হেরিটেজ হ্যান্ডলুম ফেস্টিভ্যালে- ২০১৯

দেশীয় তাঁতশিল্পের কথা বলতেই যে চারটি জোনের কথা সবার আগে উল্লেখ করতে হয় তা হলো- টাঙ্গাইল তাঁত, সিরাজগঞ্জ তাঁত, মনিপুরী তাঁত, রাঙামাটি তাঁত। দেশীয় সমাজজীবনের ধারায় সকল স্তরে সমানভাবে বিস্তৃত দখল যার, নিত্য অনুসঙ্গে যার প্রয়োজন হয় প্রতিবেলায় এমনই কিছু পণ্যের সৃষ্টি এই তাঁত থেকে৷ সিরাজগঞ্জের লুঙ্গি, গামছা, টাঙ্গাইলের নরম তুলতুলে সুতি শাড়িগুলো আসে এই তাঁতীদের তাঁত থেকেই।

নিত্য ব্যবহার্য হ্যান্ডটাওয়েল বলে আমরা যা কিছু ব্যবহারে অভ্যস্থ তার মাঝে গামছাই আমাদের কাছে সবচেয়ে সাচ্ছন্দ্যের। বাঙালী পুরুষের সবচেয়ে প্রচলিত পোশাক লুঙ্গি। যা আনুষ্ঠানিক পোশাক নয়, বরং আটপৌরে ঐতিহ্যের বাহক। লুঙ্গি আর গামছার জন্য বিখ্যাত সিরাজগঞ্জের তাঁত।

বহির্বিশ্বের বাজারে যেমন মালয়েশিয়া, ইরান, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহরাইন, ওমান, বাহরাইন, আরব আমিরাত, কুয়েত, লিবিয়া, কানাডা, ইংল্যান্ড, আমেরিকায় রয়েছে লুঙ্গির ব্যাপক চাহিদা। সিরাজগঞ্জের লুঙ্গি ও গামছা গুণগত মান ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের বৈচিত্র‍্যের জন্য ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মানুষও তা পরে থাকেন।

প্রাচীনকাল থেকেই বসাকদের কাছ থেকে এসেছে যে বেগম বাহার শাড়ি, তারই পরিবর্তিত নাম টাঙ্গাইল শাড়ি। বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা এবং হিউয়েন সাঙ এর ভ্রমনবৃত্তান্তেও জানা গিয়েছিল সহস্রাব্দের বাঙালী হেরিটেজ টাঙ্গাইলের বয়নশিল্পের কথা। আবহাওয়ার কারনে বিশেষ বয়নকৌশল, রং, নকশা আর দৈর্ঘ্যে এই টাঙ্গাইল শাড়ি সবচেয়ে আলাদা। যার পাড় বোনা হয় অনেক যত্নে।

মনিপুরীরা তাঁতকে বলেন ইয়োং। খোয়াং ও পাং নামের দুই ধরনের তাঁত রয়েছে। খোয়াং মূলত কিছুটা মোটা ধাঁচের কাপড় যেমন শাল, ফানেক, পিনন জাতীয় কাপড় বোনার যন্ত্র, আর পাং এ বোনা হয় চিকন সুতার কাপড়। মনিপুরী শাড়ির রং ও নকশায় রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি শাড়ির আঁচল, জমিন ও পাড়ের নকশায় রয়েছে এক/তিন/পাঁচ চূড়া বিশিষ্ট নকশা।

রাঙামাটির আদিবাসী ও নৃগোষ্ঠীর কয়েক স্তরের বয়নে পোশাক পরিচ্ছদের বাইরে নানান নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসই কোমড় তাঁতের মাধ্যমে তৈরি হয়। গোষ্ঠীভেদে একই কাপড় ব্যবহারের পদ্ধতি ও নামকরণ ভিন্ন হয়ে থাকে।

সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সামাজিক অবস্থান থেকে বাঙালীর কৃষ্টির তাঁত বহন করছে সহস্র বছরের ইতিহাস। আর এই ইতিহাসের সম্মিলিত প্রদর্শনীতে এক হয়েছে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মনিপুরী ও রাঙামাটির তাঁত ও তাঁতীরা। যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা উদ্যোক্তারা এক হয়েছেন ঐতিহ্যের প্রত্যাবর্তনে।

 

সাদিয়া রশ্নি সূচনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here