উদ্যোক্তা- হাবিব উল্লাহ ডন

মাত্র ৭০ হাজার টাকা দিয়ে কেনা একটি গাড়ী, টগবগে এক তরুণ সেই গাড়ীটি মডিফাই করলেন। মডিফাই করা সেই গাড়ীটি তরুণ চালান। বন্ধু মহলে খুব প্রশংসা পেয়েছেন। একদিন বন্ধুদের আড্ডায় এক বন্ধু বলেন গাড়ীটি কেনার জন্য অন্য এক বন্ধু খুব আগ্রহী। নিজের শখের গাড়ী প্রথমে বেচতে আগ্রহী না হলেও পারে অনেক অনুরোধে বিক্রি করলেন।

মাত্র ৭০ হাজার টাকায় কেনা স্টিরিও সিস্টেম বিলটিন করা মডিফাইড সেই কারটি ৪৫ হাজার টাকা লাভে বিক্রি করে দিলেন। তরুণ আবার নিজের জন্য একটা গাড়ী কিনে মডিফাই করলেন। কিছু দিন পর সেটিও সেল হলো প্রায় ৫০ হাজার টাকা প্রফিটে। প্যাশন টার্ন ইনটু প্রফেশন। তরুণের মনে হতে লাগলো এই সেক্টরটাকেই বেছে নেয়া যায়। মন স্থির করে ফেললেন হবেন একজন গাড়ীর উদ্যোক্তা।

বাবাকে বলে ফকিরাপুলে একটা শো-রুমের জন্য জায়গা নিলেন তিনটি গাড়ী কেনার অর্থও দিলেন বাবা। বন্ধুদের থেকে আসলো আরও ২টি এই মোট ৫টি গাড়ী নিয়ে টগবগে সেই তরুণ দিলেন একটি শো-রুম এবং বাংলাদেশের কার স্টাইলে নিয়ে আসলেন এক অনবদ্য চেঞ্জ। লাক্সারী এবং আনকমন ডিজাইনের কালেকশনে কার ভূবন বদলে দিলেন। হলেন এক সফল উদ্যোক্তা, নিজেকে করলেন আত্মপ্রকাশ।

বড় বন্ধু সার্কেল, আত্মীয়- স্বজনদের মধ্যে খুব সাড়া পরে গেলো। খুব দ্রুত ছড়িয়ে পরলো তরুণ উদ্যোক্তা হাবিব-উল্লাহ ডনের নাম, তার কালেকশনের সুনাম। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত নিজের অটো মোবাইল নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা। উদ্যোক্তা হাবিব-উল্লাহ ডন বলেন, “কাজ থাকুক আর নাই থাকুক ইউ হ্যাভ টু কাম অফিস। টাইম মেইনটেইন করতে হবে, কমিটমেন্ট ঠিক রাখতে হবে”।

নিত্যনতুন গাড়ীর ডিমান্ড, ডেলিভারি সব কিছু নিয়ে ভীষণ স্পিরিটে চললেন। সফলতার সিঁড়ি ভেঙে ১৯৯৫ সালে কাঁকড়াইলে ৩ লক্ষ এডভান্স ২০ লক্ষ দিয়ে ইনটেরিওর করে ১৯টি গাড়ী তোলা হলো। নতুন এক শো-রুমে অটো মিউজিয়াম। আনকমন সব গাড়ী আনা শুরু হলো নেকসাস, ল্যান্ডক্রুজার, নিশানের সব ডিফরেন্ট ডিফরেন্ট মডেল, টয়োটা ক্রাউন মেজেজটা এধরণের অনেক লেভেলের সিডান এবং এসইউভি সব অসাধারণ কালেকশন আসলো অটো মিউজিয়ামে। হু হু করে বিক্রি হতে শুরু হলো। উদ্যোক্তা এগিয়ে যেতে শুরু করলেন।

পাঁচ বছর পর আবার খুললেন গুলশানের অটো মিউজিয়ামে আরও একটি এক্সক্লুসিভ ডিসপ্লে এবং সেলস আউটলেট। এখানে সাজানো হলো ওয়ার্ল্ড রিনাউন্ড সব ব্রান্ড গুলো নিয়ে। মিললো অসাধারণ সাড়া। চার বছর পর ১৯৯৯ সালে উদ্যোক্তা স্পনসর ডিরেক্টর হলেন এক্সিম ব্যাংকের।

যোগাযোগ খাত একটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ খাত। ভারী শিল্প, রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দ থেকে শুরু করে শহুরে জীবনে যারা ফ্যাশনেবল গাড়ীতে অভ্যস্ত তারা সবাই গাড়ী খুঁজে নিতে শুরু করলেন লাইফ স্টাইল এবং নেসেসারি কার কালেকশন্সের হাব অটো মিউজিয়াম থেকে।

আমেরিকা ইংল্যান্ড দুবাই জাপান থেকে নিয়মিত আমদানি করেন গাড়ী গুলো। সাংগঠনিকভাবে ভীষণ গ্রহনযোগ্যতা পেলেন উদ্যোক্তা হাবিব উল্লাহ ডন। তার কর্ম যোগ্যতা দিয়ে ১৯৯৮ সালে ভাইস-প্রেসিডেন্ট হলেন বারভিডার। ২০০৮-৯ এ প্রেসিডেন্ট হলেন। নেতৃত্ব দিলেন এগিয়ে নিলেন সংগঠন।

বারিধারায় উদ্বোধন হলো নতুন ভেঞ্চার হ্যান্ডমেড কার মিটসুকা। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন আলফা হোল্ডিং রিয়াল স্টেট। ২০১৪-১৫ এ বারভিডার প্রেসিডেন্ট হলেন। ২০১৭-১৮ এ সর্বাধিক ভোটে বারভিডার প্রেসিডেন্ট, এফবিসিসিআই। ২০১৫-২০১৭ পরিচালক হলেন। জয়েন্ট সেক্রেটারি হলেন ডাচ বাংলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের। ২০১৭ সালে হলেন, প্রেসিডেন্ট, কমন ওয়েলথ অব ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেট বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স।

উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট কিংয়ের চেয়ারম্যান হিসেবে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসের জিএসএ গ্রহণ করলেন। উদ্যোক্তারা কয়েকজন মিলে বাংলাদেশে এজেন্সি নিয়ে আসলেন অটিস লিফট।

মাত্র ৭০ হাজার টাকা দিয়ে কেনা একটি গাড়ী মডিফিকেইশান এবং ভীষণারী একটি পথ দেখিয়েছেন একজন উদ্যোক্তা। হাবিব উল্লাহ ডন পরিচালনা করছেন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে, একজন সফল উদ্যোক্তা সংগঠক হিসেবে ১০০ কোটি টাকা মূল্য মানের ব্যবসা।

 

 

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here