নওগাঁর সুগন্ধি চাল নিয়ে বড় উদ্যোগের পরিকল্পনা

0
উদ্যোক্তা রওয়াইদা তানজিদা

`শুনলাম তুমি নাকি চালের ব্যবসা করছো?’ বছর খানেক আগে বাবা বিরক্তির সাথে মেয়েকে এই প্রশ্ন করেছিলেন। এখন বাবা ফোন করে জানতে চান, ‘মা তোমার উদ্যোগ ঠিকঠাক চলছে তো?’

পেশায় শিক্ষিকা মেয়ে অনলাইনে উদ্যোক্তা হয়ে চালসহ বিভিন্ন অর্গানিক প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করার উদ্যোগ নিলে কিছুদিন পর জানতে পেরে বাবা বিরক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু বাবা যখন দেখলেন মেয়ে খুব সুন্দরভাবে সবকিছু সামলে বেশ কয়েকজনের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করতে পেরেছেন, তখন বাবা উৎসাহিত হয়ে মেয়ের উদ্যোগের খোঁজখবর রাখছেন নিয়মিত।

‘হাটবাজার’-এর স্বত্ত্বাধিকারী রওয়াইদা তানজিদা। নওগাঁর পুত্রবধূ রওয়াইদা উদ্যোগে পণ্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন নওগাঁর বিখ্যাত চিনিগুড়া চাল এবং পেঁড়া সন্দেশ। এছাড়াও তার প্রতিষ্ঠান হাটবাজারে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গুঁড়া মশলা, কুমড়ার বড়ি, খেজুরের গুড়। দেশের অসংখ্য জেলায় হাটবাজারের পণ্য যাওয়ার পাশাপাশি নিউইয়র্ক এবং কানাডাতেও যাচ্ছে।

উদ্যোক্তা বলেন, “আমার প্রধান দুটি পণ্যই হলো চাল এবং পেঁড়া সন্দেশ। আমাদের প্রায় ১৭ বিঘা জমিতে ধান চাষ হয়ে থাকে। তাই খুব সহজে বিশুদ্ধ চাল দিতে পারছি। এছাড়াও আমি যেহেতু গুঁড়া মশলা নিয়ে কাজ করছি– তাই হলুদ, মরিচ, জিরা এগুলো আমাদের এলাকা এবং আশেপাশের এলাকার কৃষকদের সাথে যোগাযোগ করে মাঠ পর্যায় থেকে সংগ্রহ করি। এতে তাদের কিছুটা হলেও স্বচ্ছলতা আসছে। এছাড়া এগুলো সংগ্রহ, প্রসেসিং, প্যাকেজিং শেষে ডেলিভারিসহ বেশ কিছু কাজে আমার চারজন সহযোদ্ধার কর্মসংস্থান হয়েছে।”

তিনি বলেন: আমার পরিকল্পনা রয়েছে চাল নিয়ে বৃহৎ পরিসরে কাজ করার। দেশের বাইরেও আমার চাল পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এতে করে যেমন ব্রান্ডিং ভালো হবে, পাশাপাশি এখানে আমি আরো অসংখ্য মানুষকে স্বাবলম্বী করতে পারবো।

পেশায় একজন সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। পড়াশোনা করেছেন রাজধানী ঢাকার গার্হস্থ্য বিজ্ঞান কলেজে গৃহ ব্যবস্থাপনা ও গৃহায়ন বিষয়ে। পড়াশোনা শেষ না হতেই দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় চাকরি পেয়ে যান রওয়াইদা তানজিদা। এরপর চাকরি,পড়াশোনা দুটোই চালিয়ে গেছেন। পাবনার ঈশ্বরদীর কন্যা পরবর্তীতে বৈবাহিক সূত্রে নওগাঁতে চলে আসেন।

সব খুব ভালোভাবে চলতে-চলতে ২০২০ এ করোনা মহামারী শুরু হলে ঘরবন্দী জীবনে ফোন নাড়াচাড়া করতে করতে উই গ্রুপের সন্ধান পান তিনি। সেখানে বেশ কিছুদিন সকলের পোস্ট দেখতে-দেখতে নিজেও অনুপ্রেরণা পান। অন্যরা নিজ এলাকার পণ্যগুলো যেভাবে সকলের সামনে উপস্থাপন করছেন, পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন—তা দেখে তিনিও নিজ অঞ্চলের পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করার উৎসাহ পান। প্রথমদিকে গুগলে পড়াশোনা করে, বিভিন্ন স্থান হতে জেনে চাল এবং পেঁড়া সন্দেশ নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। সেসময় ৬ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ‘হাটবাজার’-এর সূচনা করেছিলেন। বর্তমানে নিজ উদ্যোগের পাশাপাশি তিনি উই গ্রুপের নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করছেন।

সংসার, বাচ্চা, উদ্যোগ, চাকরি, জেলা প্রতিনিধির দায়িত্ব সকল দিক ব্যালেন্স করছেন কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরিবারের সাপোর্ট সব থেকে বড়। তারা যেভাবে আমার পাশে রয়েছে, আমি নিশ্চিন্তে সকল দিক সামলে নিতে পারছি। আমার যেখানে সমস্যা হচ্ছে, আমার বর সেখানে পাশে দাঁড়াচ্ছে। আমার ব্যস্ততা বেশি থাকলে পরিবারের বাকি সদস্যরা বাচ্চাদের দেখাশোনা করছে। তারা যে মেন্টাল সাপোর্টটা আমায় দিচ্ছে, তুমি এগিয়ে যাও আমরা আছি, এটাই আমার বড় শক্তি। আমি বলবো সব দিক ব্যালেন্স করার পেছনে আমার ইচ্ছে, পরিশ্রম তো আছেই– পাশাপাশি আমার পরিবার বড় ভূমিকা রাখছে। প্রতিটি উদ্যোক্তা যদি নিজ পরিবারের কাছ থেকে মেন্টাল সাপোর্ট পায়, তা তাদের উদ্যোক্তা জীবনে এগিয়ে যেতে বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।’

দুই বছরে রওয়াইদা তানজিদার ৭০ শতাংশই রিপিট কাস্টমার। হাটবাজারে নতুনের থেকে রিপিট ক্রেতার সংখ্যাই বেশি বলে জানান উদ্যোক্তা। শুরুর দিকে অনেকে ভাবতেন শিক্ষিকাকে কেন এসব কাজ করতে হবে? অনেক কাছের মানুষও বিদ্রুপের ছলে নানা কথা বলতেন। কিন্তু এখন যখন দেখছেন তিনি সুন্দরভাবে সবটা সামলাচ্ছেন, অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, নিজ অঞ্চলের পণ্য অন্যান্য জায়গায়র লোকজন দেখছে, জানছে, নিজ জেলার ব্রান্ডিং হচ্ছে– তখন এই কাজের গুরুত্ব অনুভব করে তারা সকলে রওয়াইদার প্রশংসা করছেন।

তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here