‘নিজেদের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে ১৩০ শতাংশ শ্রম দিয়েছি’

0

নতুন বছরে শুরুতেই নতুন বাসায় উঠে অনেকেই ঘরবাড়ি সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। বাড়ির সদস্যরা শোবার ঘরের বিছানার চাদর, কুশন, বাথ রোব, বাথ টাওয়েল সহ আনুসাঙ্গিক সব কিছু রাখতে চান ঝকঝকে চকচকে।

তবে এমন কিছুর আবদার মেটাতে হলে ঝক্কিঝামেলাও কিন্তু কম নয়! রাস্তার জ্যাম ঠেলে মার্কেটে ঘুরোঘুরি বা দর কষাকষির প্রয়োজন, তাছাড়াও আছে ওমিক্রনের অজানা শঙ্কা।

তবে নান্দনিক হোম টেক্সটাইল পছন্দ করেন এমন সব ক্রেতারা ই-কর্মাসের কল্যাণে ঘরে বসেই আউটলুকজ (outlookzbd.com) থেকে কিনতে পারছেন হোম টেক্সটাইলের ভিন্নধর্মী পণ্য সহ আরও অনেক কিছু।

আউটলুকজের সিগনেচার পণ্য হচ্ছে বাথ রোব, বাথ টাওয়েল, বেড শিট, কুশন কাভার, টেবিল ক্লথ, হ্যান্ড টাওয়েল, বেসিন টাওয়েল, হেয়ার টাওয়েল, কিচেন অ্যাপ্রন, বাথ ম্যাট, ম্যাট্রেস কাভার, বেবি বেডিং ইত্যাদি।

আউটলুকজ প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালে। দু’জন প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আনোয়ার পারভেজ ও ফায়াদ আহমেদুল হাই। দু’জনই বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন।

সম্প্রতি কথা হয় আউটলুকজ-এর কর্ণধার মোহাম্মদ আনোয়ার পারভেজের সঙ্গে। কোভিডকালীন সময় থেকে শুরু করে ই-কমার্স ব্যবসা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সহ নানান বিষয়ে।

মোহাম্মদ আনোয়ার পারভেজ উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, শুধু কেনাকাটাই নয়, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দেশে ক্ষুদ্র এবং মাঝারী উদ্যোক্তা তৈরিতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে । অঞ্চলভিত্তিক জনপ্রিয় পণ্য নিয়ে সেই অঞ্চলের অনেককেই এখন বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা করতে দেখা যায়, যেখানে দেশের এক প্রান্তের পণ্য অনায়সে পৌঁছে যাচ্ছে আরেক প্রান্তে। এখানে, ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী নেই।

গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোভিড-১৯ প্রকোপের পর ২০২০ সালে অনলাইনে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর কেনাবেচা বেড়েছিল ৩০০ শতাংশ। সব মিলিয়ে, করোনা বৈশ্বিক মহামারি বিভিন্ন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও ই-কমার্স খাতের রূপান্তর ও অগ্রগতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলা যায়।

করোনাকালে আউটলুকজ কেমন ব্যবসা করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন: করোনার সময় আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে পণ্য ডেলিভারি করেছি।ওই সময় আমরা হোম ডেলিভারির জন্য ডাবল র্যা পিং করতাম। অনেক সময় যে এলাকায় লকডাউন থাকত বা কেউ যদি মারা যেত ওই এলাকায় ডেলিভারি করা যেত না।সেগুলো ফেরত আসত। মূলত চ্যালেঞ্জটা ছিল কাস্টমার তেমন একটা অর্ডার করত না পাশাপাশি মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যা ছিল। তবে সৃষ্টিকর্তার রহমতে কোভিডের ধকল কাটিয়ে উঠেছি।

আউটলুকজ প্রতিষ্ঠার পেছনের গল্প জানতে চাইলে আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘‘সত্যি বলতে হুট করেই আমাদের ব্যবসা শুরু হয়। ক্যারিয়ারের শুরুতে আমি রিটেইল মার্কেটিংয়ে ছিলাম। অটবি, রহিম আফরোজ (আগোরা)। বড় প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুবাদে আমার সোর্সিংটা খুবই শক্তিশালী ছিল। এরপর আমি রহিম আফরোজ থেকে ইপিলিয়ন গ্রুপে চাকরি শুরু করি। ওরা একটা বেবি আইটেম (ক্লথ, ফুড ইত্যাদি) একটা ই-কমার্স সাইট করতে চায়। সেটার লক্ষ্যেই আমরা সোর্সিং, মার্কেটিং, প্ল্যানিং করতে শুরু করলাম।আমাদের ফাইনাল প্রেজেন্টেশনের আগে হুট করে ইপিলিয়ন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিল তারা এই বেবি আইটেম ই-কমার্স আপতত করবে না।আমরা খুবই হতাশাগ্রস্ত হই। সিইও’র কাছে গিয়েও কোন আশার কথা শুনতে পাইনি। পরে আমার ইমিডিয়েট বস যিনি আমার এখন পার্টনার তার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেই ব্যবসা আমরাই করব। আমাদের ওয়েবসাইট থেকে সবকিছুই পরিকল্পনা মাফিক গুছানো ছিল।’’

