নিলুফা ইয়াসমিনের এক থেকে তিন

0
উদ্যোক্তা নিলুফা ইয়াসমিনের

২০০১ সালে ৩০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেছিলেন নিলুফা ইয়াসমিন। ‘এসএন টেইলার্স’ নামের ছোট প্রতিষ্ঠানটির সবটা নিজেই সামলাতেন। ২০০৪ সালে ‘এসএন টেইলার্স’ নাম পরিবর্তন করে হয় ‘এসএন ফ্যাশন’। ছোট টেইলার্স থেকে ফ্যাশন হাউসে পরিণত হওয়া প্রতিষ্ঠানটি পাইকারিতে সারা দেশে ব্লক, বাটিক এবং হাতের কাজের পোশাক সরবরাহ করে থাকে।

পাইকারিতে পণ্য সরবরাহ করার এক পর্যায়ে উদ্যোক্তা নিলুফা ইয়াসমিন উপলব্ধি করতে থাকেন, এভাবে দেশব্যাপী তার প্রতিষ্ঠানের পণ্য পৌঁছাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের নাম ক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন আরো একটি প্রতিষ্ঠান গড়বেন যেখানে খুচরা দামে পণ্য বিক্রয় করবেন। লক্ষ্য ছিলো এভাবে তার পণ্যের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের নামও ছড়িয়ে পড়বে। ২০২০ সালে তাই রাজশাহীর গোরহাঙ্গা এলাকায় থিম ওমর প্লাজায় ‘নীলাঞ্জনা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সূচনা করেন এই উদ্যোক্তা। সেখানে শাড়ি, কুর্তি, পাঞ্জাবি, গহনা, নকশিকাঁথা, ফুলদানি, শো-পিসসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রয়েছে। ‘নীলাঞ্জনা’ নামে সামাজিক পাতায় পেজও রয়েছে উদ্যোক্তার। সেখান থেকেও ব্যাপক সাড়া পান বলে জানান নিলুফা ইয়াসমিন।

রেশম নগরী রাজশাহীর এই কন্যা ‘নীলাঞ্জনা’ প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পর ভাবতে থাকেন ‘সিল্কের নগরে আমার জন্ম আর সিল্ক নিয়ে কাজ করবো না তা কি করে হয়!’ যেই ভাবনা সেই কাজ। বেশ কিছু জায়গায় গিয়ে সিল্ক নিয়ে বিশদে জেনে রাজশাহীর বিসিক শিল্পনগরীতে ‘নীলাঞ্জনা সিল্ক’ নামে আরো একটি প্রতিষ্ঠান গড়েন এই উদ্যোক্তা। ‘নীলাঞ্জনা সিল্ক’ ফ্যাক্টরি তে মূলত মসলিন সিল্ক তৈরি করে পাইকারিতে সরবরাহ করা হয়।

‘এসএন ফ্যাশন’, ‘নীলাঞ্জনা’ এবং ‘নীলাঞ্জনা সিল্ক’ প্রতিষ্ঠান তিনটি এখন সরাসরি ৭০ জন এবং মাঠ পর্যায়ে সাড়ে তিন হাজারের বেশি কর্মী কাজ করছেন।

এভাবে নিজের কাজের স্বীকৃতিও পাচ্ছেন নিলুফা ইয়াসমিন।

নানা পেশার নারীদের সম্মাননা জানাতে গত ১০ এপ্রিল রাজধানীতে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল অফিসে উদ্যোক্তা, হিতৈষী, সাংবাদিক এবং ক্রীড়া– এই চার ক্যাটাগরিতে সেরা চারজনের হাতে যে ‘রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননা-২০২১’ তুলে দেওয়া হয়; তাতে সেরা উদ্যোক্তার সম্মাননা পান রাজশাহীর নিলুফা ইয়াসমিন।

উদ্যোক্তা বার্তাকে তিনি বলেন, “সম্মাননা নিঃসন্দেহে গর্বের, আনন্দের। এর আগেও বহুবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সেরা উদ্যোক্তার সম্মাননা পেয়েছি। এতে অনেকে আমাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তারাও কাজ শুরু করেছেন, এটিই আমার প্রাপ্তি। এছাড়া যখনই সম্মাননা পাই তখনই যেন আমার কাজের প্রতি ভালোবাসা, আগ্রহ দ্বিগুণ হয়ে যায়।”

রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননা-২০২১ এর আগে জাতীয় যুব পুরস্কার ২০১৫, এসএমই পুরস্কার, সেরা জয়িতা পুরস্কার, জনকের শতকে স্বাধীনতার ৫০-এ নারী উদ্যোক্তা পুরস্কারসহ বিভিন্ন সময় অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন নিলুফা ইয়াসমিন।

এই উদ্যোক্তা শুরু করেছিলেন যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে তিনি বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশনসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এবং নিজ প্রতিষ্ঠান থেকেও গ্রুপ আকারে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন।

আগামীর পরিকল্পনা জানতে চাইলে নিলুফা ইয়াসমিন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন: দেশের বাইরে নকশিকাঁথাসহ আমার বেশকিছু পণ্য বহুবার গেছে। কিন্তু আমি যেহেতু রেশম নগরীর মেয়ে তাই সিল্কের প্রতি আমার বরাবরই টান বেশি। ‘নীলাঞ্জনা সিল্ক’ বিদেশের মাটিতে ছড়িয়ে পড়ুক এটি আমার চাওয়া।

তিনি জানান, নীলাঞ্জনা সিল্ক রপ্তানি নিয়ে তিনি বৃহৎ পরিসরে চিন্তা করছেন। এছাড়াও দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহর, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে ‘নীলাঞ্জনা’র আউটলেট গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘‘সকলে পাশে থাকলে ইনশাআল্লাহ আমার প্রতিটি পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারবো বলে আশা রাখি।”

তামান্না ইমাম
রাজশাহী, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here