নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে মানসিকতার পরিবর্তন খুবই জরুরী উল্লেখ করে বক্তরা বলেছেন মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য পরিবার থেকেই কাজ কারতে হবে। আমরা যদি আমাদের ছেলে সন্তানদেরকে নারীর প্রতি সম্মান দেখাতে শিখাই এবং পুরুষগণ যদি নারীর প্রতি সহিংসতা থেকে বিরত থাকেন তাহলে সমাজ থেকে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব।

শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মাজার রোডের বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তরঙ্গ-এর কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে ‘নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসা নির্মূলে আমরা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা।

সেমিনারটির আয়োজন করে বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তরঙ্গ ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা বাসা।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গি ও চিন্তা ভাবনার পরিবর্তণের জন্য ব্যাপক জনসচেতনতা মূলক প্রচার ও প্রসার ঘটাতে হবে। যাতে করে একটি শিশু ও নারী আর কোন সহিংসতা কিংবা নির্যাতনের শিকার না হয়।

নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে মানসিকতার পরিবর্তন খুবই জরুরী। আর এ মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য পরিবার থেকেই কাজ কারতে হবে। আমরা যদি আমাদের ছেলে সন্তানদেরকে নারীর প্রতি সম্মান দেখাতে শিখাই এবং পুরুষগণ যদি নারীর প্রতি সহিংসতা থেকে বিরত থাকেন তাহলে সমাজ থেকে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব।

বক্তারা আরো বলেন, সুরক্ষার অভাব নারীর এগিয়ে চলার পথ আটকে দিচ্ছে। তারা বলছেন, সহিংসতা প্রতিরোধের কাজটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। এর গোড়া পরিবারে, সমাজে বিদ্যমান নারীর প্রতি বৈষম্যের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে। মোকাবিলার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কার্যক্রম চাই। পাশাপাশি আসে সহিংসতার প্রতিকারের চ্যালেঞ্জ।

সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে চায়। এসডিজির পঞ্চম লক্ষ্য, নারী ও কন্যাশিশুর সমতা অর্জন এবং নারীর ক্ষমতায়ন। আর ১৬তম লক্ষ্য শিশুদের ওপর অত্যাচার, শোষণ, পাচার এবং সব ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধ করা।

নারী এবং শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে করণীয় দিকগুলো তুলে ধরা হয় অনুষ্ঠানে। অনলাইন এবং অফলাইন দুই জীবনেই শিশুরা বিভিন্ন হয়রানির শিকার হচ্ছে। এর জন্য মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যেই আয়োজিত হয় এই সেমিনার।

সেমিনারে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত সার্লোট্টা স্লাইটার, বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ইউনি স্ট্রাপ পিটারসেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ে রাষ্ট্রদূত সিডসেল ব্লেকেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তরঙ্গ-এর প্রধান নির্বাহী পরিচালক কোহিনূর ইয়াসমীন। সমাপনী বক্তব্য পাঠ করেন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা বাসা-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবিন সেফাত।

সেমিনার শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দেশীয় গানে নৃত্য শিল্পীদের মাধ্যমে রাষ্ট্রদূতদের সামনে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের তত্ত্বাবধানে প্রতি বছর ‘আন্তর্জাতিক নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা অবসান দিবস’ পালিত য়। দিবসটি উপলক্ষ্যে ১৬ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে৷ এই প্রচারণার নাম দেয়া হয়েছে ‘ইউনিটি ক্যাম্পেইন’৷ এর আওতায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে আহ্বান জানানো হচ্ছে, যাতে তারা বিশ্বব্যাপী নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নির্মূলে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেয়৷

এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো ‘‘অরেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড: জেনারেশন কোয়লিটি, স্ট্যান্ড এগেইনস্ট রেইপ ”৷ বিশ্বব্যাপী নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ‘কমলা’ রংকে বেছে নেয়া হয়েছে গতবছরের মতো৷ বিশ্বের সব দেশের নারী, যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, হচ্ছেন বা বেঁচে ফিরে এসেছেন তাদের কথা বলার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে জাতিসংঘ৷

১৯৬০ সালের ২৫ নভেম্বর লাতিন আমেরিকার ডমিনিক্যান রিপাবলিকের স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের জন্য প্যাট্রিয়া, মারিয়া তেরেসা, মিনার্ভা মিরাবেল—এই তিন বোনকে হত্যা করা হয়। ১৯৮১ সাল থেকে এই দিনটি আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিবাদ দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়। ১৯৯৩ সালের ভিয়েনা মানবাধিকার সম্মেলনে নারী-পুরুষের অসমতা ও বৈষম্যের কারণে সৃষ্ট জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। মানবাধিকার সম্মেলনে দিবসটি বৈশ্বিক স্বীকৃতি পায় এবং ১৯৯৯ সাল থেকে জাতিসংঘ ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ হিসেবে গ্রহণ করে।

এর পর থেকে বিভিন্ন দেশে নারী আন্দোলন, সরকারি-বেসরকারি সংগঠন, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলন সংগঠিত করার লক্ষে দিনটি পালন করে আসছে।

 

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here