বেবি আইটেম থেকে কেন হোম টেক্সটাইল আইটেমে শিফট হওয়া, এমন প্রশ্নের জবাবে পারভেজ বলছিলেন, ‘আসলে সুনিদিষ্ট কোন কারণ ছিল না কেন আমরা বেবি আইটেম থেকে হোম টেক্সটাইল আইটেমে শিফট হলাম। তবে বলতে পারি আমার হোম টেক্সটাইলে সোর্সিংটা বেশি ছিল। তাই এই আইটেমটাকে ব্যবসা খাতে বেছে নেওয়া।’

ব্যবসার মূলধন কেমন ছিল জানতে চাইলে আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘‘আমাদের ব্যবসার কোন মূলধন ছিল না। আমি দীর্ঘদিন আগোরা ছিলাম। তাদের বেশ কিছু সাপ্লাইয়ার আমার পরিচিত ছিল। এমন একটা প্রতিষ্ঠান ‘লিভিং টেক্স’ আমাদের সহায়তা করেছিল। তারা বর্তমানে বাংলাদেশে প্রথম সারির একটা হোম টেক্সাইল। তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম দেশ ও বিদেশে ছড়িয়ে রয়েছে। ওদের প্রধান আইটেম টাওয়েল, বেডি শিট, বাথ রোব ইত্যাদি। কোন প্রকার টাকা ছাড়াই লিভিং টেক্স শুরুতেই আমাদের ২০০ পিছ বেড শিট দিল।সেখানে প্রায় ৪০টির বেশি ডিজাইন ছিল। আমারা বেড শিটগুলোর ছবি তুলে ফেসবুক পেজে আপলোড করলাম। আমার পার্টনার ফায়াদ ভাই বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় বুস্টিংয়ের কাজ করত। তিনিই এখানে বুস্টিং করান। বুস্টিংয়ের দু’দিন পরেই আমাদের প্রথম অর্ডার আসে।’’

সবধরণের ক্রেতাদের কথা বিবেচনা করে আউটলুকজের হোম টেক্সটাইলের পণ্যের দামগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে। বাথ রোবের
দাম ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। টাওয়াল ২০০ থেকে এক হাজার টাকা। বেড শিট ৪৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে।

যারা নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে ই-কমার্স সাইট করতে চাচ্ছেন তাদের পরামর্শ দিয়ে আনোয়ার পারভেজ বললেন: শুরুতে পণ্য সিলেক্ট ও প্রোডাক্ট সোসিং বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পণ্যের ফোকাস ঠিক থাকলে আপনি ব্যবসায় এগিয়ে যেতে পারবেন।

এছাড়াও যেগুলো প্রয়োজন হবে তা হলো: আপনার গ্রাহক কারা, প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি, পাশাপাশি ট্রেড লাইসেন্স এবং ব্যবসায়ের জন্য জরুরী ডকুমেন্ট থাকা লাগবে।

আউটলুকজ প্রতিষ্ঠিত করানোর প্রধান হাতিয়ার কি ছিল জানতে চাইলে আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘‘যে কোন ব্যবসায় অধ্যাবসায়, পরিশ্রম গুরুত্বপূর্ণ। আমি অন্য একটা চাকরি পাশাপাশি ব্যবসাকে দাঁড়া করিয়েছি। আমি নিজের ব্যবসায় সত্যি বলতে শতভাগেরও বেশি দিয়েছি, কখনো মনে হয়েছে ১৩০ শতাংশের ওপরে নিজেকে ব্যবসার জন্য মাথা খাটিয়েছি। পাশাপাশি ব্যবসায় সততা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।বিশেষ করে ই-কর্মাস ব্যবসায় সততার কোন বিকল্প নেই। আমি সব সময় চেয়েছি যারা একবার আমার সঙ্গে লেনদেন করেছে তারা যেন পুনরায় আবার আমার গ্রাহক হিসেবে ফিরে আসে।’’

আউটলুকজ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন: আমরা ইতোমধ্যেই লেডিস আইটেম ও লেডিস ফ্যাশন নিয়ে কাজ শুরু করেছি। বেশি কিছু সোর্সিংও করছি। এছাড়াও বেবি আইটেম নিয়েও কাজ শুরু করেছি।

‘‘এছাড়াও অভিনব প্রযুক্তি ও দক্ষতার সাথে দেশের ই-কমার্সের দৃশ্যপটে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। ক্রেতা সন্তুষ্টি অর্জন সহ প্রযুক্তির জয়যাত্রায় এদেশের মানুষের কেনাকাটার অভ্যাসে নতুন যুগের প্রধান সহচর আমাদের ‘আউটলুকজ’ হবে বলে আশা রাখছি।’’

উদ্যোক্তা বার্তা রিপোর্ট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here