উদ্যোক্তা - লিপি আক্তার

সবাই চায় বড় হয়ে পড়াশোনা করে অনেক বড় মানুষ হবে এবং চাকরি করবে। লিপি আক্তারও হয়তো তেমনটি চেয়েছিলেন। পরিবার থেকে অনেক ছোটতেই বিয়ে দিয়ে দেন লিপি আক্তারের। কিন্তু লিপি আক্তার বড় হবেন, নিজে কিছু করবেন, নিজের একটা পরিচয় হবে এমনটাই ভাবতেন আর সেই ভাবনা থেকেই বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে হয়ে উঠলেন উদ্যোক্তা; সফল নারী উদ্যোক্তা। যিনি এখন দেশের পাশাপাশি বিদেশেও দেশী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন

লিপি আক্তার ২০১০ সালে প্রথমে ট্রেইলারিং-এর কাজ শিখে টুকি-টাকি কাজ করতেন। পুঁজি কিছুই ছিলনা; ট্রেইলারিং করে যা পেতেন তাই দিয়ে তিনি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং সেমিনারে উপস্থিত হয়ে সব কিছু শিখতেন। পরে জুটের কাজ শুরু করেন। মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে পণ্য তৈরি করে একটি মেলায় উপস্থিত হন এবং সেই মেলার এক সপ্তাহ পর ৫ লাখ টাকার অর্ডার পান এই উদ্যোক্তা। সেই অর্ডারের কাজ শেষ করে ৭০/৮০ হাজার টাকা লাভ হয়। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি লিপি আক্তারকে।

বর্তমান সময়ে তিনি জুট এবং বুটিকস নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাথে সাথে তিনি গাজীপুর এবং শফীপুর আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাথে কাজ করছেন। যেখানে বিভিন্ন গ্রামের মেয়েরা আসে প্রশিক্ষণ নিতে। লিপি তাদের প্রশিক্ষণ দেন সপ্তাহে ৫ দিন এবং নিজ এলাকায় প্রশিক্ষণ দেন শুক্রবার এবং শনিবার দু’দিন ।

প্রকৃতি ভাল লাগে তাই নামটা দিয়েছেন প্রকৃতি হ্যান্ডিক্রাফট। কাজ করছেন জুট নিয়ে। প্রকৃতির উপাদান নিয়ে তাই প্রকৃতি এবং হাতের তৈরী যেহেতু তাই হ্যান্ডিক্রাফট। প্রকৃতি হ্যান্ডিক্রাফটে পাওয়া যায় হাতের তৈরী  ব্লক-বাটিকের থ্রি-পিস, পাটের শো-পিস, ব্যাগ সহ বিভিন্ন পণ্য।

যার সর্বনিম্ন মূল্য ২৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ মূল্য ৫০০০ টাকা। প্রকৃতি হ্যান্ডিক্রাফট অনলাইন এবং অফলাইন দু’দিক থেকেই ক্রেতাদের চাহিদা পুরণ করে চলেছে। মিরপুর আনসার ক্যাম্পে রয়েছে প্রকৃতি হ্যান্ডিক্রাফটের শো-রুম।

লিপি বলেন, “আমি নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম আমি পারবো। তবে কিছু বাধা আর আর্থিক সংকট তো ছিলোই; তার পরেও লড়াই করে নিজেকে নিয়ে নিজের ভাবনাকে নিয়ে সামনে এগিয়েছি, পিছনে না তাকিয়ে যার কারণেই নিজেকে এই পর্যায়ে আনতে পেরেছি।”

সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা মায়ের কাছ থেকে পেয়েছেন জানিয়ে লিপি বলেন, মা বলতো তুমি কাজ করো, আমি তোমার পাশে সবসময় আছি। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে প্রকৃতি হ্যান্ডিক্রাফটের আরো বেশ কয়েকটি শাখা হবে এবং প্রকৃতি হ্যান্ডিক্রাফট ভবিষ্যতে গ্রাহকের চাহিদা মেটাবে।

নতুন তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা যারা ব্যবসা শুরু করেছেন বা করবেন তারা প্রশিক্ষণ নেন এবং অবশ্যই পরিশ্রমী হতে হবে। উদ্দেশ্য নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে তাহলে তরুণরা সফল হবে।”

২০১৩ সালে পাটশিল্পের ওপর ৪০ জন কারুশিল্পীর মধ্যে লিপি সরকারি ভাবে জাপানে গিয়েছিলেন। তিনি ওখানে পাটের পণ্য বিক্রি করেন এবং গার্মেন্টস শিল্প নিয়েও কাজ করেন। দেশি পণ্য নিয়ে ইন্ডিয়াতে প্রতি মাসে একবার করে মেলায় উপস্থিত হচ্ছেন বলেও জানান উদ্যোক্তা লিপি আক্তার।

সফল নারী উদ্যোক্তা লিপি আক্তারের অর্জনও কম নয়। প্রতি মেলায় কোন না কোন একটা সম্মাননা নিয়েই ঘরে ফিরেন। কিছু সম্মাননার নাম না বললেই না শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে যে প্রথম জাতীয় শিল্প মেলা হল তাতে তিনি হস্ত ও কারুশিল্পের ওপর পেয়েছেন তৃতীয় পুরস্কার। বি’ইয়ার তরুণ উদ্যোক্তা পণ্য মেলা -২০১৯ মেলায় পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ স্টল সম্মাননা, পেয়েছেন মাদার তেরেসা শাইনিং সম্মাননা -২০১৯, দ্বিতীয় তরুণ উদ্যোক্তা সম্মাননা- ২০১৯।

যেই মেয়েটিকে একদিন বলা হতো তুমি পারবে না সেই মেয়েটি আজ তাদের সবার কথার জবাব দিচ্ছেন কাজের মধ্যে দিয়ে। ধৈর্য, আত্মবিশ্বাস এবং উদ্দেশ্য নিয়ে সামনে এগিয়ে চললে সফলতা আসবে তার প্রমাণ লিপি আক্তার।

 

খাদিজা ইসলাম স্বপ্না

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here