসের মধ্যে পরিশোধ করবার শর্তে ধানমন্ডির অর্কিড প্লাজায় ১৬০ স্কয়ারফিটে একটি ছোট্ট শোরুম খুললেন আহসানুস সাইদ।

পজিশন পাওয়া গেছে এবার বন্ধুর কাছ থেকে ধার করা ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়ে মোতালেব প্লাজায় মোবাইল ও যন্ত্রাংশ, এক্সেসরিজ, মোবাইল কাভার, চার্জার অন্যান্য জিনিস কিনলনে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার। বিক্রি করে বাকী টাকা পরিশোধ করা যাবে এমন সহযোগীতার হাত বাড়ালেন পাইকারি ব্যবসায়ী জনাব দেলোয়ার। ২০টি হ্যান্ডসেট মিললো উদ্যোক্তার সাথে আছে বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবার অসাধারণ শক্তিশালী প্রযুক্তির মাধ্যম সিমকার্ড। সিমকার্ডের ব্যবসায় আসলে মূল শক্তি বা অনুপ্রেরণা ছিলো তখন একজন উদ্যোক্তার একজন ব্যবসায়ীর।

সিটিসেল, গ্রামীণফোন, এয়ারটেল, রবি, বাংলালিংক, এই চারটি মোবাইল অপারেটরের সিমকার্ড এবং হ্যান্ডসেটের তখন বাজারে ছিলো ভীষণ চাহিদা। গুটিগুটি পায়ে অ-উৎপাদিত পণ্যের ব্যবসা শিখতে থাকেন এবং ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন উদ্যোক্তা আহসানুস সাইদের মোবাইল হাউজে। বাবা ব্যবসায়ী। পরিবারের ব্যবসার চল ছিলো আগে থেকেই। বাবা হলেন এক অনুপ্রেরণা দেবার উৎসাহ দেবার কারিগর। তিনি পারবেই। আমি পারবোই কথাটি যেন বাজতে থাকে। অসীম মনোবল নিয়ে ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, সোবাহানবাগ, মোহাম্মাদপুর অঞ্চলের মোবাইল ব্যবহারকারী গ্রাহক এবং ক্রেতাদের কাছে তিলে তিলে নিজ ব্যবসাকে পরিচিত করাতে থাকেন উদ্যোক্তা সাইদ সুনামের সাথে। মাত্র ৬ মাসের মধ্যে বাড়িভাড়ার এডভান্সের ৫০ হাজার টাকা এবং মোতালেব প্লাজার পাইকারি ব্যবসায়ী জনাব দেলোয়ারের কাছে ক্রেডিটে নেওয়া পণ্য ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেন উদ্যোক্তা সাইদ। ক্যাশবাক্সে সিমকার্ড এবং মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য সামগ্রী বিক্রয়লব্ধ লভ্যাংশ ২ লক্ষ টাকার একটি অংশ বলে দিলো ব্যবসার সমৃদ্ধি আসবেই।

প্রথম বছরেই ভীষণ মনোবল বেড়ে গেলো এবং দৃঢ়-প্রত্যয়ী হলেন উদ্যোক্তা আহসানুস সাইদ। ধানমন্ডি-২৭ নাম্বারে মোবাইল জগতের এক মিনি হাব হয়ে উঠতে লাগলো উদ্যোক্তা সাইদের স্বপ্ন মোবাইল হাউজ।
২০০৪-২০০৫ সিটিসেলের রিটেইল আউটলেট হ্যান্ডসেট সার্ভিস সারা মিললো ব্যপক। বিভিন্ন হ্যান্ডসেটের পসরা, কাস্টমারদের মোবাইলসেট এবং মোবাইল এক্সেসরিজ প্রাপ্তির প্রযুক্তির মোবাইল হাউজ। তৎকালীন এয়ারটেল তথা আজকের রবির নেটওয়ার্ক কানেকশন সিমকার্ডে এবং হ্যান্ডসেটের এক সুবিশাল ব্যবসা উদ্যোক্তাকে করে অনেক শক্তিশালী। গ্রামীণফোনের প্রথম প্রিপ্রেইড কানেকশন হ্যান্ডসেটসহ। কানেকশন, সিমকার্ড, এবং সেটের সাথে নানান মডেলের মোবাইল হ্যান্ডসেট প্রাপ্তির আনন্দ ক্রেতাদের দেয় স্বস্তি এবং উদ্যোক্তাকে দেই এক বিশাল পথ পারি দেবার স্বপ্ন।

একের পর এক ব্যবসার সফলতার ডানা মেলে যেনো। বাংলালিংকের হ্যান্ডসেটসহ সংযোগ অফার, বান্ডল অফার সব মিলিয়ে উদ্যোক্তার ব্যবসায়ীর ভীত হতে থাকে দৃঢ় এবং শক্ত। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ উদ্যোক্তাকে এনে দিতে থাকে গ্রাহকের সন্তুষ্টি। নেটওয়ার্ক বিস্তৃতির সাথে সাথে গ্রাহক তৈরিতে সরাসরি অংশগ্রহণ অপারেটর সমূহের এবং সফলতার সাথে সোনার হরিণকে দেখার ভীষণ সামনে।

এরপরের সময়টি মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগের বাতাস বয়তে শুরু করলো বাংলাদেশের আকাশে। উদ্যোক্তা তার স্বীয় ব্যবসায়ে তা গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করলেন সেই দায়িত্ব। ইন্টারনেট কানেকশন প্রাপ্তির একটি পাওয়ার হাউজ হলো মোবাইল হাউজ। কর্মী সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ জন। মোবাইল ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নানান পণ্য ও সেবার জন্য অত্যন্ত সমাদৃত হলেন উদ্যোদক্তা ক্রেতাদের কাছে। চলতে থাকে উদ্যোক্তার ব্যবসা। ১৩টি বছরে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা আহসানুস সাইদ।

মোবাইল প্রযুক্তির গতিপথ পরিবর্তন হয়। আসে মোবাইল বিশ্বপ্রযুক্তির নবো প্লাটফর্ম। এন্ড্রয়েড-২০১৩ সালের স্মার্টফোনের বাজারসম্প্রসারণ শুরু হলো বাংলাদেশে। উদ্যোক্তাও ঝাঁপিয়ে পড়েন কঠিন মনোবলে। প্রতিটি ব্র্যান্ডের প্রতিটি মডেল থাকা চাই। কাস্টমার কোন স্মার্টফোন কিনতে এসে যেনো ফিরে না যায়। আজ এমন কোন হ্যান্ডসেট নেই, নেই এমন কোন চলতি ব্র্যান্ড যে মডেল নেই মোবাইল হাউজ বা উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠানে। ব্যবসায়ে ইয়েসম্যানশিপ ধারণ করে উদ্যোক্তা যেনো। ব্যবহারে বাণিজ্যের প্রসার। ব্যবহার দিয়ে একদল কর্মী নিয়ে জয় করছেন হাজার হাজার ক্রেতার মন, আস্তা, বিশ্বাস। ১৬০ স্কয়ারফিট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮০ স্কয়ারফিটে কর্মী সংখ্যাও বেড়ে দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণ।

 

 

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here