মানুষ ভেদে পছন্দের কত ভিন্নতা থাকে। কারো কাছে চাকরি একটা সোনার হরিণ আবার কেউ ব্যবসাতে সুখ খুঁজে নেয়। লাভলী খানম তেমন এক উদ্যোমী মেয়ে। জন্ম চাঁপাইনবাবগঞ্জ সেখানেই বেড়ে ওঠা। নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায় একজন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে। বিয়ের দুই বছর পর চাকরির সুবাদে স্বামীর সাথে বদলি হয়ে রাজশাহীতে চলে আসতে হয়। সংসার জীবনে প্রবেশ করে নিজেকে ভিন্ন মাত্রায় তৈরি করতে শুরু করেন লাভলী। তার পড়ালেখা অব্যাহত রাখেন। অতঃপর এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এইচএসসি পরীক্ষাতেও বেশ ভাল ফলাফল করেন।
এইচএসসির পর প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছেন ঠিকই কিন্তু লাভলী খানম চাকরী করতে আগ্রহী ছিলেন না, তাই তিনি পরীক্ষা দিলেন না। লাভলী স্বপ্ন দেখলেন একজন উদ্যোক্তা হবার।
রাজশাহীর উপশহর স্যাটেলাইট মাঠে ঢাকা থেকে আগত একটি প্রতিষ্ঠান থেকে নারীদের জন্য বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। সেখানে তিনি অংশ গ্রহণ করেন। ব্লক-বাটিক ও টেইলারিং প্রশিক্ষণ নেয়া শুরু করেন। প্রশিক্ষণরত অবস্থায় ১৭০০ টাকা দিয়ে একটি সেলাই মেশিন কিনেন। বাড়ির আশেপাশে থেকে কিছু ড্রেস তৈরির কাজ পান এবং বেশ ভালভাবে কাজগুলো করতে শুরু করেন লাভলী।
নিজের মধ্যে এতটাই আত্মবিশ্বাস জন্মায় যে তিনি বড় বড় অর্ডারের জন্য বড় কয়েকজন উদ্যোক্তার দরজায় কড়া নাড়েন। তারা লাভলীর ডাকে সাড়া দেন এবং লাভলী খানম এত নিখুঁতভাবে কাজগুলো করেন যে সেটি তাদের মন কেড়ে নেয়। টেইলারিং এর পাশাপাশি ব্লক বাটিকের কাজও করতে থাকেন লাভলী। কাজটি আরও ভালভাবে শিখতে রাজশাহী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে আবার একই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় সহযোগী হিসেবে দুজন কর্মীকে সাথে নিলেন লাভলী। শুরু হয় লাভলী খানম এর স্বপ্নের “লাভলী বুটিক’স” এর পথ চলা।
তৈরি করতে শুরু করেন প্রায় ১৫ ধরনের পণ্য। হাতের কাজ করা ওয়ান পিস, টু পিস, থ্রি পিস, শাড়ী, বেডকাভার, কুশন কাভারসহ বিভিন্ন কাভার, পাঞ্জাবী, পর্দা, হ্যান্ড পার্স, ব্যাগসহ বিভিন্ন অর্ডারের পণ্য তৈরী করেন উদ্যোক্তা লাভলী খানম।
কাজের মাধ্যমে রাজশাহী শহরের ডাক্তার, চাকরিজীবী গৃহিণীদের সাথে সুসর্স্পক গড়ে ওঠায় তাদের মাধ্যমে কাজ পেতে থাকেন লাভলী খানম। রাত-দিন এক করে কাজ করে গেছেন উদ্যোক্তা লাভলী। এর মাঝে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ওমেন চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (BWCCI) এর সদস্য হন লাভলী। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে নিজেকে উপস্থাপন করার একটি স্থান পান উদ্যোক্তা লাভলী খানম।
উদ্যোক্তা লাভলী খানম তার তৈরি পণ্যগুলো ক্লায়েন্টের মাধ্যমে প্রথমে ঢাকায় পাঠান এবং পরবর্তীতে তার পণ্যগুলো বিভিন্ন জেলায় বিস্তার লাভ করে। নিজস্ব কোন শোরুম না থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলায় তার পণ্য ক্লায়েন্টের মাধ্যমে পাইকারি দরে কেনা বেচা হয়।
পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস লাভলীকে করেছে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। বর্তমানে ১২ জন স্থায়ী এবং অস্থায়ীভাবে প্রায় ৪০০ জন কর্মীর কর্মসংস্থান করেছেন উদ্যোক্তা লাভলী খানম।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা