চাঁদপুরে এসএসসি পাশ করে ঢাকায় আসলেন মমিন দেওয়ান । উদ্দেশ্য ভালো একটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করা। থাকতেন বড় ভাইয়ের বাসায়। একটি নির্দিষ্ট বয়স থেকেই কমবেশি সবাই চায় নিজের হাতখরচটুকুর ব্যবস্থা নিজে থেকে করতে। কিশোর মমিন তার ব্যতিক্রম ছিলেন না।ইন্টারমিডিয়েট থেকে কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিতেন। এক কিশোরের গল্প বলছি শুনুন তবে।

কোচিং এ ক্লাস নিতেন মূলত নিজের হাতখরচের জন্য৷ বড় ভাই পড়াশুনার খরচ দিতেন। কেন যেন মনে হতো নিজের কাজ নিজেকে যেমন করতে হয় তেমনি নিজের ব্যয়ভারও নিজেকেই বহন করতে হবে। কিছু করার বাসনা, তাই হাতখরচের টাকা থেকে জমিয়ে ফেললেন অল্পকিছু। স্বপ্নের তাগিদ ছিল কিছু একটা করবার। বিসিক থেকে ট্রেনিং নিয়েছিলেন ইন্টারমিডিয়েট এ পড়া অবস্থায়ই।

সামর্থ্য কম, কিন্তু স্বপ্ন যে ভারী তাড়িয়ে বেড়ায়! ২০১৫ সালে সেকেন্ড হ্যান্ড একটা ডাবল ফিট সুইং মেশিন কেনা হয়েছিল কিশোর মমিনের জমানো হাতখরচের টাকায়। দাম ছিল ১৪ হাজার টাকা। কর্মী ছিল মাত্র একজন। উদ্যোগ গ্রহনকারী হয়েও সেই কর্মীর সহযোগী হয়ে কাজ করেছেন প্রায় ৬মাস। এরপর একটু সামর্থ্য হলে নিয়োগ দেন আরো কর্মী। প্রথমে কারখানা বলতে ছিল ডেমরার ছোট্ট একটা ঘর। আর এখন সেটা ৮টি মেশিনের কারখানা। ঘরটাও বড় হয়েছে। কর্পোরেট লেভেলের অর্ডারগুলো নিয়মিত আসছে। পণ্যের অর্ডারে তৈরী পণ্যগুলো বিভিন্ন বিপণন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পৌছে যাচ্ছে দেশ ছাড়িয়ে দেশের বাইরেও। কারখানায় কাজ করছেন ৭জন নিয়মিত কর্মী এছাড়াও কাজের অর্ডারের উপর নির্ভর করে অনিয়মিত ভাবে সেখানে কাজ করছেন অর্ধশত কর্মী।

বর্তমানে পড়ছেন তেজগাঁও কলেজে অনার্স ৩য় বর্ষে। লেদারের চাহিদা দেশসহ সারা বিশ্বে বলে নিজের কর্মক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিলেন এই লেদারকেই। এক সাধারন কিশোর থেকে উদ্যোক্তা হয়ে উঠার পথটা মসৃন ছিল না। বন্ধুরা অনেকেই তাচ্ছিল্য ভরে বলেছেন, ”পড়াশুনা সাথে আবার ব্যবসা? তুই পারবিনা!” উত্তরে কখনো প্রতিবাদ করেননি মমিন। সবিনয়ে বলেছেন, “উপদেশের জন্য ধন্যবাদ। আমি সবখান থেকেই শিখি। মনকে বোঝাই, রিস্ক নেবার সাহস সবার থাকেনা। আমাকে এগিয়ে যেতে হবে। এসব অনুপ্রেরণা।”

নিজের বড় একটা ফ্যাক্টরী চান মমিন দেওয়ান। যেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কথা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলো, কখনো কি চাকুরী করার কথা ভেবেছিলেন? উদ্যোক্তা মমিন বেশ জোরদার কণ্ঠে বললেন, “চাকরীপ্রার্থী হবো না, আমি হবো চাকরীদাতা।” সফলতার সংজ্ঞা জানেন না এস আই মমিন। তার কাছে মনে হয়, নিজেকে সফল ভাবতে থাকলে কাজের অগ্রগতি সম্ভব নয়। রোজ রোজ শেখার জ্ঞান নিয়ে দেশের পণ্য নিয়ে আজীবন কাজ করে যেতে চান ২৩ বছর বয়সী এই তরুণ উদ্যোক্তা।
সাদিয়া সূচনা
ছবি- ইকবাল আপন