বিসিএস এ লিখিত পরীক্ষায় ফেল, হয়ে গেলেন কেক এর সফল উদ্যোক্তা

0
উদ্যোক্তা রোজিনা সুলতানা লাবনী

বিসিএস এখন অনেকের জন্যই স্বপ্নের ক্যারিয়ার। কিন্তু যদি না হতে পারেন, তাহলে কি সব শেষ? এটা শেষ না হয়ে উজ্জ্বল নতুন এক ক্যারিয়ারের শুরুও হতে পারে। এভাবেই বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে ভেঙে পড়া ভাগ্নিকে সাহস দিয়েছিলেন শুভাকাঙ্খী এক মামা। ভেঙে না পড়ে ভাগ্নি রোজিনা সুলতানা লাবনীকে উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। চ্যানেল আইতে প্রচারিত ‘উদ্যোক্তা’ অনুষ্ঠানটি দেখার জন্য ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে দিয়ে আসেন। এরপর থেকে প্রতিটি পর্ব ফলো করতেন লাবনী। উদ্যোক্তা জীবনে প্রবেশ, বাধা, সেগুলোকে জয় করে সফলতা স্পর্শ, কত-কত লোকের কর্মসংস্থান, এসব বিষয়ে ভীষণ অনুপ্রাণিত হন লাবনী। সিদ্ধান্ত নেন তিনিও উদ্যোক্তা হবেন।

ইউটিউব দেখে বাসায় অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন ডিজাইনের কেক বানাতেন তিনি। সকলে প্রশংসাও করতেন। তাই তিনি ভাবলেন, আমি যেহেতু কেক বানাতে পারি এবং বর্তমানে এর চাহিদাও ব্যাপক; সুতরাং কেক নিয়েই কাজ শুরু করি। এভাবেই ২০২১ এর অক্টোবরের ৩১ তারিখে স্বামীর দেওয়া ৮ হাজার টাকা নিয়ে ‘ইরাহা কেক এন বেক’ এর যাত্রা এবং রোজিনা সুলতানা লাবনীর উদ্যোক্তা জীবনের শুরু। কিছুদিনের মধ্যেই ঢাকা থেকে রাজশাহীতে প্রশিক্ষণ দিতে আসা এক প্রশিক্ষকের কাছ থেকে কেক তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে কেকের হাত আরো পাকাপোক্ত করেন তিনি।

বার্গার, হ্যাট, হার্ট– কোন থিমে কেক বা চকোলেট চান? পছন্দের সকল ডিজাইন নিশ্চিত করছে ইরাহা কেক এন বেক। প্রতিষ্ঠানটির এক বছরের মধ্যেই একেকজন ক্রেতা পাঁচ থেকে ছয়বার কেক নিয়েছেন উদ্যোক্তা রোজিনা সুলতানা লাবনীর প্রতিষ্ঠান থেকে। এমন সফলতায় লাবনীর নতুন নাম ‘কেক কুইন’ হওয়া যেন সময়ের ব্যাপার। কেকের পাশাপাশি এখন যুক্ত হয়েছে কাস্টোমাইজড চকোলেট, ড্রাই ফ্রুটস, হানি নাটস ইত্যাদি।

কেক এবং চকোলেটের পাশাপাশি এই উদ্যোক্তার ড্রাই ফ্রুটসও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এক সপ্তাহে ২০ থেকে ২৫ কেজি অর্ডার লেগেই থাকছে বলে জানান তিনি। এই ড্রাই ফ্রুটসগুলোর স্থানীয় দুয়েকটি উপকরণ ছাড়া বেশিরভাগ ফ্রুটস বাইরে থেকে আনা হচ্ছে।

শুধু রাজশাহী নগরী নয়, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও ব্যাপক জনপ্রিয় ‘ইরাহা কেক এন বেক’ এর ড্রাইফ্রুটস, চকোলেট। রাজশাহীর পরে ময়মনসিংহে লাবনীর বেশিরভাগ ক্রেতা রয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়াও কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা, ঢাকা, সিলেট, গোপালগঞ্জ, সিরাজগঞ্জসহ দেশের অসংখ্য জেলায় এই উদ্যোক্তার পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে।

‘ইরাহা কেক এন বেক’-এ লাবনীর পাশাপাশি সহউদ্যোক্তা হিসেবে রয়েছেন তার ছোট ভাই মোঃ তারেক ইশতিয়াক। তিনি মার্কেটিং সেক্টরসহ ডিজিটালি সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ এর ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তিনি। সেখানে ‘ইরাহা কেক এন বেক’ এর জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে মূলত তারেক ইশতিয়াকের হাত ধরেই।

দৈনিক ১২ থেকে ১৫ ঘন্টা, প্রয়োজনে আরও বেশি নিজ উদ্যোগে সময় দেন লাবনী। উদ্যোক্তা বার্তাকে তিনি বলেন, “শুধু নিজে যেটা পারি সেটাই বার বার করবো, বা আমাদের দেশের প্রচলিত স্বাদে, শেপে খাবারগুলো তৈরি করতে থাকলে আমার কাজে কোন ভিন্নতা আসবে না, নতুনত্ব যুক্ত করতে পারবো না। সবসময় আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি নতুন কিছু করার। আমাদের দেশের পাশাপাশি অন্যান্য দেশে এই খাবারটি কিভাবে তৈরি হচ্ছে, কীভাবে করলে বেশি সুস্বাদু হবে, এটা কতোটা স্বাস্থ্যসম্মত– এসব বিষয় নিয়ে আমি নিয়মিত পড়াশোনা করছি।”

আগামীতে রাজশাহীতে তার তৈরি খাবার নিয়ে ফুড ইন্ডাস্ট্রি গড়তে চান এই উদ্যোক্তা। এছাড়াও তাই ড্রাই ফ্রুটস যে পরিমাণ সাড়া ফেলেছে, এই মান ধরে রেখে আরও বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে চান। চকোলেট, ড্রাই ফ্রুটস এর মতো খাবারগুলো দেশের বাইরেও পৌঁছে দিতে চান।

লাবনীর জন্মস্থান রাজশাহীর বাগমারাতে হলেও বাবার চাকরির সুবাদে নওগাঁতে শৈশব কৈশোর কেটেছে তার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন তিনি। মামার অনুপ্রেরণায় উদ্যোক্তা জীবনে এসে প্রমাণ করেছেন উদ্যোক্তা হয়ে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়া যায়, সৃষ্টি করা যায় অনেকের কর্মসংস্থান।

তামান্না ইমাম,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here