দেশীয় কাপড়ের আছে গৌরবের ইতিহাস। যে দেশ তাতের কাপড়, মসলিন, জামদানী শাড়ির জন্য বিখ্যাত। সে দেশের তাত শিল্প হুমকির মুখে পড়ছে, এই ব্যাপার টা মেনে নিতে কষ্ট হয়। বিদেশি সস্তা মানহীন কাপড়ের ভীড়ে দেশীয় কাপড় কে তুলে ধরার এক অনন্য প্রয়াস অম্বর।
উদ্যোক্তা শ্রাবণী রায় গল্পের শুরুতে বলেন, ২০১৭ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ব্যবসা এককভাবে বজায় রেখেছি।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসি ডিপার্টমেন্ট এর মাধ্যমে মাস্টার্স করেছিলাম। এরপর প্রায় এক বছর জব করার পর মনে হল, যেটা করতে খুব বেশি ভাল লাগছিল না। এরপর থেকে অনেক ভেবেচিন্তে শুরু করলাম, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে “অম্বর” নামক একটি পেজ দিয়ে।যদিও শুরুটা খুব ছোট পুঁজি ছিল ।যা মূলত আসে চাকরি ছাড়ার পর শেষ বেতনের। সেই বারো হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে মূলত অম্বর পেজটিতে কাজ আরম্ভ করেছিলাম।
উদ্যোক্তা শ্রাবণী রায় দ্বিতীয় পদক্ষেপ নিয়ে বলেন,
টাংগাইল থেকে শাড়ি এনে নিজস্ব মেধা দিয়ে ডিজাইন করি।বিক্রি করে, পরে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরবর্তীতে যে পণ্য নিয়ে কাজ করেছিলাম তা হল একটি কামিজের উপর নিজস্ব ডিজাইন করি।সে কামিজটিও বিক্রি হয়ে যায়। এরপর কিছু স্যাম্পল বানিয়ে। ছবিগুলি পেইজের মাধ্যমে দিয়ে ছিলাম। তা ক্রেতারা খুব পছন্দ হয়েছিল এবং দ্রুত সারা পাচ্ছিলাম। তারপর পরিবারের সবাই পরামর্শ দেয় ,যেভাবেই হোক এ ব্যবসা যেন বজায় রাখতে পারি। তবে ২০১৮ সালে এসে সন্তানের মা হওয়ার খবর শুনতে পাই। এরপর খানিকটা অসুস্থ ছিলাম যার কারণে ব্যবসায়িক কাজ কিছুদিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল । প্রায় এক বছরের মত সন্তানের জন্য কাজ বন্ধ রাখতে হয়। পরে আবার কোভিড-১৯ এর ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল। তো এভাবেই মূলত ব্যবসায় বাধাগ্রস্ত হতে থাকি।কিন্তু এরপরেও কখনো হাল না ছেড়ে নিজেকে বার বার হলেও বুঝিয়ে ব্যবসার রান করে চলি। যদিও এ বছরের শুরুতে রিলঞ্চিং করেছি পেজটিকে।
উদ্যোক্তা শ্রাবণী নিজের ব্যবসা পরিকল্পনা নিয়ে বলেন,নিজস্ব কোন কারখানা নেই, তাই বাইরের কারখানায় কাজ করাই।তবে ইচ্ছা আছে নিজের ডিজাইন স্টুডিও দেওয়ার। এরপরও এই পেজটির যে পণ্যগুলো প্রদর্শন করে যাচ্ছি।যেমন শাড়ি, জামা, শাল, থ্রি পিস, তরুণীদের সুন্দর ডিজাইনের কুর্তি, কটি, শীতের সময় শীতের গায়ের চাদর, ব্লাউজ পিস ,ব্লক প্রিন্টের ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের তরুণীদের আকর্ষণীয় পণ্য ।এমন ডিজাইনেবল করে তুলি পণ্যগুলো। যাতে অন্যান্য জায়গায় পাওয়াটা খুব মুশকিল হয়ে পড়বে মনে করি ক্রেতাদের।
উদ্যোক্তা আরো বলেন, যেহেতু আমার বাংলাদেশের সব জায়গায় পণ্য যায়।কুরিয়ারের মাধ্যমে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে থাকি। তাই এখন চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা ইনকাম হয়।ডিজাইন নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসি তাই আবার নতুন করে ফ্যাশন ডিজাইনিং এ পড়াশোনা শুরু করেছি। নতুন নতুন কাপড় ডিজাইন করাটা অনেক আনন্দ দেয়। আসলে দেশীয় কাপড়ের প্রতি ভালোবাসা থেকেই অম্বরের জন্ম।
মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা ঢাকা।