৩০০ টাকা পুঁজিতে শুরু করে এখন মাসে লাখ টাকার ব্যবসা

0
উদ্যোক্তা শাহিনুর রহমান সোহান

তিনশ টাকা দিয়ে শুরু করা ব্যবসা মাত্র দুই বছরের মধ্যে মাসে লাখ টাকার ব্যবসায় পরিণত করেছেন তরুণ উদ্যোক্তা শাহিনুর রহমান সোহান। তার উদ্যোগকে দেশসেরা ব্র্যান্ডে পরিণত করার পাশাপাশি মানুষের সেবামূলক কাজে তিনি নিজেকে নিয়োজিত করতে চান।

করোনা মহামারীর মধ্যে চাপ্রেমী মানুষের জন্য ‘এস আর টি হাউজ’ নামে একটি চা পাতার উদ্যোগ শুরু করেন সোহান । বর্তমানে প্রতি মাসে এক লাখ টাকার মতো সেল হয় তার।

উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প জানিয়ে উদ্যোক্তা বার্তাকে তিনি বলেন: আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতাম। ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতিতে আমার অফিস বন্ধ হয়ে যায়। আমি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের দায়িত্বশীল পদে কাজ করতাম, সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের সহায়তা এবং মুমূর্ষু রোগীদের রক্তদান করতাম। আর্থিক অবস্থা এতোটা খারাপ হয়ে যায় যে সব ধরনের সামাজিক সংগঠনের বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিতে বাধ্য হই। কোন উপায় না পেয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যাই। তখন আমার ভাইয়ের একার ইনকাম দিয়ে পরিবার চলত। এতোটাই খারাপ অবস্থায় ছিলাম যে হাত খরচের টাকাটাও থাকতো না। তাই সবসময় নিজের রুমে শুয়ে থাকতাম। এতোটাই ডিপ্রেশনে ছিলাম যে কী করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না, আবার কিছু করার মতো টাকাও ছিল না।

“তারপর একদিন ভাবলাম এভাবে চলা যাবে না। কিছু একটা করতে হবে। হঠাৎ একদিন ভাইয়ের কাছ থেকে শুনতে পেলাম ভাইয়ের বন্ধু ফয়সাল ভাইয়ের চা’য়ের বিজনেস আছে। ফোন নাম্বার নিয়ে চলে গেলাম ফয়সাল ভাইয়ের সাথে দেখা করতে। তার দোকানে গিয়ে নিজের অবস্থা বললাম। সবকিছু শোনার পর তিনি আমাকে বললেন, ‘তুমি আমার বন্ধুর ভাই, মানে আমারও ভাই। আমার বিজনেস যতোদিন পর্যন্ত আছে, তুমি আমার কাছ থেকে সহযোগিতা পাবে। তুমি বিজনেস শুরু করো। আমার কাছ থেকে পণ্য নিয়ে বিক্রি করে আমাকে টাকা দিও।’ আমার বড় চাচার ছেলে নোমান ভাই চায়ের বিজনেস লাইসেন্স করার জন্য আমাকে কিছু টাকা দেন। সবার সহযোগিতায় তখন আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরু,” বলে জানালেন সোহান।

তিনি বলেন: ২০২১ সালের মে মাসের পর থেকে আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে সব ধরনের অনলাইন সাইটে আমার প্রতিষ্ঠান ‘এস আর টি হাউজ’ এর বিজনেস অ্যাকাউন্ট আছে। আমি চিরকাল সেই মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞ যারা আমার খারাপ সময়ে আমার পাশে ছিলেন।

উদ্যোক্তা সোহান প্রথমে ১০ কেজি চা পাতা বাসায় নিয়ে অনলাইনের বিভিন্ন উদ্যোক্তা গ্রুপে সেল পোস্ট দেওয়া শুরু করেন। ভালেই রেসপনস পেতে শুরু করেন। মাসখানেক পর নিজের একটা দোকান আর গোডাউন নিয়ে এলাকার মানুষদের কাছেও চা পাতা বিক্রি শুরু করেন তিনি। আস্তে আস্তে বিক্রি বাড়তে শুরু করে। কিছুদিনের মধ্যে মোটামুটি ভালো একটা অবস্থানে চলে আসেন। সেসঙ্গে পাইকারিভাবেও চা পাতা বিক্রি শুরু করেন।

বর্তমানে সোহান অনলাইনে বিজনেস করে এমন অসংখ্য উদ্যোক্তার কাছে পাইকারি দামে চা পাতা বিক্রি করছেন। তার জেলা হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে হোম ডেলিভারির মাধ্যমেও চা পাতা বিক্রি করে থাকেন তিনি।

উদ্যোক্তা শাহিনুর রহমান সোহান জানান, বাংলাদেশ টি বোর্ড অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি চা পাতা সংগ্রহ করেন। বিভিন্ন ধরনের চা পাতা ও গ্রিন টি নিজে লিকার টেষ্ট করে তারপরে ক্রেতার জন্য বাছাই করেন।

“তিনশ টাকা পুঁজিতে শুরু হওয়া উদ্যোগে এখন প্রতি মাসে এক লাখের উপরে সেল হয়,” উল্লেখ করে তিনি বলেন: দেশের বাইরেও আমার চা যাচ্ছে। অনেক প্রবাসী ক্রেতা আছেন যারা আমার কাছ থেকে চা পাতা নিয়ে থাকেন। এ পর্যন্ত সৌদি আরব, দুবাই, আমেরিকা, লন্ডন, কানাডা, কাতারসহ আরও কয়েকটি দেশে চা পাতা পাঠিয়েছি।

আক্ষেপের সুরে শাহিনুর রহমান বলেন, ব্যবসার শুরুতে অনেক মানুষই পেছন থেকে অনেক কিছু বলে বেড়াতো। কখনোই কারও কথা কানে নেইনি। মানুষের বহু কথা শুনলেও পারিবারিক সাপোর্ট সবসময়ই পেয়েছি। 

তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সোহান বলেন: একটা পণ্য নিয়ে কাজ করতে চাইলে তার কতোতটুকু চাহিদা আছে সেটা আগে বুঝে নিতে হবে। তারপর চাহিদা বেশি এমন পণ্য নির্বাচন করুন। আপনি যে পণ্য নিয়ে কাজ করছেন, ঠিক সেই পণ্য নিয়ে অন্য কেউ কাজ করলে তার সাথে রেষারেষিতে যাবেন না। গ্রাহকের চাহিদা সম্পর্কে অনুসন্ধান করে গ্রাহকের সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করুন। দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিরবচ্ছিন্ন পরিকল্পনা করুন। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করলে আপনি সফল হবেন।

ভবিষ্যতে তিনি ’এস আর টি হাউজ’-কে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মানুষের কাছে নিজের ব্র্যান্ড হিসেবে তুলে ধরতে চান।

আফসানা অভি,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here