ডিগ্রী পরীক্ষা পাশ করবার পর বিসিকের একটা ট্রেনিং নিয়েছেন এমনই একজনার কাছ থেকে পাট দিয়ে তৈরি ব্যাগ বানানো শিখলেন পারভীন আক্তার। পাট এবং পাটজাত পণ্য তৈরি করে সেগুলো থেকে ছোট ছোট করে কাজ তৈরি করা শুরু করলেন। ২০০১ সালে মাস্টার্স করবার জন্য জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হলেন সোসিওলজিতে।

নিজের তৈরি কোন পণ্য তখনও বিক্রি করতে পারেননি বা বাজারে ছাড়েননি। সদস্য হলেন ওয়েভ এর। ১০০ স্কয়ার ফিটে নিজের একটি ফ্যাক্টরি করলেন গোপীবাগে। তৈরি করলেন ৭টি পণ্য। প্রথমবার জমা দিলেন বাংলাদেশের বিখ্যাত ফ্যাশন হাউজ আড়ং এ। নিজে কাজ করবার দৃঢ় মনোবল থাকলে সেখানে জয়ের আলো দেখা দেয়। পাটের তৈরি ৭ টি স্যাম্পলের মধ্যে একটি আড়ং অর্ডার দিলো। নতুন উদ্যোক্তা, নতুন ছোট্ট ফ্যাক্টরিতে খুশির বন্যা বয়ে যায়। উদ্যোক্তার কর্মে ১৫ হাজার টাকা বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করলো।
এমন সময় পারভীন আক্তার মনে করলেন নিজের শেখার ভুবনে অনেক শিক্ষা নিতে হবে। নিজে আবারও গিয়ে কাজের পাশাপাশি ট্রেনিং নিতে ভর্তি হলেন বিসিকে। ২ বছর ৭টি বিশেষ কোর্স। পাট, বাঁশ, বেত, প্যাকেজিং, ব্লক প্রিন্ট, স্কিন প্রিন্ট, বাটিক এবং কাঠের কাজ উদ্যোক্তা সম্পন্ন করলেন ট্রেনিং সুচারু রূপে উদ্যোক্তা পারভীন আক্তার।
২০০২ সাল, ১০০ স্কয়ার ফিট থেকে ১ হাজার স্কয়ার ফিটে নতুন কারখানা স্থাপন করলেন, ৫ জন নতুন কর্মী যোগ হলো পারভীন হ্যান্ডিক্রাফটসে। ২০০৪ সাল, নিজের কঠোর পরিশ্রম, উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি এবং নজরকাড়া টেকসই যুগোপযোগী ডিজাইনে পাটের তৈরি পণ্য নির্মাণ করে আড়ং এর মত দেশের সর্ববৃহৎ ফ্যাশন হাউজ জায়ান্ট তাদের কাছে প্রথম সাঁরির একজন জুট প্রোডাক্ট সাপ্লাইয়ার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন উদ্যোক্তা পারভীন আক্তার।
২০০৫ সালে পাট দিয়ে তৈরি ব্যাগ, কুশন কাভার, কিচেন সামগ্রী, ফ্লোরম্যাট, ওয়ালম্যাট, ল্যাম্পশেট এবং জুয়েলারি ও জুয়েলারি বক্স নির্মাণে নিজের দক্ষতা সময় নিয়ন্ত্রণ, মান নিয়ন্ত্রণে নিজেকে নিয়ে এক দারুণ জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হলেন উদ্যোক্তা আক্তার। যেখানে কিনা উদ্যোক্তা সুনাম শুধু বেড়েই চললো।
২০০৮ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন স্বামী মির্জা মামুন সরকারের সাথে। স্বামী সহ-উদ্যোক্তা হয়ে পাশে দাঁড়ালেন দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে। নতুন অনুপ্রেরণায় এগিয়ে চলেন উদ্যোক্তা পারভীন আক্তার। কাজ চলতে থাকলো দুর্দান্ত গতিতে।
২০১১ সাল। এবারে উদ্যোক্তা বাংলাদেশের বড় বড় সব ফ্যাশন হাউজ এবং ব্র্যান্ড আউটলেট গুলোতে তার উৎপাদিত পণ্য দিতে শুরু করলেন। ইনফিনিটি, অটবি, বাংলার মেলা, বাংলাদেশের বিজ জায়েন্ট জায়েন্ট ব্র্যান্ড এবং বিদেশে জাপান, ইউনাইটেড কিংডম, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায়।
কর্মী বেড়ে দাড়িয়েছে ততদিনে ৩০ জন। কর্মীদের নিজে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মীবাহিনীর কাজকে করেছেন স্টেট অব আর্ট টেকনোলজিতে উদ্যোক্তা পারভীন আক্তার। ৩০টি পরিবারকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলেছেন কর্মের বাহিনী হিসেবে। প্রোডাক্ট লাইনে পারভীন আক্তার আজ তৈরি করছেন দুইশ এর উপর বেশি প্রোডাক্ট। বাংলাদেশের সোনালী আঁশ পাট দিয়ে। ১০০ স্কয়ার ফিটে যাত্রা শুরু আজ তা ৪ হাজার স্কয়ার ফিট। একজন কর্মী ছিলো পাশে আজ কর্মী সংখ্যা ৬০ জন। ৫ হাজার টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করে আজ বাংলাদেশ এবং বিশ্ব মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি টাকা মূল্যমানের ব্যবসা পরিচালনা করছেন সফল নারী উদ্যোক্তা পারভীন আক্তার।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা