সফল দুই উদ্যোক্তা- মোস্তফা দিপু ও তোফাজ্জল হোসেন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি বিভাগ দর্শন, চারুকলা, নৃ-বিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের চার উচ্ছল, উদাস কিছুটা ডানপিটে আবার পড়ুয়া তরুণ। পড়াশোনা করতে করতে তারা ভাবলেন কিছু একটা করতেই হবে। শুধু মাত্র সার্টিফিকেট দিয়ে জীবনে কিছু করা সম্ভব নয়। পড়াশোনার বয়স প্রায় শেষের দিকে। পরিবার না বললেও পরিবারের সন্তানদের মানসিক প্রশ্ন এসে দাঁড়ায় পরিবারের টাকায় আর কত?

চারুকলা থেকে আরিফ মৃধা কাজের সাথে জড়িত ছিলেন টুকটাক। তোফাজ্জল হোসেন পাশ করেই চাকরির জন্য ছুটলেন, একবছর চাকরিও করলেন নৃ-বিজ্ঞানে পড়াশোনা সম্পন্ন করে। মোস্তফা দিপু দর্শন শাস্ত্রে পড়াশোনা করে ট্যানেরি এবং ইন্টারন্যাশনাল লেদার বাইং এজেন্সিতে চাকরি করলেন কিছুদিন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা করা সাখাওয়াত হোসেন ব্যাংকার হয়ে গেলেও বন্ধুদের সাথে উৎসাহ নিয়ে রইলেন ঝুলেই।

বললেই কি ব্যবসা করা যায়? হওয়া যায় উদ্যোক্তা! ট্রাস্ট এন্টারপ্রাইজ নাম দিয়ে জিগাতলা ট্যানারি মোড়ে একটা ছোট্ট জায়গায় দুই বন্ধু মোস্তফা দিপু এবং তোফাজ্জল হোসেন মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করলেন ফটোকপিয়ার আর কম্পিউটার কম্পোজের ব্যবসা।

২০১২ সাল। সারাদিন চাকরি করে এসে দুই বন্ধ নিজেরাই ফটোকপি করেন এবং কম্পিউটার কম্পোজ করতেন- কঠোর পরিশ্রম। ২০১৫ সালে মোস্তফা দিপু আন্তর্জাতিক বাইং হাউজে কাজ করতে করতে বললেন তিন বন্ধুকে লেদার প্রোডাক্ট তথা চামড়াজাতপণ্য নিয়ে কাজ করার কথা। এখানেই আছে উজ্জ্বল সম্ভাবনা। নিজেরাতো স্বাবলম্বী হবোই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবো এবং নিজেরা কিছু করে দেশকে উজ্জ্বল করতে পারবোই।

লাইসেন্স হলো এনেক্স বাংলাদেশ। ২০১৫ সালেই এনেক্স বাংলাদেশ নামের চামড়াজাত পণ্যের একটি শো-রুম দিলেন বন্ধুরা মিলে। সেই সাথে অনলাইন ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স সাইটেও নিজেদের ব্যবসার প্লাটফর্ম খুললেন তারা। বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে অর্ডার দিয়ে পণ্য বানিয়ে এনে নিজেদের শোরুমে পণ্য বিক্রয়ে সক্ষমা অর্জন করার সময়। তোফাজ্জল হোসেন ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে ফুলটাইম হলেন ব্যবসায়। সামর্থ অনুযায়ী বন্ধুদের দফায় দফায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইনভেস্টমেন্ট। কারো কাছ থেকে পণ্য বানিয়ে এনে কোয়ালিটি নিশ্চিতকরণ কঠিন ছিলো। ব্র্যান্ড বিল্ডিং দূরহ ব্যপার।

২০১৭ সাল। জানুয়ারি মাস। দুই তরুণ বানিয়ে ফেললেন ৩০০ স্কয়ারফিটে চারটি মেশিন দিয়ে ফ্যাক্টরি। উদ্যম, উদ্যোগ, উদ্যোক্তা। মানিব্যাগ, লেডিস ব্যাগ, অফিস ব্যাগ প্রোডাকশন শুরু হলো নিজেদের ফ্যাক্টরিতে। ভীষণ অল্প সময়ে গুণগতমান চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুত করতে শুর করলেন উদ্যোক্তারা তাদের ফ্যাক্টরিতে। পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের ভালো লাগা এবং আস্থা উৎসাহ বাড়ায় উদ্যোক্তাদের।

২০১৭ সালের মাঝামাঝি ২ হাজার স্কয়ারফিটে ১৭টি মেশিনে উন্নীত করলেন স্বীয় পরিশ্রমে এবং কঠোর সাধনায় ফ্যাক্টরিকে। ১৮ ঘণ্টা করে পরিশ্রম, নিত্যনতুন ইনোভেটিভ ডিজাইন, কোয়ালিটি এবং কমিউনিকেশন। কয়েক মাসেই উদ্যোক্তা বন্ধুরা বুঝতে পারলেন পেছন দিকে ফিরে তাকানো নয়, শুধুই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

নতুন দৃঢ় প্রত্যয়ে নতুন ফ্যাক্টরি ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তা তাদের ক্ষুদ্র উদ্যোগে কর্মসংস্থান করলেন ১১ জন কর্মীর। লেদার জ্যাকেট, লেদার ট্রাভেল ব্যাগ, লেডিস ব্যাগ। দেশে প্রথমবার লেদার দিয়ে তৈরি জায়নামাজ এবং টুপি। লেদারের মোজা, বেল্ট, মানিব্যাগ, কার্ডহোল্ডার, স্যান্ডেল, জুতা নানা মনকরা  ডিজাইনে ৫০টিরও উপরে প্রোডাক্ট লাইন উদ্যোক্তারা তৈরি করে ফেললেন। ছোট বড় মিলিয়ে ১৫০ এর উপর ক্লায়েন্ট লিস্ট। কঠোর পরিশ্রম, দিনরাত গবেষণা। কোন মেলা, কোন শোরুম কোন স্থানে যেকোন কাস্টমারদের জন্য নিজেরাই সেলসম্যানশিপের কাজটি করেন হাসিমুখে।

মাত্র ৫০ হাজার টাকা নিয়ে উদ্যোক্তার যুদ্ধ শুরু। বন্ধুদের চাকরি ছেড়ে আজ ৩ বন্ধু সফলতার সাথে পরিচালনা করছেন প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা মূল্যমানের ব্যবসা। দেশের এসমই খাতকে করছেন শক্তিশালী উদ্যোক্তা হিসেবে, অর্থনীতি বেগবান করছেন যারা হয়েছেন তাদের সাঁরির যোদ্ধা। ছাত্রজীবনের বন্ধুত্বের বন্ধন, চাকুরির নির্ভরতা সম্পূর্ণ কাটিয়ে হয়ে উঠছেন সফল উদ্যোক্তা।

 

 

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here