“চাকরিজীবন খুব একটা দীর্ঘ ছিল না আমার। ঢাকার মিরপুরে হলিক্রিসেন্ট স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতা করেছিলাম বছর দুয়েক। চাকুরীর ধরাবাঁধা নিয়মের সাথে পেরে উঠতে না পেরে বের হয়ে আসি সেখান থেকে। একসময় মনে হলো চাকরি আমার জন্য নয়”– কথাগুলো বলছিলেন উদ্যোক্তা জেসমিন জেসি।
তার জন্ম এবং বেড়ে উঠা রংপুর শহরে৷ শৈশব কৈশোর কেটেছে সেখানেই। মাস্টার্স করেন ঢাকা বাংলা কলেজ থেকে৷ বাবা ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা৷ পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে জেসমিন ছিলেন চতুর্থ।
চাকরির কঠিন নিয়ম শৃঙ্খলে কখনও নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি জেসমিন। তাই চাকরি ছেড়ে অবসর সময়ে ইউটিউব দেখে ক্রাফটের কাজ শিখতে শুরু করেন। শিখতে শিখতে কাজ শুরু। তার তৈরি শোপিসগুলো একসময় কাছের-দূরের সকলের প্রশংসা কুড়াতে লাগলো। ইউটিউব থেকে শিখেই হয়ে গেলেন একজন দক্ষ ক্রাফটার।
২০১৬ সালে কয়েকজন উদ্যোক্তা আপুর সাথে পরিচয় হয় জেসমিনের। মূলত তাদের কাজ দেখে তখন থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন৷ যেহেতু ক্রাফটিং এর কাজটি তিনি বেশ ভালই জানতেন, তাই ক্রাফটিং নিয়েই উদ্যোগ শুরু করেন৷ উদ্যোগের নাম দিলেন ‘চারুলতা’।
গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে ভিন্ন কিছু নিয়ে কাজ করার এক দৃঢ় মনোবল নিয়ে তিনি তার ক্রাফটিং এর কাজটি শুরু করেছিলেন। এক বছর পর ক্রাফটিং এর পাশাপাশি কাঠের পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং খুব অল্প সময়ে বেশ ভাল সাড়া পান তিনি। কাঠের তৈরি শোপিস শেলফ, ডিজাইনার মিরর, মেডিসিন বক্স, টিস্যুবক্স, নেম কী রিং, ফটো কী রিং, টি ট্রে, কী রিং হোল্ডার, ফুলদানি, কিচেন শেলফ, আয়াতুল কুরসি ওয়ালমেট, কাপশেইপ ঘড়ি, ফটোওয়াচ (নিজস্ব ছবি দিয়ে ঘড়ি), ডেস্ক অর্গানাইজার ইত্যাদিসহ অর্ধশতাধিক কাঠের আইটেম নিয়ে কাজ করছেন তিনি।
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে অষ্ট্রেলিয়া, ইউকে, জার্মানি, ইতালি, সৌদি আরব, ফ্রান্স, কানাডা গিয়েছে চারুলতার পণ্য। এখন পর্যন্ত চারুলতার সবচেয়ে বেশি সেল হওয়া পণ্যটি হচ্ছে শোপিস শেলফ। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এই শেলফটির অর্ডার এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি, এমনকি দেশের বাইরেও এই শেলফটিই বেশি গিয়েছে। পাঁচশ’র বেশি সেল হয়েছে এই শেলফ। সবার চাহিদার প্রেক্ষিতে এর নাম দেওয়া হয়েছে লক্ষী শেলফ।
উদ্যোক্তা জেসমিন জেসি বলেন, “আমার উদ্যোগ নিয়ে আমার স্বপ্ন অনেক। চারুলতাকে সবাই চিনবে জানবে এটাই চাই। আল্লাহ কখনো সামর্থ্য দিলে চারুলতার শোরুম দেবো।”
তিনি বলেন: এখন উদ্যোক্তার সংখ্যা অনেক। তাই নতুন এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের টিকে থাকতে হলে কাজের প্রতি ডেডিকেশন বাড়াতে হবে। লেগে থাকতে হবে ধৈর্য সহকারে।
সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা