বন্ধুদের প্রতিদিনের বোরিং আড্ডা থেকে হঠাৎ-ই বের হয়ে এসেছে চমৎকার বিজনেস প্ল্যান। পৃথিবীতে এমন উদাহরণ আছে ভূরি ভূরি। ঠিক তেমনই একটা আড্ডায় থাকতেন জামালপুরের মেয়ে নুরজাহান ইসলাম মনি। যে আড্ডায় বন্ধু-বান্ধব মিলে প্ল্যান করেন তারা পোশাক নিয়ে কাজ করবেন।

কাজও শুরু করলেন তারা। ২০১৬ সালের দিকের কথা, মেয়েদের পোশাক যেমন- বোরকা, আবায়া, হিজাব এই ধরণের পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করলেন। ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে তাদের প্রচারণা চালালেন এবং কাছের বন্ধু বান্ধবের মাঝে সে পণ্যগুলো দেখাতেন এবং বিক্রি করতেন শুরু করলেন। স্বল্প পরিসরে হলেও ব্যবসাটা খুব জমে উঠেছিল। বেচা বিক্রি বেশ ভালই চলছিলো। কিন্তু মনি সে সময় উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেছেন, তাই পড়াশোনার চাপে ব্যবসার থেকে সাময়িক অব্যাহতি নিলেন। সব বন্ধুরাও নিজেদের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, ব্যবসাটা বন্ধ হয়ে যায়।

ছোটবেলা থেকেই মনির পোশাক নিয়ে কাজ করতে, পোশাকের ডিজাইন করতে খুব ভালো লাগতো। খুব ইচ্ছে ছিল ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেটা পূরণ হয়নি। স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ করেছেন মনি। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার ইচ্ছাটা পূরণ করেছেন নিজে নিজেই। ব্যবসা থেকে অব্যাহতি নিলেও সময় পেলেই তিনি এসবের সাথে যুক্ত থাকতেন। নিজেই নিজের পোশাক তৈরি করতেন। পোশাকের ডিজাইন তৈরি করতেন এবং অন্যদেরও বানিয়ে দিতেন।

বিবিএ পড়াকালীন সময়ে তিনি বেশ হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। তিনি অনুভব করেন তার কিছু একটা করা দরকার। পোশাকের বিষয়ে তিনি অনেকটায় জানেন, আবারও শুরু করবেন কিন্তু তারপরেও সাহস পাচ্ছিলেন না। বাবা একদমই সম্মতি দিচ্ছিলেন না। হাতে সেভাবে কোন পুঁজিও ছিলোনা। সে সময় কাছের এক মানুষের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেলেন এবং সাহস যুগিয়ে নতুন ভাবে আবারও কাজ শুরু করলেন।

পর্দাশীল পোশাক পড়তে পছন্দ করেন তাই এগুলোতে কিভাবে নতুনত্ব নিয়ে আসা যায়। পোশাকগুলো কিভাবে বিভিন্ন স্টাইলে তৈরি করা যায় সেই বিষয় নিয়ে তিনি কাজ শুরু করবেন। মাত্র দশ হাজার টাকা নিয়ে ২০১৮ সালে ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করলেন।

পেইজের নাম দিলেন ‘মেডলি’। কয়েকদিনের মধ্যেই একটি মেলা করার সুযোগ পেলেন এবং মেলায় প্রত্যাশার বেশি সাড়া পেলেন। তৈরিকৃত পোশাক সব বিক্রি হয়ে গেল।

উদ্যোক্তা নুরজাহান ইসলাম মনি বলেন, মেলার শেষে অনেক অর্ডার আসতে শুরু করলো এবং সকলের একই প্রশ্ন আমি ডিজাইন গুলো কোথা থেকে করি। ডিজাইনগুলো আমি নিজেই করি কিনা। ডিজাইন গুলো খুব সুন্দর হয়। এই কথাগুলো আমি বারবার পেতে থাকি। মনে প্রচণ্ড রকম সাহস পেলাম। তখন মনে হলো হ্যাঁ আমি পারবো আমার উদ্যোগটি ধরে রাখতে। সে সময় আমি সারারাত জেগে একাই ডিজাইনগুলো করে সকালে সেগুলো বিভিন্ন দর্জির কাছে নিয়ে কমপ্লিট করতাম। তাতে আমার অনেক সময় নষ্ট হতো এবং ভোগান্তি হত। খুব প্রয়োজন অনুভব করতে শুরু করলাম নিজস্ব একটা ফ্যাক্টরি যেখানে শুধু আমার একার কাজ হবে”।

হঠাৎ মনির পরিচয় হলো এক বড় আপুর সাথে তিনি তার পণ্য দেখে খুব পছন্দ করে বলেন চাইলে তার শোরুমে পণ্য রাখতে পারবে। পরবর্তীতে মনি সেই আপুর সাথে মোহাম্মদপুরে একটি শোরুম ওপেন করলেন। খুব ভাল সাড়াও পেলেন। মনি বলেন, কেনাবেচা ভালো হওয়ায় হাতে টাকা ছিল তাই ছোট্ট পরিসরে পাঁচটি মেশিন কিনে সাত জন কর্মী নিয়ে শুরু করেদিলাম নিজস্ব ফ্যাক্টরি তৈরির কাজ। সব মিলিয়ে ভালোই চলছে তবে সাম্প্রতিক করোনার জন্য কিছুটা পিছিয়ে গেছে তবে বন্ধ হয়ে যায়নি স্বল্প পরিসরে কাজ চলছে এর মাঝে বিবিএ কমপ্লিট করেছি, এমবিএ শুরু করতে যাচ্ছি”।

উদ্যোক্তার পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান তিনি এবং ভবিষ্যতে তার ইচ্ছা তার প্রতিষ্ঠান একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হবে। বড় একটি গার্মেন্টসের মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। তার মতে পছন্দের বিষয় নিয়ে কাজ করলে সফলতা পাওয়া যায়। আর স্বপ্নের দৌড় গোড়ায় পৌঁছাতে সকলের ভালোবাসা ও দোয়া অবশ্যই প্রয়োজন বলে মনে করেন তরুণ এ উদ্যোক্তা নুরজাহান ইসলাম মনি।

বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here