মানুষের মনের জগৎকে সাজিয়ে তুলতে প্রকৃতির কোনো জুড়ি নেই। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ছাড়াও মানুষের সৌন্দর্য চেতনা গঠনে বৃক্ষ, লতা, পুষ্পের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ তার পরিশ্রম মেধা কল্পনা অনুযায়ী শিল্পকলার চর্চা করে আসছে। একে কেন্দ্র করেই গাছের মূল উপাদান ধরে রেখে বনসাই নামের জীবন্ত শিল্পকর্মের সৃষ্টি।
এই শিল্পকর্মটিকে দেশে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটি। বিভিন্ন সময় সোসাইটি আয়োজিত প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে মানুষের নান্দনিক রুচিবোধ গড়ে উঠেছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটির প্রায় ৬০ জন সদস্য তাদের হরেকরকম বনসাই নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন ধানমণ্ডির ডব্লিউভিএ অডিটোরিয়ামে।
২৫ আগষ্ট বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে তাদের আয়োজন। আগামী ২৮ আগষ্ট পর্যন্ত ২২তম বার্ষিক বনসাই প্রদর্শনী চলবে। ভিন্নরকম এ বৃক্ষ মেলা মুগ্ধ করছে সবাইকে।
আয়োজনকরা বলছেন, বার্ষিক বনসাই প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের অপূর্ব, শৈল্পিক এবং চমৎকারিত্বে সমৃদ্ধ বিশেষ দিকটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা। ঘরে ঘরে বনসাই পৌঁছানোর দায়িত্ববোধ থেকে এবং বিষয়টিকে ভালবেসে প্রতিবছর এরকম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটির সদস্য সৈয়দা আমিনা হক বলেন: বনসাই একটি শিল্প। এটি একটু অন্য ধরনের জীবন্ত একটি গাছকে নিয়ে। এর মাঝে জড়িয়ে থাকে মন, চোখ, ভালোবাসা, দরদ, সময়, ভক্তি এবং শ্রদ্ধা। প্রকৃতির টানে এরা বড় হতে থাকে, থেমে থাকে না। তাই তাকে নির্দিষ্ট আকারে, অগভীর পাত্রে স্বাভাবিকভাবে রাখতে হলে প্রতিনিয়তই লক্ষ্য রাখতে হয়। একটি গাছকে কেটে ছেঁটে তার পেঁচিয়ে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় রূপ দিলেই একটি বসনাই তৈরি হয় তা নয়। এটিরও একটি নিয়ম আছে। নিয়মের মাঝে ফেলে তৈরি করতে হয় যা একটু সময় সাপেক্ষ কাজ।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বনসাই নিয়ে নাড়াচাড়া করছি। কিন্তু এখনও মনে হয় কিছুই জানি না বা শিখিনি। এখনও শিক্ষার কোন শেষ নেই। সাধারণত আমরা বাইরে মানে ছাদের খোলা জায়গায় বনসাই করি। কিন্তু বনসাই শিল্প ঘরেও করা যায়। বিদেশে ঘরে বনসাই দেখা যায়। আমাদের দেশেও সম্ভব।’
নিজের বনসাই শিল্পী হওয়া প্রসঙ্গে আমিনা হক করেন, ‘হঠাৎ একদিন মনের মাঝে নাড়া দিয়ে উঠল কেন বনসাই করি না! শুরু হলো আমার অভিযান। বিভিন্ন নার্সারি ঘোরা শুরু করলাম, কয়েকটা ঘুরে কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। তারপর শুরু করলাম আমার কাজ। বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটির এ প্রদর্শনী আমার এবং আমাদের আগ্রহ আরও বাড়িয়েছে।’
বনসাই মেলা ঘুরে দেখা গেছে বট, পাকুড়, তেঁতুল, ছাতিম, কামিনি, রঙ্গন, অশ্বথ, অর্জুন, চায়নাবট, জেডপ্লান্ট, ফাইকাস বেঞ্জামিনা, শেওড়া, তারামনি, ফুকেন টি ট্রি, বারবাডোসচেরীর মতো ভিন্ন ভিন্ন শিল্পের হরেকরকমের অসাধারণ সব বনসাই।
মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা