উদ্যোক্তা- সন্ধ্যা রাণী সূত্রধর

পনেরো বছর বয়স যখন, তখন থেকেই লাল, নীল, হলুদ সুতোর সাথে ভাব সন্ধ্যা রাণী সূত্রধরের। মা বলতেন, “পড় পড়! পড়াশুনা কর, বিদ্যা নে!” পড়াশোনায় মন নেই বলে মায়ের হাতে মারও জুটেছে কপালে। সন্ধ্যা রাণীর একটাই কথা “মাগো! পড়তে ভাল্লাগেনা। সুইসুতার কামের বিদ্যা তো নিছি। এইডাই কম কিসে?”

ছোটবেলায় মা এবং নানীর কাছ থেকে পাখা বানানো শেখা হয়েছিল। বিয়ে হয়ে যায় ১৯৭৪সালে, সন্ধ্যা রাণীর ভাষায় সংগ্রামের ৩বৎসর পর। সেসময় শ্বাশুড়ি মায়ের অনুপ্রেরণায় মায়ের বাড়ি থেকে শিখে আসা বিদ্যাকে কাজে লাগান সন্ধ্যারাণী। ঘরের কাজের অবসরে অল্পস্বল্প করে রোজ রোজ পাখা বানানো। বাহারী রঙে, বাহারী সাজে ছোট বড় কতশত পাখার কারুকাজ। সবগুলোর ডিজাইন সন্ধ্যারাণীর নিজের করা। কোনোটা কেবলই নকশা, কোনোটা আবার ছবির মতো গল্পবলা ফোড়ের আদল।

কাজের সুবাদে এখানে সেখানে যাবার ডাক আসে, বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ হয়। সন্ধ্যারাণীর সহযোগিতায় সবসময় পাশে ছিল তার পরিবার। শাশুড়ী মা সেসব মেলায় অংশ নিতে অনুপ্রানিত করেছেন সবসময়। এমনও হয়েছে মেলার স্টল বরাদ্দের অর্থটির যোগান দিয়েছেন সন্ধ্যারাণীর শ্বশুরমশাই। কথায় কথায় সন্ধ্যারাণী জানান নিজেকে বউ মনে করতাম শুধু। ঢাকা শহরে প্রশিক্ষনের সুযোগ এলে বাড়িতে সবাইকে তিনি বলেছিলেন, “আমি বউ মানুষ, আমি কেমনে ঢাহা যামু?” সন্ধ্যারাণীর শ্বাশুড়ি বউমাকে সাথে নিয়ে সবকিছুর ব্যবস্থা করেছেন। সেদিন এমন সুযোগ পরিবার দিয়েছিল বলেই আজ নিজেকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন বলে তার বিশ্বাস।

আশেপাশের সকলে সন্ধ্যারাণীকে শিল্পী হিসেবে অভিহিত করেন। কিন্তু নিজেকে তিনি শিল্পী বলতে নারাজ। তার মতে তিনি উদ্যোমী এক কর্মী উদ্যোক্তা। অন্যেরা তার কাজের মূল্যায়ন করলেই তিনি সার্থক। দেশকে ভালোবেসে দেশের জন্য, দেশীয় ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পপণ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে চান সন্ধ্যা রাণী।

এই ঐতিহ্যবাহী পাখা বানানোর কাজটি করে পরিবার পরিজন নিয়ে কেমন আছেন সন্ধ্যা রাণী? প্রশ্নের উত্তরে সন্ধ্যার মুখে অম্লান হাসি ফোটে। স্বামী আশুতু চন্দ্র সূত্রধরের কাঠশিল্প আর তার এই হাতপাখার শিল্প নিয়ে যা রোজগার হয় তা নিয়ে ভালো আছেন সন্ধ্যা রাণী। তিন মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে, নিজেরা ভালোভাবে খেয়েপড়ে সানন্দে জীবন যাপন করছেন এই চরম তৃপ্তির। আর যেন কিছুই চাওয়ার নেই তাদের। ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পের সাথে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও আজ যুক্ত। সেইসাথে কর্মী হিসেবে তিনি নিয়োগ দিয়েছেন গ্রামের শতশত মহিলাকে। সন্ধ্যা রাণীর তৈরী হাতপাখা বিক্রয় হচ্ছে দেশব্যাপী। এছাড়াও রাজকীয় ডিজাইনে করা সব হাতপাখাগুলো দেশ ছাড়িয়ে রপ্তানী হচ্ছে বিদেশেও।

 

 

সাদিয়া সূচনা
ছবি- বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here