ভূপেন হাজারিকার বিখ্যাত সেই গানের কথা গুলো মনে পরে গেলো- ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না ও বন্ধু’…। হ্যাঁ, বন্ধুরা অবশ্যই পেতে পারে। কেনো পেতে পারেনা? চারিদিকে যেমন অরাজকতা হিংসা-বিদ্বেষের উদাহরণ চোখে পড়ে ঠিক তেমনি মানবতার মানসপুত্র হয়েও কাজ করছেন অনেকে। মানুষের একটু মঙ্গল করার ইচ্ছেই নিজেকে নিয়োজিত করেছেন অনেক নিবেদিত প্রাণ। যার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত শাহনেওয়াজ আরেফিন। “যত্ন হেলথ কেয়ার” নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন সামাজিক এই উদ্যোক্তা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পড়াশোনা শেষে স্বনামধন্য অনেক প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পর্যায়ে চাকরি করেছেন শাহনেওয়াজ আরেফিন। বেশ কয়েকবছর পর চাকরির অভিজ্ঞতা থেকে তিনি লক্ষ্য করেন গ্রামের প্রান্তিক বিশাল এক জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্যসেবা থেকে এখনও বঞ্চিত। তারা না পারে রোগ সম্পর্কে জানতে না পায় ভালো ডাক্তারের চিকিৎসা। তখন থেকেই সামাজিক এই দায়বদ্ধতায় নিজে কিছু করতে চান। অবশেষে তিনি সফল হয়েছেন এবং সফলতার চরম শিখরে পৌঁছানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
তার সামাজিক এই উদ্যোগের নাম ‘যত্ন হেলথ কেয়ার’ যেটি প্রধানত নিভৃত পল্লী এলাকার মানুষদের চিকিৎসা প্রদান করছে। যত্ন হেলথ কেয়ারের তৈরী একটা বক্স থাকে যে বক্স সাজানো হয়েছে অনেক গুলো উন্নত মানের ছোট ছোট যন্ত্রাংশ দিয়ে যার মাধ্যমে সেই মানুষগুলো প্রায় ১০০টিরও বেশী রোগের পরীক্ষা করতে পারছেন নিজ বাড়ী থেকেই এবং সাথে সাথেই পাচ্ছেন রিপোর্ট গুলো।
যে পরীক্ষার জন্য তাদের যেতে হতো বিভাগীয় শহরগুলোতে অনেক টাকা ব্যয়ের মাধ্যমে এবং অনেক সময়ের ব্যবধানে এই সেবাগুলো তাদের নিতে হতো যা সামাজিক উদ্যোক্তার উদ্যোগের ফলে প্রায় অর্ধেক খরচে খুব কম সময়ে পেতে সক্ষম হচ্ছেন রোগীরা। গ্রামে যে ডাক্তারগুলো যত্ন হেলথ সার্ভিসের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করছেন তাদের মূলত একেক জনকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বলা যেতে পারে, যারা যত্ন বক্সকে কিনেছেন এবং ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করছেন যত্ন হেলথ কেয়ারের আওয়াতাভূক্ত থেকে।
যত্ন হেলথকেয়ার সেই ডাক্তার গুলোকে প্রথমে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিযুক্ত করেন প্রতিটি এলাকায়। যিনি সেই যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীর প্রাথমিক রোগ নির্ণয় করে তাৎক্ষনিক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। যদি সেই রোগের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব না হয় তখন নিকটস্থ মেডিকেলে তাকে রেফার্ড করে দেয়া হয় এবং সেটিও যত্ন হেলথ কেয়ারের তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে। যদি সম্ভব হয় রোগীর চিকিৎসা খরচও কমিয়ে দেন তারা।
ডিজিটাল এই যুগে ডিজিটাল সুবিধা প্রদানের জন্য একটি অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট করা হয়েছে যার মাধ্যমে রোগীরা সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ পাবেন। রক্ত-প্রস্রাবের অনেক গুলো পরীক্ষাসহ আল্ট্রাসনোগ্রাফির মতো পরীক্ষাও করা হয়। যত্ন হেলথ কেয়ারের সহ-উদ্যোক্তা মখলেসুর রহমান মেজবাহ বলেন, ‘আমাদের এই ছোট ছোট যন্ত্র দিয়ে যে পরীক্ষাগুলো করা হয় এবং মেডিকেলের বড় যন্ত্র দিয়ে যে পরীক্ষাগুলো করা হয় তা হুবহু একই। বিদেশের উন্নত প্রযুক্তির আকারে ক্ষুদ্র হলেও পাওয়ারফুল কাজ করতে সক্ষম এমন যন্ত্র আমরা ব্যবহার করে থাকি এবং রিপোর্টে কোন ভুল নেই তা শতভাগ পরীক্ষিত’। এই যন্ত্রগুলো অফলাইন ও অনলাইনে কিনতে পাওয়া যাবে। তামান্না ফার্মেসি, ওয়েলবিইং ওষুধডটকম, মায়া আপা ইত্যাদিতে।
এ পর্যন্ত প্রায় ২২ টি যত্ন সেন্টার স্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। যেগুলো মূলত গ্রাম কেন্দ্রীক হলেও ঢাকা শহরেও তিনটি সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে তার এই সামাজিক উদ্যোগে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ২৮ জন সদস্য।
সামাজিক এই উদ্যোগ গুলোকে সফল করার জন্য সম্প্রতি ওয়াই গ্যাপ (Y-gap) এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। সারাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করা হাজার হাজার প্রতিযোগিদের মধ্যে সামাজিক উদ্যোক্তা শাহনেওয়াজ আরেফিন প্রথম ১২তে স্থান করে নিয়েছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে সামাজিক উদ্যোক্তা শাহনেওয়াজ আরেফিন উদ্যোক্তা বার্তা কে বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যে ১০০ টি যত্ন সেন্টার স্থাপন করা হবে। ঢাকা শহরের জন্য অ্যাপ ভিত্তিক সেবা চালু করা হবে (পাঠাও, উবারের মত) যেনো প্রয়োজনের সাথে সাথে ডাক্তার সেই বক্সটি নিয়ে তার দারপ্রান্তে উপস্থিত হতে পারে এবং অ্যাপটি আপডেট করা হবে যেনো পুরাতন রোগীদের নথিপত্র রেকোর্ড করা থাকে এ বছরের শেষের নাগাদ যত্ন অ্যাপের নতুন সংস্করণ নিয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ’।
বিপ্লব আহসান
স্পেশাল করেস্পন্ডেন্ট ,উদ্যোক্তা বার্তা