পর্ব-৩
রাত তখন অনেক। কোন ভাবেই হেটে ফেরা সম্ভব না। গাড়ী লাগবে, কিন্তু এতো রাতে গাড়ীও পাওয়া যাচ্ছিলো না। এমন সময় একটা গাড়ী পেলাম, ভাড়া জিজ্ঞাসা করতেই বললো ভাড়া লাগবে না। আমাদের মনে সন্দেহ হতে লাগলো। উনি আরেকটা গাড়ীর সাথে কথা বললো তিনিও একই কথা বললেন। আমরা ভাবতে লাগলাম কি করবো। বিপদের ভয়ে একেকজন একেকটা ভাবতে লাগলাম। তখন আমার মনে হলো এটা হয়তো উনার নিজের গাড়ী হবে। আমাদের লিফট দিতে চাইছে। তাই ভাড়া না নেওয়াটাই স্বাভাবিক। যেহেতু উনারা কি বলছে আমরা বুঝতে পারছি না, আমরা কি বলছি উনারা বুঝতে পারছেন না, তাই আমরা দ্বিধাগ্রস্থ।
রাত অনেক, আমাদের বিকল্প কোন রাস্তাও নেই, পরে সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা অনেকেই আছি আমরা যাবো। গাড়ীতে উঠে পড়লাম। গাড়ীর নাম্বার নেয়া, ছবি পাঠানো যার যার জায়গা থেকে সে নিজেদের নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা করছে। বিপদ হলে কি করবে একেকজন একেক প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। নিজেদের মধ্যে বুদ্ধি পরামর্শ করছিলো। সবার মধ্যে আতঙ্ক। কি হচ্ছে, কোথায় যাচ্ছি? একটা সময় সব আতঙ্ক জলপনা কল্পনা শেষ করে আমরা হোটেলের সামনে। ওরা আমাদের সুন্দর মতো নামিয়ে দিলো, আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম ওরা আমাদের হাসিমুখে বিদায় দিলো। ওদের মনমানসিকতার কাছে মনে হলো হেরে গেলাম। এ রকম ছোট বড় অনেক অভিজ্ঞতাই ছিলো পুরো মেলা জুড়ে।
আমার স্টলে এসে যখন চাইনিজরা আমার তৈরি পোশাক কিনছে এবং পড়ছে তখন ওদের চোখে মুখে হাসি দেখে মনটা ভরে যেতো। ওরা মুগ্ধ হয়ে আমার তৈরি পোশাকে জড়িয়ে ধরতো। ওরা যেমনি আমাদের পণ্যের প্রশংসা করতো তেমনি আমাদেরও।
পণ্য কেনার পর একজন মা তার মনের ভাষা আমাকে বুঝাতে পারছিলো না। তারপর তার মেয়ে বললো, “আমার মা বলছেন- তুমি অনেক সুন্দর”। আমার মা আরো বলেছেন, “তুমি শুধু সুন্দর না, তুমি অনেক সৎ ও ভদ্র”। আমি আবেগে মাকে জড়িয়ে ধরি। বিদেশের মাটিতে এটাই আমাদের স্বার্থকতা। ওরা বাংলাদেশের মানুষকে ভালো জানবে এটাই আমাদের পাওয়া।
চলবে…
হাসিনা মুক্তা
সফল নারী উদ্যোক্তা