২৮ ডিসেম্বর বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলের উদ্বোধন হয়েছে। যে লোগোটির মাধ্যমে মেট্রোরেলকে চিনবে সবাই সেই লোগোটি ডিজাইন করেছেন নওগাঁর সন্তান আলী আহসান (নিশান)। মেট্রোরেলের লোগো ছাড়াও মেট্রো রেলস্টেশনে যেসব সাইন থাকবে সেগুলোও তার করা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ থেকে পাস করেছেন আলী আহসান। লোগো তৈরির গল্প জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হয়েছি। চলতি বছরের শুরুর দিকে একদিন বিভাগের এক শিক্ষকের কাছে যাই। তিনি আমাকে বলেন, ‘মেট্রোরেলের লোগো নির্বাচনের জন্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। তুমি প্রতিযোগিতায় অংশ নাও।’ আমি তিনটি লোগো বানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে জমা দেই। আরও অনেকেই লোগো বানিয়ে জমা দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো তিনটি লোগোর মধ্যে আমার দুটি ও অন্যজনের একটি পাঠানো হয়। এরপর জাতীয়ভাবে জমা হওয়া লোগোগুলো থেকে সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার লোগোটি চূড়ান্ত করেন।’’
নিজের বানানো লোগো সম্পর্কে আলী আহসান বলেন, ‘‘এই লোগোর মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশকে তুলে ধরা হয়েছে। একটা লাল সূর্য উঠছে। নিচে বাংলার চিরচেনা সবুজের মাখামাখি। দুইয়ে মিলে বাংলাদেশ। মেট্রোর ‘এম’ অক্ষরটাও এমনভাবে বসানো, যে মনে হবে প্ল্যাটফর্ম। রেলটির দিকে কিছুক্ষণ তাকালে মনে হবে, ওটা দুর্বার গতিতে ছুটে আসছে যা বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির কথা জানান দেয়।’’
পুরো কাজটি শেষ করতে ছয় মাসের মতো সময় লেগেছে। আলী আহসান বলেন, ‘‘চলতি বছরের মে মাসে যখন কাজটি হলো, আমি ভীষণ উত্তেজিত ছিলাম। অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য লোগো করেছি, কিন্তু এতটা ভালো লাগা কাজ করেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ হওয়ার আনন্দ অবশ্যই অন্য রকম।’’
মেট্রো রেলস্টেশনে যেসব সাইন থাকবে, সেগুলোও তার করা। তিনি বলেন, ‘সাইনের কাজ করতে গিয়ে দেশের সব স্তরের মানুষ যেন চিহ্নগুলো দেখে বুঝতে পারেন কোন দিকে যেতে হবে, টয়লেট কোন দিকে, টিকিট কোথায় পাবেন, এসব ভাবতে হয়েছে।’
আলী আহসান নিশান চারু-কারু স্কুল গড়ে তুলেছেন। এখানে শিশুরা এসে ছবি আঁকা শেখে। চাকরি নয়, নিজেই কিছু করতে চান বলে জানালেন তিনি। নিজের স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে এই তরুণশিল্পী বলেন, ‘যুগ যুগ বেঁচে থাকার মতো কিছু করতে চাই।’
আলী আহসান নিশানের বাড়ি নওগাঁ পৌরসভার ধামকুড়ি এলাকায়। তার বাবা প্রয়াত আবদুস কুদ্দুস ছিলেন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। সৈয়দপুরে রেলের লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপের (ইঞ্জিন হল কারখানার) তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করতেন তিনি।
মেট্রোরেলের লোগো বানিয়ে ইতিহাসের অংশ হওয়া আলী আহসানকে নিয়ে গর্বিত নওগাঁর মানুষ।
সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ. নওগাঁর সভাপতি ডি এম আবদুল বারী বলেন, ‘নিশানের মধ্যে যে শিল্পীসত্তা আছে, আশা করি এর বিকাশ ভবিষ্যতে আমরা দেখতে পাব।’
নওগাঁ পৌরসভার ধামকুড়ি এলাকার বাসিন্দা ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নওগাঁ জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘স্বপ্নের মেট্রোরেলের লোগো বানিয়েছে আমাদের গ্রামের সন্তান। দোয়া করি, ইতিহাসের অংশ হওয়ার মতো আরও ভালো ভালো কাজ যেন সে করতে পারে।’
ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা