জাতীয় পর্যায়ের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় থেকে সফল উদ্যোক্তা

0
উদ্যোক্তা হাসিনা হোসেন

ছোট থেকে খেলাধূলায় সেরা একজন। স্বপ্ন ছিল নতুন কিছু করার। সেই স্বপ্ন আর আত্মবিশ্বাস থেকেই পথচলা। মাঝপথে প্রতিবন্ধকতা, তারপরও হতাশায় রাতের ঘুম নষ্ট না করে আগামী দিনের সোনালী স্বপ্নকে বুকে লালন করে অবশেষে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করেছেন আত্মপ্রত্যয়ী হাসিনা হোসেন। যদিও খেলাধুলায় সেরা হওয়ায় আগ্রহ বেশি ছিল সেখানেই। স্কাউটস এবং গার্লস গাইড করেছেন, আবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়ও ছিলেন। তবে, কেন তিনি আজ উদ্যোক্তা?

কাজ করছেন হস্তশিল্প ও কারুপণ্য নিয়ে, উদ্যোগের নাম ‘বাংলারছাঁপ’। হাসিনা হোসেনের বাবা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ও মা গৃহিনী। চার ভাই, এক বোন; মা-বাবার দ্বিতীয় সন্তান। গ্রামের বাড়ি বলতে ঢাকাতেই স্থানীয়। ১৯৪৩ সালে ঢাকার মতিঝিল ফকিরাপুলে হাসিনার দাদা এসেছিলেন, তখন থেকে পুরো পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস। বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি করেছেন হাসিনা বেগম। এরপর বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর মাস্টার্স করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজ) পলিটিক্যাল সায়েন্সে। পড়াশোনার পর শিক্ষকতা করেন। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন খেলেছেন ২০০৩ সালে। যেহেতু ছোট থেকে স্কাউটস এবং গার্লস গাইড করেছেন, তাই এ ধরনের কাজে অনেক আগ্রহ ছিল।

হাসিনা হোসেন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘যখন কোয়ান্টাম গ্র্যাজুয়েট হলাম– তখন মনের বাড়িতে স্বপ্ন বুনে ছিলাম যে আমি কাজ করবো এবং আমার কাজের মাধ্যম আরো কয়েকটা পরিবার যেন কাজ করতে সক্ষম হয়। তখন থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার পথে হাঁটতে শুরু করেছি। ছোট্ট বাবুকে রেখে কাজ করাটা কষ্টদায়ক হলেও, অনেক কিছু ম্যানেজ করতে হয়েছে। এক্ষেত্রে আমার মা সব সময়ই আমার পাশে থেকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমার ভাইরা সব সময়ই আমাকে উৎসাহ দিয়ে গেছেন।’

তিনি বলেনঃ গুটি গুটি পায়ে সর্বপ্রথম শুরু করেছিলাম আমার স্কুল-কলেজে বসা মেলাতে স্টল নিয়ে। এরপর ২০১৬ সালে ছেলের স্কুলের মেলায় স্টল নিলাম। যদিও ওইটা ছিল বৈশাখীর একদিনের মেলা, মাত্র দেড় হাজার টাকার পণ্য ও হাতে তৈরি Egg Shell Craft দিয়ে উপার্জন করেছিলাম ৫ হাজার টাকা। এরপর আমার বিচ্ছেদ হয়ে যায় স্বামীর সাথে। অনেক ধরনের বিপদের পড়তে হয়েছিল। ছেলেকে নিয়ে কী করবো? কোথায় যাবো বুঝতে পারছিলাম না। আবার এর আগে ব্যবসা শুরু করলেও তখন অনেক কিছুই বুঝিনি। কোনও স্কিল, ট্রেডলাইসেন্স, টিন কিছুই ছিল না। তারপর আস্তে আস্তে আমি বিভিন্ন দক্ষতা অর্জনের জন্য উঠে পড়ে লেগে যাই। কারন আমি জানতাম আমি নারী, আমি সব পারি। এভাবেই আস্তে আস্তে নিজেকে ট্রেইন করেছি। এখন অন্যদেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। অটল আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রথমে এভাবে যাত্রা শুরু হয়।

উদ্যোক্তা হাসিনা হোসেনের উদ্যোগ ‘বাংলারছাঁপ’ এর পণ্যগুলো হলো: হ্যান্ডপেইন্ট শাড়ি, পাঞ্জাবি, গ্লাস পেইন্টের পণ্য, কাঠের বিডস এর গহনা, Egg shell craft, কাঠের তৈরি অন্যান্য পণ্য, মেটাল গহনা, কাগজ শিল্পের পণ্য। বর্তমানে তার তিনজন নারী এবং দু’জন পুরুষ কর্মী রয়েছেন। তাছাড়া সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়েও কাজ শুরু করেছিলেন যা করোনার জন্য এখন বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ২৮ হাজার টাকা মাসে আয় হয় তার। তবে, তার থেকে পণ্য তৈরি করতে খরচ হয় ১৮ হাজার টাকার মতো। মুলত উদ্যোক্তার মাসে লাভ হয় ১০-১২ হাজার টাকা। দেশের বাইরে দু’টি দেশে পণ্য গেছে কুরিয়ার এর মাধ্যমে।

হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অনলাইন পেজ এ “বাংলারছাঁপ” এর পণ্য পাওয়া যায়, এছাড়া ‘কলসিপুতুল’, ‘রেওনবিডি’তে পাওয়া যায়। আমাদের মতিঝিলে ডিসপ্লে সেন্টারেও পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন রকমের পণ্য হাতে বুনে তৈরি করা হয় বলে অনেক অর্ডার ভিত্তিতেই বানানো হয়। দেশের জন্য, কারুকাজের প্রতি ভালবাসার জন্য এ মাধ্যমে এসেছি। অন্য, আরও কয়েকটা পরিবার যেন সম্মানের সাথে কাজ করে পরিবার চালাতে পারে, তাই উদ্যোক্তা হয়েছি।’

ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি জানানঃ একটা ওয়ান স্টপ সেন্টার তৈরি করতে চাই, যেখানে অনেক পণ্যের সমাহার থাকবে। পাশাপাশি এক্সপোর্ট করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য তিনি বলেন, ‘যে কাজ নিয়ে এগিয়ে যেতে চান, ওই কাজের ভাল-মন্দ, সুবিধা-অসুবিধা, নিয়ম-নীতি ও নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে ভালভাবে জেন নিন এবং কাজের সাথে লেগে থাকুন। আপনি কাজকে সময় দিলে কাজ আপনাকে সুফল দেবেই। কঠোর পরিশ্রম করে গেলে সফলতা আসবেই।’

মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here