উদ্যোক্তা- রিশান মাহমুদ রনি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার ও পারফরমেন্স বিভাগ থেকে পড়াশোনা করা অবস্থাতেই একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সংবাদ পাঠক হিসেবে কাজ শুরু করেন, এখনো সেখানেই কর্মরত আছেন। স্বপ্নবাজ তরুণ এরই মাঝে ক্যারিয়ারের কক্ষপথ বদলে হয়েছেন আত্মনির্ভরশীল, হাঁটছেন নিজের দেখা স্বপ্নের পথ ধরেই। বলছি রিশান মাহমুদ রনির কথা, অনেকের কাছে এখন ‘পাঞ্জাবীওয়ালা’ হিসেবেই যার পরিচিতি।
রিশান মাহমুদ রনি থেকে ‘পাঞ্জাবীওয়ালা’ হয়ে ওঠার গল্প নিজেই বলছিলেন রনি।
২০১৫ সাল, পহেলা বৈশাখে রনি ও তার বন্ধুরা মিলে পরিকল্পনা করলেন একই ডিজাইনে করা সাতজন সাত রঙের পাঞ্জাবী পড়বেন। আর সেই সাতটি পাঞ্জাবি তৈরি করেন রনি নিজেই। বন্ধুরা মিলে পাঞ্জাবীগুলো পরে বৈশাখে ঘুরে বেড়ান, ছবি তোলেন।

নিজের ডিজাইনে তৈরি পোশাকে বাবা-মায়ের সাথে উদ্যোক্তা

ছবিগুলো নিজের ফেসবুক ওয়ালে আপলোড করেন রনি। অনেকে জিজ্ঞেস করতে থাকে পাঞ্জাবিগুলো কোথা থেকে কেনা হয়েছে। সেই সময় ১০০ টিরও বেশি পাঞ্জাবির অর্ডার পেয়ে যায় রনি। স্বপ্ন ডানা মেলতে থাকে। একটি অর্ডার বদলে দেয় রনির জীবনের হিসেব-নিকেশ।
অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে খুব একটা ধারণা ছিলোনা রনির। এক বন্ধুর মাধ্যমে ফেসবুকে একটি পেইজ খোলার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু নাম নিয়ে পড়ে গেলেন দ্বিধায়। বেশ কিছুদিন ভাবার পর একটা বিষয় তার মধ্যে কাজ করলো, যেহেতু পাঞ্জাবী নিয়ে কাজ করবেন, তাই নামটা ‘পাঞ্জাবীওয়ালা’ হলে মন্দ হয় না।
যাত্রা শুরু করে ‘পাঞ্জাবীওয়ালা’ নামে একটি অনলাইন ফ্যাশন শপ। প্রায় শূন্য হাতে শুরু প্রতিষ্ঠানটিতে এখন বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় তিন লাখ টাকা। সময়ের সঙ্গে পাঞ্জাবীওয়ালার পরিধি বাড়তে থাকে। কিন্তু ক্রেতাদের কাছে পাঞ্জাবী পৌঁছানোর বিষয় নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরুর কিছুদিন আগেই একটি বাইক কিনেছিলেন রনি। প্রায় এক বছর নিজেই ক্রেতাদের বাসায় গিয়ে অর্ডার পৌঁছে দিয়ে আসতেন। কিন্তু এ নিয়ে তার মধ্যে কোনো ধরনের সংকোচ ছিলোনা।

উদ্যোক্তার ডিজাইনকৃত পাঞ্জাবী

অনেকেই বলতেন, ‘তুমি কেন ক্রেতাদের বাসায় অর্ডার পৌঁছে দিয়ে আসো’?
রনি হেসে বলতো, ‘আমি পৌঁছে দেই বলেই, ক্রেতাদের সাথে আমার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ তৈরি হয়েছে’।
আমি মনে করি, এটা আমার ব্যবসায়ের এই অবস্থানে আসার জন্য অনেকটা সহযোগিতা করেছে। আমি শুধু সেলাই করতে পারি না। এছাড়া কাপড় কেনা থেকে শুরু করে ডিজাইন, কালার কম্বিনেশন প্রায় সবইতো আমাকে করতে হয়, তাহলে অর্ডার পৌঁছানো কেন নয়’।
মাস্টার শুধু কাটিং আর সেলাই করেন। সব ধরনের ক্রেতারাই যাতে পণ্যটি কিনতে পারেন, সেভাবেই মূল্য নির্ধারণ করি। যখন দেখি ক্রেতাদের থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি, তখন মনে হয় পুরো কাজটা আমি একা করতে পারলে ভালো হতো। রনির ডিজাইনগুলো হয় অনন্য, তিনি সারা বছর যে কাউকেই তার পছন্দের পোশাক সরবরাহ করতে পারেন।

পাঞ্জাবীতে ব্লকের কাজ করছেন উদ্যোক্তা

অনলাইনে ব্যবসা করতে বেশ কিছু খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে বলেও জানান রনি। তার পণ্যের ছবি নিয়ে লোগো তুলে আরেকজন তার পেইজে শেয়ার করে লিখেছে, এই ধরনের প্রোডাক্ট পেতে যোগাযোগ করুন। আমার ডিজাইন করা পণ্য তারা তাদের ডিজাইন ও পণ্য বলে চালিয়ে দিইয়েছে। আমি মনে করি, এটা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অন্যতম খারাপ দিক।
আক্ষেপ করে বলেন, ‘কখনো এমন হয়েছে, অনেকগুলো পণ্য একসাথে অর্ডার করার পর কোনো নোটিশ ছাড়াই ফেরত পাঠিয়েছে। এতে অনলাইনে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-দুই দিক থেকে একে অপরের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে। মার্কেটটাও সেভাবে বড় হচ্ছে না।

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে উদ্যোক্তার ডিজাইন করা পাঞ্জাবী

উপস্থাপক থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখলেন কেন জানতে চাইলে রনি বলেন, “কম-বেশি সবাই তো বলে চাকরি করি, মানে আপনি একটা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আরেকজনের ব্যবসাকে দেখছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি এমন একটা কাজ করবো, যেটার সাইন আমি নিজেই থাকবো। আমি বিশ্বাস করি, যে যেই কাজই করুক না কেন তার ডেডিকেশন থাকলে সে ফিডব্যাক পাবেই। আর আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে বলেইতো মানুষ আমার পণ্য কিনছে। আগে আমি দর্জি থেকে অর্ডার দিয়ে এক কিংবা দুই পিস বানাতাম। এখন তারা শুধুই আমার কাজ করে”।

অতীত হয়ে যাওয়া সময়গুলো হিসেব করলে তিনটি বছর পেরিয়েছে। চাকরির পাশাপাশি ব্যবসায় মনোযোগ করাটা একসময় খুব কঠিন হয়ে যেতো রনির। তারপরও পেছনে ফিরে যাননি, বিভিন্ন ব্রান্ডের পোশাক ছেড়ে এখন নিজেও নিজের তৈরী পোশাক পড়েন।
নতুন বছরে পয়লা ফাল্গুন, ভ্যালেন্টাইন এবং একুশে ফেব্রুয়ারী সামনে রেখে ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছেন ‘পাঞ্জাবীওয়ালা’। ভবিষ্যতে শো-রুম নেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। রনি স্বপ্ন দেখেন একদিন একটি ব্রান্ডের নাম হবে ‘পাঞ্জাবীওয়ালা’।

 

জান্নাতুল ফেরদৌস তিথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here