পান বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী লোকখাদ্য। কেবল স্বভাব হিসেবেই নয়, ঐতিহ্যগতভাবে সামাজিক রীতি, ভদ্রতা এবং আচার-আচরণের অংশ হিসেবেও পানের ব্যবহার চলে আসছে। এক সময় বিয়ে, সামাজিক উৎসব, পূজা ও পুণ্যাহ ইত্যাদি অনুষ্ঠানাদিতে পান ছিল অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রাচীন অভিজাত জনগোষ্ঠীর মাঝে পান তৈরি এবং তা সুন্দরভাবে পানদানিতে সাজানো লোকজ শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেত।
এই পান নিয়ে কাজ করছেন উদ্যোক্তা রনি। এরআগে তিনি তৈরি পোশাক ব্যাবসার সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু নানাবিধ সমস্যার কারণে এই ব্যাবসা তাকে ছাড়তে হয়। আগের ব্যবসা ছাড়ার পর তিনি নতুন কিছু করার কথা চিন্তা করছিলেন।
এদিকে তার শ্বশুর বাড়ির লোকেদের আদি ব্যাবসা ছিলো পানের ব্যবসা। তার শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়রা তাকে পানের ব্যাবসা করার পরামর্শ দিলে তিনি তা গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর তিনি ঢাকার উত্তরার কাবাব ফ্যাক্টরিতে বেশ কিছুদিন বিভিন্নরকমের পান তৈরির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
২০০৯ সালে মাত্র ২০ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে তিনি ‘সাতপরী মিষ্টি পান’ নামে নিজের প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। পান তৈরিতে তিনি সুপারি, জর্দা, খয়ের, গণ্ডি, মৌরি, খেজুর, জেলি, মোরব্বাসহ ১৫০ ধরণের মসলা ব্যবহার করে থাকেন। এসব মসলার বেশিরভাগই দেশের বাইরে থেকে আসে।
তিনি যে সমস্ত পান বিক্রি করে থাকেন তার মধ্যে পানে মুসকান, পানে লাহরী, পানে বেনারসী, স্বাদে খুসবু, শেখায়েদাবাদ, পানে দিলখুস, পানে করাচী, ফায়ার পান, জামাইবৌ পান, পানে লখনৌ, মুঘল শাহী পান, পানে দিল্লি, সাতপরী স্পেশাল পান অন্যতম। প্রতিটি পান বিক্রি করেন প্রকারভেদে ৬ টাকা ১৫০ টাকা পর্যন্ত। এখন প্রতিমাসে আয় করছেন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
সাধারণত বিয়ের অনুষ্ঠানে তার পান বেশি বিক্রি হয়। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি পান সরবরাহ করে থাকেন। ‘সাতপরী মিষ্টি পান’ নামে উদ্যোক্তার একটি ফেসবুক পেইজ আছে। ঢাকা বিভাগের সবগুলো জেলাতে তিনি তার পণ্য বিক্রি করে থাকেন। উদ্যোক্তা রনির প্রতিষ্ঠানে তিনি সহ তিন জন কর্মরত আছেন।
বরিশালের ঝালকাঠিতে জন্ম নেওয়া উদ্যোক্তা রনি সাইলাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে শিক্ষা জীবনের ইতি টানেন। কিন্তু প্রচণ্ড অধ্যাবসায় ও কর্মদক্ষতার জোরে নিজের উদ্যোগকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি।
সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা, খুলনা