উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা এ সমাজে সহজ নয়। সেই কঠিন পথে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আতিয়া আক্তার জাহান। রত্ন-রাজির স্বত্ত্বাধিকারী তিনি।
বাংলাদেশে একজন নারী ব্যবসা করতে আসলে প্রথমেই পরিবারের বাধার সম্মুখীন হন। সেটা সামলে উঠতে না উঠতেই শুরু হয় বিনিয়োগ নিয়ে বড় রকমের সংকট। এরকম অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ তিনি সফল উদ্যোক্তা।
চৌদ্দ বছরের চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হয়েছেন তিনি, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আদর্শ হিসেবে।
বাবা বিসিআইসিতে চাকরি করতেন ও মা গৃহিনী। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। গ্রামের বাড়ি বগুড়া,
ঢাকতে লেখাপড়া, বড় হয়েছেন। এসএসসি থেকে মাস্টার্স লালমাটিয়া স্কুল ও মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।
আতিয়া আক্তার বলেন, ‘আমি চাকরি করেছি ১৪ বছর ধরে। যখন চাকরি করতাম তখন থেকেই চিন্তা ছিল উদ্যোক্তা হবো। ২০২০ সালে জব ছেড়ে দিলাম। কোভিডের সময় চলে। তখন গহনা নিয়ে প্রথম কাজ শুরু করি। এরপর থেকে ধীরে ধীরে এগোতে থাকি। হঠাৎ মনে হয় শুধু গহনা নয়, অন্য কিছু নিয়েও কাজ করা উচিৎ। তাই পোশাক ডিজাইন করা শুরু করি। এভাবেই শুরু আমার উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প।’
২০২০ সালে করোনার সময় উদ্যোক্তা শুরু করেন ‘রত্নরাজি’। ৫,০০০ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করেন নিজের ব্যবসায়। রত্নরাজি পেজ ওপেন করার সাথে সাথে অর্ডার আসে, খিলগাঁও থেকে এক ক্রেতার। উদ্যোক্তা তার কাছে প্রথম পণ্য বিক্রি করেন ১,৩০০ টাকার। সেখান থেকে তার উৎসাহ বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, বাজারে সোনার তুলনায় অ্যান্টিক এবং বাহারি ডিজাইনের গয়নার প্রতি আগ্রহ বেশি নারীদের। তাই আইটেম তালিকায় রয়েছে মেটালের মালা, কানের দুল, আংটি, লং মালা বা ফ্যাশনেবল মালা, লম্বা চেইনের ঝুমকা, গলার চিক, ডিজানিং চুড়ি, দুল, ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে উদ্যোক্তা আতিয়ার ডিজাইন করা সালোয়ার-কামিজ ও শাড়ি। তার সব সময় চেষ্টা থাকে পোশাকের সাথে মিলিয়ে গহনার ম্যাচিং সেট দিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার।
উদ্যোক্তা বলেন, বাংলাদেশে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য পৃষ্ঠপোষকতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তার উপর করোনা মহামারী আসার পর ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে চরম হতাশার তৈরি হয়েছিল। সেই হতাশা থেকে বেরিয়ে আসার জন্যই নিজের উদ্যোগ।
উদ্যোক্তা আতিয়ার দুজন কারিগর আছেন। সাভারে একটি কারখানা রয়েছে। আর নিজে ডিজাইন করে কারিগরদের বুঝিয়ে দেন এবং পাশে থেকে পণ্য তৈরি করেন ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী। মাসে প্রায় এক লাখ টাকার ওপরে সেল করেন। দেশের বাইরেও তার পণ্য যায় যেমন আমেরিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি। আর দেশের ভেতর ঢাকা, বগুড়া, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, ভোলা, সিরাজগঞ্জে পণ্য কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠান।
নারীদের জন্য বাংলাদেশ কতটা ব্যবসাবান্ধব এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, একজন নারী উদ্যোক্তা যতক্ষণ পর্যন্ত ভাববেন যে আমি নারী তাই আমি জটিলতায় ভুগছি, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগবেন।আমার শুরুর দিকেও পরিবার, বন্ধুবান্ধব সকলেই মেয়েদের নিরাপত্তা ও সামাজিক কারণে এক ধরনের আতঙ্কে ভুগতো। সেসব মোকাবিলার মানসিকতা নিয়ে বুঝে শুনে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন: উদ্যোক্তা হলে নিজের পাশাপাশি আরো দশজনের কর্মসংস্থান হয়। সেই তৃপ্তি আছে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছি। এটা অনেক শান্তির। দেশ-বিদেশে আমার ‘Rotno Razi’র নাম ছড়িয়ে পড়বে এটাই চাওয়া।
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ভালো পণ্য ও সততা দিয়ে কাজ করলে সফলতা আসবে। জীবনে উন্নতি করতে গেলে সততার বিকল্প নেই। সংকট থাকবেই, থেমে গেলে হবে না। স্বাবলম্বী হতে হলে নিজের স্বপ্নের মূল্যায়ন করতে হবে। এরপর সফলতা আসবে।’
মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা