উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় একবার এক চাচার কাছ থেকে বেশ কিছু শাড়ি নিয়ে বিক্রি করেছিলেন সাদিয়া এ্যানি এবং বেশ ভালো লাভও করেছিলেন। কিন্তু এটাকেই যে পেশা হিসেবে নেবেন তা কখনো ভাবেননি তিনি। এ্যানির ইচ্ছা ছিলো সরকারি চাকরি করবেন। কিন্তু সংসার আর সন্তানদের পিছনে সময় দিতে গিয়ে তা আর করা হয় নি। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিলেন পাশও করলেন। এরপর বিএড করলেন৷ বছর খানেক চাকরি করলেন লিটেল এনজেলস লার্নিং হোম নামের একটা স্কুলে। কিন্তু একটা পিছুটান রয়েই গেল। ছেলেকে কার কাছে রেখে যাবেন সেই চিন্তায় আর চাকরি করা হলোনা।

ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করা অবস্থায় বাসায় ছাত্রছাত্রী পড়ানো শুরু করলেন। বেশ ভালোই চলছিল। নিজের হাত খরচটা হয়েই যেতো। কিন্তু সব সময় স্বপ্ন দেখতেন নিজে কিছু করবেন। ২০২০ সালে বিশ্ব জুড়ে করোনা মহামারী শুরু হলো। একে একে সব ছাত্রছাএীকে বাসায় আসতে নিষেধ করে দিলেন। এবার নিজেকে অসহায় মনে হতে লাগলো। মনে হচ্ছিলো, এতো লেখাপড়া করে জীবনে কিছুই করতে পারলাম না।

করোনা আর লক ডাউন তাকে নতুন করে ভাবতে শেখালো। এ্যানি এবার উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করলেন। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা নারায়নগঞ্জের নোয়াপাড়ায়। বাপ-দাদার আদি ব্যবসা ছিলো জামদানি। তাছাড়া জামদানির কদর ও জনপ্রিয়তা সারা দুনিয়ায় জুড়ে। তাই জামদানি নিয়েই কাজ শুরু করলেন তিনি। খুলে ফেললেন একটি অনলাইন পেইজ। যেহেতু শুরুতে তার কোনো পুঁজি ছিলোনা তাই ছোট ভাই, চাচাতো ভাই সবার কাছ থেকে শাড়ির ছবি তুলে দেয়া শুরু করলেন পেইজে। প্রথম মাসেই বিক্রি করে ফেললেন একটি শাড়ি। অত্যন্ত আনন্দিত হলেন তিনি। তারপর আর বিক্রি নেই। ভাইদের কাছ থেকে কিছু শাড়ি নিয়ে একটি লাইভ করলেন। এবার আমেরিকাতে ৭ টি শাড়ির অর্ডার আসলো। তারপর ইন্ডিয়া, কানাডাতেও গেলো তার শাড়ি। দেশের প্রায় সব জেলাতেই এখন তার শাড়ি কদর তৈরি হয়েছে।

শুধুমাত্র জামদানি নিয়েই কাজ করছেন উদ্যোক্তা সাদিয়া এ্যানি। তার উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান, ‘নিজে একটা কিছু করে দেশ এবং দেশের বাইরে নিজেকে তুলে ধরার ইচ্ছা ছিল বহু দিন থেকে। তাই আমি এ পথ বেছে নিয়েছি এবং এটা আমার বাবা-দাদার আদি ব্যবসা। এ সম্পর্কে ভালো জানি তাই জামদানি নিয়ে কাজ করি। ভবিষ্যতে আমি আমার পণ্য বিশ্বের সব দেশে পৌঁছে দিতে চাই। টিকিয়ে রাখতে চাই পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য এবং বাংলাদেশের কৃষ্টিকে ‘।

বর্তমানে ৫-৬ জন কর্মী আছে তার। নোয়াপাড়ায় ৩-৪ টা তাঁতও আছে। মাসে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকার পণ্য উৎপাদন করছেন এবং এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার বিক্রিও করছেন।

বাবা গোলাম মওলা ও মা সাবেরা বেগমের দুই সন্তানের মধ্যে বড় উদ্যোক্তা সাদিয়া এ্যানি। নোয়াপাড়া ইসলামিয়া মহিলা মাদরাসা থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। এরপর ঢাকার কবি নজরুল কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

সততা, শ্রম, ধৈর্য এবং মেধাকে কাজে লাগিয়ে জীবন যে কেউ উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে পারে। ‘আমি পারি, আমি পারবো, আমাকে পারতেই হবে’ এই মনোবল নিয়ে এগিয়ে গেলে সফলতা আসবেই। এই বিশ্বাস থেকেই নিরন্তর সাধনার মাধ্যমে নিজের কাঙ্ক্ষিত সাফল্যে পৌঁছাতে চান উদ্যোক্তা সাদিয়া এ্যানি।

সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা, খুলনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here