ঢাকায় ছেলে-মেয়ের পড়াশুনা শেষ হলো। মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করে নরওয়েতে এবং ছেলে মালয়েশিয়াতে পাড়ি জমালেন। ২০১১ সালে মা ফিরে এলেন নাড়ির টানে জন্মস্থান নওগাঁয়। নওগাঁ ফিরে সমবায় সমিতি এবং অসহায় দরিদ্র মানুষের জন্য নারী কল্যান কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়। এপর্যায়ে ঢাকার বেলাশেষে পায় চন্ডিপুর ইউনিয়নের ইলশাবাড়িতে নিজের এক খণ্ড জমিতে স্থায়ী প্রতিষ্ঠা।
নতুন আঙ্গিকে শুরু করা বেলাশেষে’তে তাসলিমা ফেরদৌসের নিজের অর্থায়নে একটি টিনশেড করে অসহায় প্রবীণ মা’দের অন্ন-বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান সম্পূর্ণ ফ্রি করে দেন। আদরের সন্তান কি কখনো মা’বাবার বোঝা হয়? বাবা-মা কত আদরে, সর্বসুখ বিসর্জন দিয়ে, শুধু সন্তানের ভালোই চেয়ে যান আজীবন। কিন্তু জীবন সায়াহ্নে এসে কিভাবে সেই সন্তানের কাঁধে বোঝা হয়ে যায় তার নির্মম হিসেব কষা দায়। দীর্ঘ সময় ধরে মনের মাঝে তাদের জন্য কিছু করার সুপ্ত বাসনাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার অদম্য ইচ্ছার ফলশ্রুতিতে জন্ম হলো নতুন এক “বেলাশেষে”র।
অসহায় প্রবীণ নারীদের শেষ বয়সের স্বর্গ “বেলাশেষে”। যার সাজানো গোছানো আঙিনায় ফুল-পাখির অবাধ বিচরণে সুখেই আছেন মায়েরা। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, নিরাপত্তা, চিকিৎসা এরপর তাদের শেষকার্য সম্পন্ন করার সকল দায়িত্ব নিয়েছে “বেলাশেষে”।
তাসলিমা ফেরদৌসের সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠা বেলাশেষে কোনোরকম দেশী-বিদেশী সংগঠন বা বাইরের আর্থিক সাহায্য ছাড়াই নিভৃতে মানবসেবা দিয়ে যাচ্ছে। জীবনে কম প্রতিকূলতা অতিক্রম করেননি তিনি, তাই মহৎকর্মে আসা সকল বাধা অতিক্রম করা যেন খানিক ভাবনার হলেও অনেকটা যুদ্ধজয়ের মতো।
তবে বেলাশেষে স্বপ্ন দেখে বৃহৎ পরিসরে বৃদ্ধ, বৃদ্ধাসহ অসহায় শিশু তথা মানুষকে নিয়ে গড়ে উঠা সম্পূর্ণ সেবাধর্মী এক পূর্নাঙ্গ প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠার, যা কেবলমাত্র ব্যক্তিগত অর্থায়নে প্রায় অসম্ভব। তবুও চেষ্টা করে চলেছেন উদ্যোক্তা। প্রবীণদের কল্যাণে দেশ, জাতি ও মানুষ তথা সকলকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চান সফল এই নারী উদ্যোক্তা।
কেবলমাত্র প্রবীণ নারীদের কল্যাণে বেলাশেষে কাজ করে যাচ্ছে নিরলস। অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, কেন কেবলমাত্র প্রবীণ নারীদের বেছে নিলেন উদ্যোক্তা? প্রশ্নের উত্তর মিলবে পরের পর্বে, সাথে থাকুন।
চলবে…
সাদিয়া সূচনা