ফাহিম উদ্দিন শুভ

আপনি কি জাদুর শহর ঢাকাতে বসবাস করেন? কখনও কি ভেবে দেখেছেন আপনার এই শহরটা যদি হত উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, কোথাও কোন ময়লা নেই তাহলে কেমন হতো? নিশ্চয়ই একবার হলেও ভেবেছেন অথবা রোজ-ই ভাবেন কিন্তু সমাধানের কোনো পথ নেই ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবকিছু মেনে নেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেন! ঠিক এমনই চেষ্টা ভাঙার চিন্তায় বুদ হয়ে থাকতেন ফাহিম উদ্দিন। অবশেষে তিনি ভেঙেছেন। এই সমস্যাগুলো সমাধানের পথও খুঁজে পেয়েছেন। এখন তিনি কাজ করছেন এমন একটি মহৎ উদ্যোগ নিয়ে। কথা বলছি ‘গার্বেজম্যান’ এর সামাজিক উদ্যোক্তা ফাহিম উদ্দিন শুভ কে নিয়ে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্কিটেকচারে পড়াশোনা শেষে ফাহিম আর্কিটেক্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। কাজ শুরুর পর তিনি উপলব্ধি করেন পুথিগত বিদ্যা আর বাস্তবে তার প্রয়োগের পার্থক্য। তিনি মনে করেন একজন আর্কিটেক্ট যে শুধু শহরের আর ইমারতের নকশা প্রণয়ন করবেন তা নয় বরং শহরটার সাথে সম্পর্কিত সকল সমস্যা নিরসনের দায়িত্বও তাদের ওপর বর্তায়। সমস্যাগুলোর তালিকায় প্রথমেই ফাহিমের দৃষ্টিগোচর হয় শহরের বর্জ্য অব্যবস্থাপনা নিয়ে। সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় সামাজিক এই উদ্যোগ; শহর পরিচ্ছন্নতায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। আর তাই সেই ইচ্ছেকে দৃঢ় ভাবে নিয়ে নিজেই কাজ শুরু করলেন। কারণ ‘ Think like a king but work like a slave ‘ এই কথাটা তিনি ধারণ করতেন।

শুরুটা হয় নিজ বাসা থেকে। বাসার অন্যান্য ফ্ল্যাটের ১২ টি পরিবারের সকল বর্জ্য সংগ্রহের জন্য ড্রাম কিনে দেন এবং সেই বর্জ্যগুলো নিয়ে তিনি অনেক গবেষণা করেন। কি ভাবে এটাকে রিসাইকেল করে আবারও ব্যবহার উপযোগী করা যায়। তাই নিজেই ছাদে বিশেষ ভাবে প্রক্রিয়াজাত করে সেই বর্জ্যগুলো জৈব সারে পরিণত করতে সক্ষম হন প্রায় ৬ মাস পরে। সেগুলো বিভিন্ন দোকান এবং সৌখিন বাগান মালিকের কাছে বিক্রিও করেন এবং প্লাস্টিকের আবর্জনাগুলো আলাদা করে রিসাইকেলিং এর মাধ্যমে কিউব করে প্লাস্টিক ফ্যাক্টরিতে বিক্রি করেন।

শুরুতে অল্প পরিসরে থাকলেও কিছু দিনের মধ্যে কাজের গতি বাড়িয়ে দিলেন। বিভিন্ন মাধ্যমে তারা বর্জ্য সংগ্রহ করতে থাকলেন যেমন- খাবারের হোটেল, বাসা, অফিস ইত্যাদি। কাজের পরিধি বাড়ায় একে একে যুক্ত হলো আরও অনেক সদস্য। এখন প্রায় ১৫ জন সদস্য আছেন সামাজিক উদ্যোক্তা ফাহিমের এই উদ্যোগে।
শুধু তাই নয় বর্জ্য সংগ্রহের জন্য একটি অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট করেছেন যেটার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি আপনার বাসা, রেস্টুরেন্ট কিংবা অফিসের আবর্জনা বিক্রি করতে পারবেন।

প্রতিদিন গড়ে ঢাকা শহরের ল্যান্ড ফিল্ডে ৫ হাজার টন বর্জ্য জমা হয়। যার ৭০ ভাগ অর্গানিক এবং ৩০ ভাগ ইনঅর্গানিক। সামাজিক এই উদ্যোগ গ্রহণের কয়েক মাসের মধ্যে ফাহিম ৬ টনের ও অধিক বর্জ্য রিসাইকেলিং করতে সক্ষম হয়েছে। যেখান থেকে ২ হাজার কেজি উন্নত মানের কম্পোস্ট সার উৎপাদন হয়েছে। উদ্যোক্তা ফাহিম বলেন, ‘ ঢাকার প্রতিদিনের বর্জের প্রায় ০.০২ ভাগ আমরা রিসাইকেলিং করে উন্নত মানের পণ্যে রূপ দিতে পারছি যেটার অনুপাত খুব শীঘ্রই বাড়বে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি ১ কেজি সার কেনেন তাহলে ৩ কেজি আবর্জনা ল্যান্ড ফিল্ডে পতিত হওয়া থেকে বাঁচালেন’।

তরুণদের বলেন, সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য নয় বরং সত্যিকার অর্থে আমাদের শিক্ষিত হতে হবে। আমাদের দেশে অনেক সমস্যা আছে সেগুলো নিয়ে আমাদেরকেই কাজ করতে হবে অন্য কেউ এসে করে দেবে সেই আশায় বসে থাকলে চলবে না। সত্যিকার অর্থেই অনেক তরুণ আছে তারা পাল্টে দিতে পারে এই শহরটাকে। শহরটাকে পরিষ্কার রাখি, সবুজ রাখি। একটা গাছ রোপণ করি, রাস্তা আবর্জনা মুক্ত রাখি, ফুট ওভার ব্রিজ ব্যবহার করি। আশা করি ভালো কিছুই হবে। I believe, Nothing is a waste, either it’s a lesson or a blessing’.

স্টার্টআপ বাংলাদেশসহ স্টার্টআপ উইক্যান ঢাকায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেন, আইসিটি ডিভিশন স্টার্টআপ বাংলাদেশ আইডিয়া প্রজেক্ট এ বিজয়ী হন। এছাড়াও নেদারল্যান্ড এর ডেলফেট ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির সাথে এক হয়ে কাজ করছেন, তারা প্লাস্টিক রিসাইকেলের যন্ত্রপাতি এবং পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করছেন ‘গার্বেজম্যান’ কে।

সামাজিক এই উদ্যোগগুলোকে সফল করার জন্য সম্প্রতি ওয়াই গ্যাপের (Y-gap) এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। সারা দেশ থেকে অংশগ্রহণ করা হাজার হাজার প্রতিযোগিদের মধ্যে সামাজিক উদ্যোক্তা ফাহিম উদ্দিন শুভ প্রথম ১২ তে স্থান করে নিয়েছেন।

ভবিষ্যতে তার ইচ্ছে, সামাজিক এই উদ্যোগ ফর্মাল একটি ব্যবসায়ে রূপ দেয়া, যেখানে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢাকা হবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আর দেশ উন্নয়নে কাজ করবে শত শত স্মার্ট তরুণ।

 

বিপ্লব আহসান
স্পেশাল করেস্পন্ডেন্ট ,উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here